আসাফুর রহমান কাজল, খুলনা (মহানগর)

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

‘আপনাদের আবর্জনায় চলে আমার সংসার’

‘শহরের মানুষের আবর্জনা আমাদের কাছে আয়ের উৎস। এ আবর্জনা কুড়ায়ে আমার মতো আরও কয়েকটি পরিবার চলে। আগে ভ্যান, রিকশা চালাইছি, অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করেছি। কিন্তু এখন আর শরীর পারে না। পাঁচ ছেলেমেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তাদের আলাদা সংসার হয়েছে। আমারও আলাদা সংসার। আমার সংসার চলে আপনাদের আবর্জনায়।’ কথাগুলো বলছিলেন বটিয়াঘাটা হোগলাডাঙ্গা জয়খালির জালাল হাওলাদার।

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হোগলাডাঙ্গা এলাকায় খুলনা সিটি করপোরেশনের মানববর্জ্য শোধনাগার। এখানে তার মতো অনেকেই মানববর্জ্য ঘেটে বের করছেন প্লাস্টিক পণ্য, কাচের বোতল, মেডিকেল পণ্য। যা তারা ভাঙাড়ি হিসেবে বিক্রি করেছেন শহরের ব্যবসায়ীদের কাছে।

প্রতিনিয়ত এখানে শহরের ডাস্টবিনের আবর্জনা ফেলা হয়। আর এ আবর্জনার অপেক্ষায় ভোর থেকে অপেক্ষায় থাকে এ এলাকার জালাল, সাইফুল, রিনা, আলেয়া, নুরি, জোরিনা, মনোয়ারাসহ অনেকে। ময়লার ট্রাক ময়লা ফেলে চলে গেলে তারা গামবুট জুতা পরে আঁকড়া আর ঝুড়ি নিয়ে আবর্জনা ঘাটতে শুরু করেন। আঁকড়া দিয়ে আবর্জনা নেড়ে নেড়ে খোঁজ করে তাদের কাক্সিক্ষত মালামাল। তবে তাদের চোখ থাকে লোহা, প্লাস্টিক পণ্য, কাচের বোতল এবং মেডিকেল পণ্যের দিকে। মালামাল কুড়ানোর পর শুরু হয় ক্যাটাগরি অনুযায়ী বাছাই।

প্রতি কেজি সাদা প্লাস্টিক ৪০ টাকা, লাল প্লাস্টিক ৩০ টাকা, কাচের বোতল সাড়ে ৫ টাকা, লোহা-টিন ২০ টাকা, প্লাস্টিক বোতল ১৫ টাকা, বোতলের মুখ ২০ টাকা দরে বিক্রি করে। এ মালামাল কিনতে রয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী। তবে দাম একটু বেশি পেতে সপ্তাহ শেষে অনেকেই শহরের শেখপাড়া বাজার এলাকায় এ মালামাল বিক্রি করে থাকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ইকবাল জানান, এদের কাছ থেকে মাল কিনে শহরে বিক্রি করি। তাদেরও আয় হয় সেই সঙ্গে আমারও কিছু লাভ হয়। স্থানীয় কিছু নারী-পুরুষ আবর্জনা ঘেটে ভাঙাড়ি কুড়ান। পরে বাছাই করে বিক্রি করেন।

বটিয়াঘাটা জয়খালী এলাকার জালাল হাওলাদার জানান, প্রতি সপ্তাহে আর্বজনা ঘেটে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা আয় হয়। আর তাতেই চলে আমাদের সংসার। ভাগ্য ভালো হলে কখনো কখনো এ আবর্জনার মধ্যে মূল্যবান স্বর্ণও মিলে যায়। আবর্জনার মধ্যে অনেকে সুই, ব্লেড ফেলে। মাঝে মাঝে তা হাতে ফোটে। তখন খারাপ লাগে। সবার কাছে নোংরা হলেও আমাদের কাছে এ ময়লার স্তূপ একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ ময়লার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে এ এলাকার ৮ থেকে ১০টা পরিবার।

জলমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশিকুজ্জামান আশিক প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ‘মানুষের কাছে হাত না পেতে তারা আমাদের উচ্ছ্বিষ্ট সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা চাইলেই মানুষের কাছে হাত পাততে পারতো, কিন্তু তারা তা করেননি। তাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close