গাজী মো. রাসেল
ডাগআউটে আর্জেন্টিনার দাপট
‘আপনি যদি ফুটবল বুঝতে চান, তবে আপনাকে আর্জেন্টিনা ভ্রমণ করতে হবে।’ কথাটি সাধারণ কারো নয়। বর্তমান ফুটবল বিশ্বের অন্যতম কোচ পেপ গার্দিওলার মতো এটি। যিনি বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ ও ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাবের দায়িত্ব নিয়ে ফুটবলে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। লোকজন আর্জেন্টিনাকে চিনে দুই ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও লিওনেল মেসির দেশ হিসেবে। কিন্তু আর্জেন্টিনা কেবল ফুটবলারদের মাতৃভূমি নয়, কিংবদন্তি কোচদের দেশও। যেখানে জন্মগ্রহণ করেছেন সিজার লুইস মেনোত্তি, মার্সেলো বিয়েলসার মতো বিশ্বসেরা কোচ। সাফল্য এনে দিতে পারেন বলে বিশ্বের সর্বত্র চাহিদা আছে আর্জেন্টাইন কোচদের। কথাটির সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে এবারের বিশ্বকাপেও। রাশিয়া বিশ্বকাপে ভিন্ন দেশের হয়ে পাঁচজন আর্জেন্টাইন কোচকে দেখা যাবে ডাগআউটে। কীর্তিগাথাটি আর কোনো দেশের নেই। পাঠকের সামনে সেই পাঁচ কোচের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেওয়া হলো।
জর্জ সাম্পাওলি (আর্জেন্টিনা) : সাম্পাওলি পরিচিত স্বদেশি কোচ মার্সেলো বিয়েলসার ভাবশিষ্য হিসেবে। তবে বিয়েলসার মতো ক্ষ্যাপাটে নন তিনি। ডাগআউটে তাকে বেশ শান্তশিষ্ট হয়ে থাকতে দেখা যায়। তার অধীনে চিলি ২০১৫ সালে কোপা আমেরিকা জিতেছিল। ক্লাব ক্যারিয়ারে সেভিয়ার দায়িত্বও পালন করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। তবে আর্জেন্টিনার হয়ে এখনো বড় কোনো সাফল্যের দেখা পাননি তিনি। তা হবেই বা কী করে! কারণ আলবিসেলেস্তেদের দায়িত্বটা নিতে হয় বাছাই পর্বের চার ম্যাচ বাকি থাকতে।
হোসে পেকারম্যান (কলম্বিয়া) : যুব ফুটবলের কিংবদিন্ততুল্য কোচ। যিনি যুব-২০ ফুটবলে আর্জেন্টিনাক জিতিয়েছেন তিনটি শিরোপা। অথচ বিশ্বকাপে তার দৌড়টা দুবার থামাতে হয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে। প্রথমবার আর্জেন্টিনার হয়ে। দ্বিতীয়টি গত আসরে। কলম্বিয়াকে স্বপ্ন দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত পারেননি। এবারও কলম্বিয়ানদের স্বপ্নসারথি তিনি।
রিকার্ডো গারেকা (পেরু) : খেলোয়াড়ি জীবনে ফরওয়ার্ড ছিলেন বোকা জুনিয়র্স ও রিভারপ্লেটের। বুট জোড়া তুলে রাখার পর ২০১৫ সালে দায়িত্ব নিয়েছিলেন পেরুর জাতীয় দলের। ৫৯ বছর বয়সী এই কোচের বড় শক্তি হচ্ছে খেলোয়াড়দের ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনতে পারা। তা ছাড়া নিয়মশৃঙ্খলার ব্যাপারেও বেশ কঠোর তিনি। তার হাত ধরেই পেরু তিন যুগ পর বিশ্বকাপ খেলবে রাশিয়ায়।
হেক্টর কুপার (মিসর) : ২৮ বছর পর মোহাম্মদ সালাহর নৈপুণ্যে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে মিসর। কিন্তু দলকে উজ্জীবিত করার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটা রেখেছে আর্জেন্টাইন কোচ কুপার। মিসরের ফুটবলে যখন টালমাতাল অবস্থা, তখন ২০১৫ সালের মার্চে দলের দায়িত্ব নেন তিনি। তারপর থেকে দুর্দমনীয় হয়ে উঠে দলটি। এই ৬২ বছর বয়সী কোচের অধীনে মিসরের ফারাওরা গত বছর আফ্রিকান নেশনস কাপের ফাইনাল খেলেছে। ক্লাব ক্যারিয়ারেও উজ্জ্বল ছিলেন কুপার। ২০০০ ও ২০০১ সালে টানা দুবার ভ্যালেন্সিয়াকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তুলেছেন তিনি। বড় মঞ্চে কীভাবে সাফল্য পেতে হয়, তা ভালো করেই জানেন কুপার।
হুয়ান আন্তনিও পিজ্জি (সৌদি আরব) : পিজ্জির আগে আরেক আর্জেন্টাইন কোচ এদগার্দো বাউজার দায়িত্ব সামলেছেন সৌদি আরবের। এরপর ডাচ কোচ বাট ফন মারউইক সোদির দায়িত্ব ছাড়ার পর অ্যারাবিয়ানরা নিয়ে আসে পিজ্জিকে। সৌদি ফুটবল ফেডারেশনের আস্থার প্রতিদানটাও ভালোভাবে দিয়েছেন তিনি। এশিয়ার বাছাই পর্বে বাধা পার করে দলকে তুলেছেন বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে। সোদিতে আসার আগে পিজ্জি ২০১৬ সালে মেসির আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চিলিকে এনে দিয়েছিলেন কোপা আমেরিকার শিরোপা। ক্লাব ক্যারিয়ারে তিনি দায়িত্ব সামলেছেন লিঁও ও ভ্যালেন্সিয়ার মতো দলের। আর সৌদিদের সামলাচ্ছেন ছয় মাস ধরে।
"