ক্রীড়া প্রতিবেদক
‘আমার বিশ্বাস ছিল’
সহজ জয়ের দিকেই এগুচ্ছিল খুলনা টাইটান্স। কিন্তু ৪৩ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন উল্টো পরাজয়ের ক্ষণ গুনছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। সেখান থেকে কী দারুণভাবেই না খুলনাকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন আরিফুল হক। তার দুর্দান্ত ব্যাটিং দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটের নাটকীয় জয় তুলে নিয়েছে খুলনা টাইটান্স। ম্যাচপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আরিফুল জানালেন, বিশ্বাস ছিল বলেই জয়ের বন্দরে নোঙর পেলতে পেরেছেন তারা।
শেষ ১৮ বলে ৩৬ রান দরকার ছিল খুলনা টাইটান্সের। ১৭তম ওভারেই ম্যাচের রং পাল্টে দেন আরিফুল। হোসেন আলিকে পিটিয়ে তুলোধুনো করে সেই ওভারে ১৮ রান তুলে নেন তিনি। ম্যাচটা প্রায় নির্ধারণ হয়ে গেছে ওই ওভারেই। বিশ্বাস এবং ফর্ম দুটোই হোসেনের বিপক্ষে কাজে লাগালেন আরিফুল। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল যে, শেষ পর্যন্ত টানতে পারলে আমরা ম্যাচটা জিতব। ফিল্ডাররা যখন অনেক বাইরে থাকে হিট মিস হলেও ২ রান নেওয়ার সুযোগ থাকে। সেটাই আমার লক্ষ্য ছিল। হয় ছক্কা মারব অথবা দুই রান নেব।’
অবশ্য বোলার হোসেনকে আগেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিলেন আরিফুল, ‘হোসেন আলির ওভারটিই টার্গেট করেছিলাম। কারণ এরপর বিদেশি বোলাররা আসবে। হোসেন চেষ্টা করছিল ব্লকে বল করার। আমার লক্ষ্য ছিল মারব। হয়তো বড় শট খেলব, নয়তো দুই নেব। এটায় সফল হয়ে গেছি।’
ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরি আরিফুলের। ২০১৫ সালের মার্চে জাতীয় লিগে ৫৪ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন ২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। ঢাকা মহানগরের বিপক্ষে রংপুরের জার্সিতে ৬টি চার ও ১২টি ছক্কায় টর্নেডো ইনিংসটি খেলেছিলেন তিনি। শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটেই নয়, বিপিএলেও তরবারি হয়ে উঠেছে আরিফুলের ব্যাট। আগের তিন ম্যাচের দুটিতে ৩৪ ও ৪০ রানের ঝড় তুলেছিলেন তিনি। কাল তো ১৯ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে পাশার দানই উল্টে দিয়েছেন।
ধারাবাহিক এই ব্যাটিং দৃঢ়তার নেপথ্য কারণ কী? সাফল্যের রহস্যইবা কী? দুটো প্রশ্নের উত্তরেই খুলনা টাইটান্স কোচ মাহেলা জয়াবর্ধনের নাম জড়িয়ে। লঙ্কান কিংবদন্তির পরামর্শেই নিজেকে আরো পরিণত করে তুলেছেন আরিফুল। রাজশাহীর বিপক্ষে নাটকীয় জয়ের নায়ক ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আগে হয়তো আমার ব্যালেন্সে সমস্যা ছিল। এবার মাহেলা আমার এই দুর্বলতা নিয়ে কাজ করেছেন। আমার ‘বডি ওয়েট’ পেছনে যেত মারার সময়। সেটা তিনি ঠিক করে দিয়েছেন এবং তাতে উপকার হয়েছে।’
কোচ ব্যাটিংয়ে দিয়েছেন পরামর্শ। আর ম্যাচ জয়ের জন্য আরিফুলকে বিশ্বাস জুগিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। আরিফুলের কণ্ঠে তাই কৃতজ্ঞতাবোধ, ‘রিয়াদ ভাই অনেক সমর্থন দিচ্ছেন। বলেছেন যে শেষ মৌসুমে অনেক ম্যাচে শেষ করে এসেছিস। অপরাজিত ছিলি বেশি, এবারও চিন্তা করবি অপরাজিত থাকার। অধিনায়কের কথা আমাকে সাহায্য করছে।’
বিপিএলের পঞ্চম আসর শুরুর আগে জাতীয় লিগে ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়িয়েছেন আরিফুল। সংস্করণ ভিন্ন হলেও রান পাওয়াটা কঠিন কিছু নয় তার কাছে। আত্মবিশ্বাসই এখানে মূল জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। আরিফুল বলেছেন, ‘জাতীয় লিগ আর এটা আলাদা খেলা। কিন্তু আসলে পার্থক্য তেমন কিছু নয়। রান টানা করতে থাকলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।’
"