সংসদ প্রতিবেদক

  ১৫ জুন, ২০১৭

সঞ্চয়পত্র-আবগারি শুল্ক নিয়ে সংসদে উত্তাপ

প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানো ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর প্রস্তাবে এবার আপত্তি তুলেছেন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমালোচনাও করেছেন। তারা এসব প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রাখার পরামর্শ দেন।

গত ১ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে বছরের যেকোনো সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি লেনদেনে আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হয়েছে। তবে শুল্কমুক্তসীমা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হয়েছে। বাজেটের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, আগামী অর্থবছর থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত শুল্ক কাটা হবে না। তবে এক লাখ টাকার বেশি থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিদ্যমান ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা, ১০ লাখ টাকার বেশি থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে দুই হাজার ৫০০ টাকা, এক কোটি টাকার ওপর থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত সাত হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১২ হাজার টাকা এবং পাঁচ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে বিদ্যমান ১৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কত হবে, সেটি নির্দিষ্ট না করলেও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ব্যাংক ঋণের সুদের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার হবে দুই শতাংশ বেশি। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ও সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার ১১ থেকে ১২ শতাংশের মতো। পরে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে আগামী দুই মাসের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হবে বলে ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

গতকাল সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর আগে রাজনৈতিকভাবে এটা বিবেচনা করতে হবে। সব দিকে সুদের হার কমানোর আগে বিকল্প বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা উচিত। মনে রাখতে হবে, ২০১৮ সালে তারা হবে আমাদের সম্মানিত ভোটার। নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের ‘শেষ কার্যকর বাজেটে’ সংসদের প্রতি আসনের জন্য ৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প রাখার আহ্বানও জানান সংসদ সদস্য তানভীর।

ক্ষমতাসীন দলের আরেক সদস্য হাবিবে মিল্লাত বলেন, অল্প আয়ের মানুষের কথা চিন্তা না করে বেশি আয়ের মানুষের কাছ থেকে কর নেওয়ার বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। শুধু খামোশ বা রাবিশ বলে দায় এড়ানো যাবে না। অর্থমন্ত্রী আর মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আছে, সবাইকে বোঝাতে হবে, কর আরোপের ফলে কার ক্ষতি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সামনে নির্বাচন। এখন অনেকে বিদেশ থেকে টাকা এনে চরিত্র হননের কাজ করছে। গণমাধ্যমে রিপোর্ট আসছে। এগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন। ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়ন আরো কঠিন। এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা নেই। কী করে এত অর্থ আদায় করবে? অর্থমন্ত্রী সব মানুষের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি দেখানো হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এই সংসদ সদস্য বলেন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ খুশি নয় বলে পত্রিকায় খবর এসেছে। ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্কের কারণে ভালো দিক চাপা পড়ে গেছে।

জাতীয় পার্টির ইয়াহিয়া চৌধুরী ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক আরোপের সমালোচনা করে একে ‘পাপকর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, সমাজের জন্য ক্ষতিকারক জিনিসের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়। আমার প্রশ্ন হলো-আমার বৈধভাবে অর্জিত টাকা কীভাবে পাপকরের আওতায় আনা হলো? তিনি আরো বলেন, এক লাখ টাকার মালিকদের সম্পদশালী বলে অর্থমন্ত্রী ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছেন। মানুষকে উপহাস করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist