নিজস্ব প্রতিবেদক
অনলাইন সংবাদমাধ্যম নীতিমালা
সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে সম্প্রচার কমিশন
নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে এবং বেতার-টেলিভিশনের মতো সম্প্রচার কমিশনের অধীনে এনে অনলাইন সংবাদমাধ্যম নীতিমালা অনুমোদন করেছে সরকার। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা- ২০১৭’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম পরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণমাধ্যম নীতিমালার আলোকেই অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা করা হয়েছে। অনলাইন মিডিয়াটা যেন সুনিয়ন্ত্রিতভাবে কাজ করে- নীতিমালায় সেই গাইডলাইন দেওয়া হচ্ছে, উদ্দেশ্যও বলা আছে।’ তিনি জানান, অনলাইন সংবাদমাধ্যম পরিচালনার জন্য সম্প্রচার কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। এই কমিশন গঠিত হবে জাতীয় সম্প্রচার আইনের অধীনে, যা প্রণয়নের কাজ চলছে।
জাতীয় সম্প্রচার কমিশন অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জন্য ‘গাইডলাইন’ তৈরি করবে। বিজ্ঞাপনের হার ও ফি সে অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। আর কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় অনলাইন সংবাদমাধ্যমের দেখভাল করবে জানিয়ে শফিউল বলেন, ‘সম্প্রচার আইন পাস হলে কমিশন চলে আসবে। এই কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে।’
মুদ্রিত পত্রিকা বা টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণ চালাতে নতুন করে নিবন্ধন নিতে হবে না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৯৩ সালের প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস অ্যাক্ট অনুযায়ী, যারা নিবন্ধন নিয়েছে, তাদের নতুন করে আর নিবন্ধন নিতে হবে না। তবে পত্রিকা ও টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণ চালাতে হলে কমিশনকে তা অবহিত করতে হবে।
নীতিমালার মূল বিষয়গুলো হচ্ছে- ১. অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের জন্য কমিশনে নির্ধারিত ফি দিতে হবে। ২. কোনো বিষয়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে কমিশনের কাছে অভিযোগ করা যাবে, কমিশন ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করবে। ৩. অনলাইন গণমাধ্যমের কোনো তথ্য-উপাত্তের কারণে কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের অধিকার ক্ষুণ্ন হলে কমিশন শুনানি করে নির্দেশনা জারি বা জরিমানা আরোপ করতে পারবে। জরিমানা কত হবে তা সম্প্রচার আইনে বলা থাকবে। এবং ৪. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুভূতি, সংবাদ ও তথ্যমূলক অনুষ্ঠান, উন্নয়ন ও বিনোদনমূলক কর্মকা-, ক্রীড়া ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বক্তব্য, পণ্য, পণ্যের মান ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, শিশু ও নারীর অধিকার বিষয়ে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার বিধান এখানেও প্রযোজ্য হবে।
অনলাইন গণমাধ্যমের সংজ্ঞার বিষয়ে জানাতে চাইলে শফিউল বলেন, বাংলাদেশের ভূ-খ- থেকে বাংলা, ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে রেডিও, টেলিভিশন বা সংবাদপত্রে প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি লেখা ও মাল্টিমিডিয়ার অন্য কোনো রূপে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারকারী বাংলাদেশি নাগরিক বা বাংলাদেশি নিবন্ধিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে ‘অনলাইন গণমাধ্যম’ বোঝাবে। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞাপনের বিষয়ে কমিশন কোড অব গাইডলাইনস তৈরি করবে। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটা কর হবে।’
সম্প্রচার আইন না হওয়ায় সম্প্রচার কমিশনের কাঠামোর বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, যেসব অনলাইন চলছে সেগুলো যদি প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস অ্যাক্ট অনুযায়ী, নিবন্ধন নিয়ে থাকে তা বহাল থাকবে। যারা এই নিবন্ধন নেয়নি তাদের নতুন করে নিবন্ধন নিতে হবে। কোনো অনলাইন গণমাধ্যম রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করলে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এমন প্রশ্নে শফিউল বলেন, অনলাইন নীতিমালায় এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা নেই। এ-সংক্রন্ত অন্যান্য আইন এখানে প্রযোজ্য হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এ পর্যন্ত ১৮০০ অনলাইন পত্রিকা নিবন্ধনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে।
"