বিশেষ প্রতিনিধি
শোকাবহ আগস্ট
তাকে কেন্দ্র করেই তো একদিন ভূখন্ডে এই অংশে উšে§ষ ঘটে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার। ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান, সেখান থেকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। দীর্ঘ পথপরিক্রমায়, তিনিই তো ছিলেন বাঙালির স্বপ্ন ও বাস্তবতার সার্থক রূপকার। বারবার সামনে এসেছে মসনদ, ক্ষমতা, অর্থবিত্তের হাতছানি। পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছে মোহ ও লোভের জাল। নানা ষড়যন্ত্রে, কূটচালে, চেষ্টা চলেছে সরিয়ে নিতে পথ থেকে, আন্দোলন থেকে। কিন্তু হয়নি। শেষাবধি তাই, একদল ঘৃণ্য পশু, এক কালরাতে রক্তে ভাসান তাকে, স্ত্রী, সন্তান, স্বজনদের। তারপর মাস যায়, বছর যায়। তারই রক্তে ধোয়া বাংলায় আবারও জাগে যুঁথবদ্ধ মানুষ। শ্রদ্ধায়-স্মরণে গেয়ে ওঠে সম্মিলিত কণ্ঠ-‘শোনো, একটি মুজিবরের কণ্ঠ থেকে, লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি, আকাশে বাতাসে ওঠে রণি, বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ’।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। তার অমোঘ গর্জনে, নেতৃত্বে, দর্শনে-কোটি কোটি বাঙালিই একদিন নেমেছিল পথে, আন্দোলনে, দেশ গড়ার ব্রতে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর, বাঙালির অধিকার আদায়ের সব সংগ্রামেই তিনি ছিলেন প্রথম সারিতে, অনন্য ভূমিকায়। তার ডাকেই সূচিত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং ’৭১-এর মুক্তির সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা।
মানুষ ও সংগঠনের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা কৈশোর থেকেই। চোখের অসুখের জন্য টানা দুই বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৩৭ সালে আবারও পড়ালেখা শুরু হয় তার। ভর্তি হলেন গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে। গোপালগঞ্জে ফিরে এলেন বাবাও। বাসায় পড়ানোর জন্য রাখা হলো কাজী আবদুল হামিদ নামে এক এমএসসি মাস্টারকে। তার জন্য একটি আলাদা ঘরও হলো। একদিন সেই গোপালগঞ্জেই একটি ‘মুসলিম সেবা সমিতি’ করলেন মাস্টার মশাই। কাজ ছিল মুসলমানদের বাড়ি থেকে মুষ্টি ভিক্ষার চাল উঠিয়ে তা দিয়ে গরিব ছেলেদের সাহায্য করা। ব্যস, মাস্টার সাহেবের সঙ্গে লেগে গেলেন স্কুলপড়–য়া বঙ্গবন্ধু। সমিতির অন্যদের সঙ্গে মিলে প্রতি রোববার থলি নিয়ে নেমে পড়তেন পথে। বাড়ি বাড়ি থেকে চাল তুলতেন। সেই চাল বিক্রি করে গরিব ছেলেদের বই কেনার এবং পরীক্ষার ও অন্যান্য খরচ দিতেন মাস্টার সাহেব। ঘুরে ঘুরে জায়গিরও ঠিক করে দিতেন। মাস্টার সাহেবের সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে থাকেন মুগ্ধ বঙ্গবন্ধুও।
একদিন যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান মাস্টার সাহেব। সেবা সমিতির ভার নেন সপ্তম শ্রেণির বঙ্গবন্ধু। পরিচালনা করেন অনেক দিন। সেই একইভাবে মুষ্টি চাল তুলতেন, বিক্রি করতেন, টাকা-পয়সা জমা রাখতেন আরেক মুসলমান মাস্টার সাহেবের কাছে। তিনি সভাপতি, বঙ্গবন্ধু সম্পাদক। যদি কোনো মুসলমান চাল না দিত, তার ওপর জোর করত বঙ্গবন্ধুর দল। দরকার হলে তার বাড়িতে ইটও মারা হতো। বিচার আসত। শাস্তিও পেতেন বাবার কাছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে কাজে বাধা দিতেন না কোনো দিনই।
"