নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮

ধুলায় আচ্ছন্ন রাজধানী উদ্যোগহীন দুই সিটি

বাড়ছে রোগবালাই ও খরচ নগরবাসীর

রাজধানীতে বর্ষার মৌসুমে থাকে জলাবদ্ধতা, এর সঙ্গে নর্দমার দূষিত পানি মিশে সড়ক থাকে পানির নিচে। আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালির রাজত্ব। এর সঙ্গে খোঁড়াখুঁড়ি উভয় ক্ষেত্রেই যোগ করে দুর্ভোগের আরেক মাত্রা। এবার শুষ্ক মৌসুম শুরু হতে না হতেই ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে রাজধানী। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগবালাই। কিন্তু এসব নিরসনের জন্য দুই সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এসব মৌসুমি ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর।

রাজধানীতে দুই সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। কোথাও সড়ক সংস্কার, কোথাও নর্দমা পুনর্নির্মাণ, কোথাও সেবা সংস্থার ভূগর্ভস্থ লাইন স্থানান্তর এবং কোথাও চলছে অবকাঠামোর নির্মাণকাজ। সব কাজের জন্যই সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এতে সড়কগুলো হয়ে উঠেছে ধূলিময়। দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা।

এদিকে ধুলা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন পানি ছিটানোর কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। বৃক্ষহীন রাজধানীতে যে কয়টি গাছপালা রয়েছে, তার সবুজ পাতার ওপর জমেছে ধুলার পুরু আস্তরণ। কিন্তু সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের দাবি, প্রতিদিন সকালে নগরীর বিভিন্ন সড়কে পানি ছিটানো হচ্ছে।

ঢাকা সিটি (উত্তর) জানিয়েছে, বিজয়সরণি থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত পানি ছিটানো হচ্ছে, তবে অন্য কোথাও নয়। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির দাবি, প্রতিদিন সকালে বাংলামোটর, মগবাজার, ধানমন্ডি ৩২, মধুমিতা সিনেমা হল, খিলগাঁও, নীলক্ষেত, গুলিস্তান বঙ্গভবন এলাকায় পানি ছিটানোর কার্যক্রম চলছে।

জানা গেছে, ডিএনসিসিতে ২৭০ কিলোমিটার সড়ক, ২০৩ কিলোমিটার ফুটপাত, ২৪৬ কিলোমিটার নর্দমা উন্নয়নের কাজ চলছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৫০ কিলোমিটার সড়ক, ৫৪ কিলোমিটার নর্দমা ও ১৪ কিলোমিটার ফুটপাত উন্নয়ন কাজ চলছে। এজন্য রাস্তা ও নর্দমা খোঁড়া হচ্ছে। এতে ধুলোয় একাকার হয়ে পড়েছে এলাকাগুলো। হাতিরপুল এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা কামাল বলেন, এই এলাকায় কখনো পানি ছিটাতে দেখিনি। এতে বাসা-বাড়িতেও ধুলোবালির হানা। প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে পরনের কাপড় ধুতে হয়।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসিরি মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) লে. কর্নেল এম এম সাবের সুলতান বলেন, এবার ধুলাবালি কম। এজন্য কোথাও পানি ছিটানো হচ্ছে না। এ ছাড়া গাড়িরও স্বল্পতা রয়েছে। আঞ্চলিক অফিস থেকে ফোন করলে গাড়ি পাঠিয়ে দেই। এ ছাড়া আমাদের তেমন কার্যক্রম নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাতাসে ধুলার দূষণ অতীতের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। পথচারীদের দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের ক্যানসার, শ্বাসকষ্টসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিশুরা রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে।

পরিবেশ অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বছরের অন্য সময়ের (এপ্রিল-অক্টোবর) চেয়ে শীতে (নভেম্বর-মার্চ) বায়ুদূষণের মাত্রা প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে যায়। এ সময়ে বাতাসে সবচেয়ে ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা বা পিএম ২.৫ মাত্রায় থাকে, যা অস্বাভাবিক। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) এক গবেষণায় দূষিত বাতাসে ৯৭০টি সিনথেটিক কেমিক্যাল নিরূপণ করা সম্ভব হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ৪৬৪টির কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। এগুলো বেশির ভাগই পানির সঙ্গে মেশে না। এগুলো ধুলার সঙ্গে বাতাসে উড়তে থাকে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে গিয়ে ধীরে ধীরে ফুসফুসে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। ধুলাযুক্ত বাতাস গ্রহণের ফলে প্রাথমিকভাবে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এর ক্ষতি হবে অনেক বেশি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, পল্টন, খিলগাঁও, বাসাবো, বাড্ডা, বনশ্রী, রামপুরা, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, তেজগাঁও, মহাখালী, মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ নগরীর প্রায় এলাকায় ধুলায় আচ্ছাদিত। পাঁচ-ছয় তলার ওপরে ঘরের আসবাবপত্রের ওপর ধুলার পুরু আস্তরণ পড়ছে।

ধুলা দূষণে রাজধানী ঢাকায় অস্বাভাবিকভাবে রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে, এমন অভিযোগে কিছুদিন আগে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টর (বিসিএইচআরডি) যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তারা বলেন, প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে ধুলা দূষণের কারণে প্রতি মাসে অতিরিক্ত চার থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের ২০১৪ সালের এক জরিপে বলা হয়েছে, ধুলোর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে নিম্নবৃত্ত থেকে উচ্চবৃত্ত পরিবারের খরচ পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ধুলোর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে কাপড় পরিষ্কার, ঘর ধোয়ামোছা, বাড়ির টপের গাছ পরিষ্কার এবং রোগব্যাধির খরচ মিলিয়ে জরিপে এমন চিত্র মিলেছে।

ধুলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন সকালে নিয়মিত পানি ছিটানো হচ্ছে। এর আধা ঘণ্টা পর পানি শুকিয়ে যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist