মো. শাহ আলম, খুলনা

  ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯

ভয়াবহ এইডসের ঝুঁকিতে খুলনা বিভাগ

সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় খুলনা বিভাগে এইচআইভি/এইডসের ভয়াবহতা ঝুঁকিতে রয়েছে যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ পরিবেশের মধ্যে রয়েছে খুলনা, যশোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট। ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১২ জেলায় এইচআইভি পজিটিভ/এইডস রোগ পাওয়া গেছে ১৯৭ জনের মধ্যে। এদের মধ্যে পুরুষ রয়েছেন ১০৬ জন। এছাড়া ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন করে আরো ১০ জনের মধ্যে এইচআইভি পজেটিভ শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগে গত এক বছরে শিশুসহ শনাক্ত করা হয় ৩৬ জনকে।

সমুদ্র ও স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশকারীদের রক্ত পরীক্ষা না করা, নিষিদ্ধ পল্লি ও ভাসমান যৌনকর্মীদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকা, কনডম ব্যবহারে অনীহার কারণে এ পরিস্থিতি জটিল রূপ নিচ্ছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসাপাতালে স্টেনদেনিং অব এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আওতাধীন এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফের কারিগর ও আর্থিক সহযোগিতায় প্রিভেন্টিং অব মাদার টু চাইল্ড অব এইচআইভি (পিএমটিসি) শীর্ষক সেবাটি দেওয়া হচ্ছে।

খুমেক হাসপাতালে ওই প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোল্লা মো. নুরুল আসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, তাদের এ সেবার আওতায় খুমেক হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এইচআইভি/এইডস শনাক্ত করা হচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে তিনজন করে এইডস রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৬ হাজার ২৬৯ জন গর্ভবতী মায়েদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে দুজন গর্ভবর্তী মা ও একজন শিশুর রক্তে এ রোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে খুমেক হাসপাতালে এআরটি সেন্টার থেকে ১ হাজার ৬১ ব্যক্তিকে রক্ত পরীক্ষা করে ৩৯ জনে শরীরে এইচআইভি শনাক্ত করা হয়। যার মধ্যে শিশু রয়েছে ছয়জন। এ সময়ে শিশুসহ মারা যায় সাতজন।

তার দেওয়া তথ্য মতে, খুলনাসহ ১২ জেলায় ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১৯৪ জন এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খুলনায় ৬৫ জন, যশোরে ৫১, সাতক্ষীরায় ২৬, নড়াইলে ২৬, বাগেরহাটে ৯, গোপালগঞ্জে চার, পিরোজপুরে তিন, ঝিানইদহে পাঁচ, ফরিদপুরে তিন এবং বরগুনা ও চুয়াডাঙ্গায় রয়েছে একজন রয়েছেন। এছাড়া ২০১৮ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন করে আরো ১০ জনকে এইচআইভি/এইডস শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে যশোর একজন, খুলনায় দুই, নড়াইলে ৩০, বাগেরহাটে দুই ও সাতক্ষীরায় দুজন বাসিন্দা রয়েছেন। এর মধ্যে গর্ভবতী এক মায়ের মৃত্যু হয়। এ তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, খুলনা বিভাগে এইডসের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

খুলনায় মুক্তি সেবা সংস্থার (কেএমএসএস) আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় উল্লেখ করা হয়, সমুদ্র ও স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশকারীদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না করা, নিষিদ্ধ পল্লি ও ভাসমান যৌনকর্মীদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় এবং ট্রাকচালকদের অবাধে নিষিদ্ধ পল্লিতে যাতায়াত, পুরুষ সমকামী (এমএসএম) বৃদ্ধি, কনডম ব্যবহারে অনীহার কারণে এ অঞ্চলে এইডসের ভয়াবহতা বেড়ে যাচ্ছে।

ওই সভায় সিভিল সার্জন এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিভিন্ন রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাসমান যৌনকর্মী, নিষিদ্ধ পল্লি এলাকার যৌনকর্মী, মাদকসেবী, হিজরা ও সমকামীদের কারণে খুলনা অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রকল্পের পরিচালক ডা. এ টি এম এম মোর্শেদ বলেন, সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এইচআইভি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে এইচআইভিতে আক্রান্ত মানুষকে সহজেই শনাক্ত করা যায়।

খুমেক হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান ডা. সামছুর নাহার লাকী বলেন, প্রত্যেক গর্ভবতী ও গর্ভোত্তর মাকে এইচআইভি পরীক্ষার আওতায় আনা জরুরি। তিনি সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানেও কম খরচে এইডস পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে খুলনা জেলায় নারী-পুরুষ ও শিশু মিলে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২৩২ জন। এ সময়ে মধ্যে মারা গেছে ৫১ জন। এছাড়া জীবিত ছিল ১৮২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৮০ জন, নারী ৬৮, হিজড়া তিন ও শিশু ৩০ জন ছিল। এর মধ্যে শিশু মেয়ে ১১ জন ও শিশু পুরুষ ছিল ১৯ জন। ২০১৭ সালে ১৬ মে পর্যন্ত নুতন করে ১৭ জন এইডস রোগী শনাক্ত করা হয়েছিল। যার মধ্যে পুরুষ ছয়, নারী ছয়, শিশু তিন ও হিজড়া ছিল দুজন। এ সময়ে মারা যায় তিনজন। মারা যাওয়ার মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন মহিলা রয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close