ময়মনসিংহ (মহানগর) ও মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

  ০৭ আগস্ট, ২০২০

হাওরে নৌকাডুবি

একসঙ্গে এত মানুষের জানাজার কথা কল্পনাও করেননি কেউ

নেত্রকোনার মদন উপজেলার উচিতপুর হাওরে ভ্রমণে গিয়ে নৌকাডুবিতে নিহত মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৭ জনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহ সদরের সিরতা ইউনিয়নের কোনাপাড়ায় ১২ জনকে, চরগোবিন্দপুরে একজন, চরখরিচায় দুজন এবং গৌরীপুর উপজেলায় ধোপাজাঙ্গালিয়া গ্রামে আরো দুজনের লাশের দাফন সম্পন্ন হয়। অপরদিকে, নৌকাডুবিতে নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং গতকাল আরেক লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জানাজার সময় হাজারো মানুষের শোকে আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। একসঙ্গে এত মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না কেউ। স্থানীয়রা বলেন, একসঙ্গে এত মানুষের জানাজা পড়তে হবে, কেউ কল্পনাও করিনি।

কোনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোকছেদ মিয়া বলেন, সবাই এক সঙ্গে হাওরে গিয়েছিল আনন্দ করতে। আনন্দ পরিণত হলো বিষাদে। প্রিয় মানুষগুলো এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে কখনো ভাবিনি। একসঙ্গে এত লাশ এর আগে দেখেনি এ গ্রামবাসী।

আবদুল বাছির নামে আরেকজন বলেন, ‘মাদ্রাসায়ে মারকাজুস সুন্নাহ’র মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুর রহমানের মৃত্যুতে আলেম সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।’ নৌকাডুবির খবর শোনার পর পরই গত বুধবার বিকেল থেকেই খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে সবাই শুধু কান্নাকাটি করছেন। তাদের সান্ত¦না দেওয়ার মতো কেউ নেই। এর আগে বুধবার ময়মনসিংহ সদরের সিরতা ইউনিয়নের ‘মাদ্রাসায়ে মারকাজুস সুন্নাহ’র মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে নেত্রকোনার মদন উপজেলার ‘মিনি কক্সবাজার’খ্যাত উচিতপুর হাওরে ঘুরতে যায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ ৪৮ জনের একটি দল। দুপুরে উচিতপুর পৌঁছে হাওরে ভ্রমণের জন্য নৌঘাট ছেড়ে যাওয়ার কিছু পরই হাওরে ডুবে যায় তাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি। খবর পেয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। একে একে উদ্ধার হয় ১৭টি লাশ। তাদের মধ্যে হাফেজ মাওলানা মাহফুজুর রহমান, তার দুই ছেলে, দুই ভাতিজা-ভাতিজি ও ভাগ্নেসহ একই পরিবারের আটজনের প্রাণ গেছে।

নিহতরা হলেন ‘মাদ্রাসায়ে মারকাজুস সুন্নাহ’র মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মাহফুজুর রহমান (৪৫), তার দুই ছেলে হাফেজ মাহবুবুর রহমান আসিফ (১৫) ও মাহমুদুর রহমান (১২), ভাগ্নে রেজাউল করিম (১৫), ভাতিজা জোবায়ের (২০) ও জোনায়েদ (১৭), ভাতিজি লুবনা (১৩) ও জুলফা (৭), চরখরিচা গ্রামের কৃষক ইসা মিয়া (৪০) ও তার ছেলে শামীম (১০), কোনাপাড়া গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক আজাহারুল ইসলাম (৩৮), হামিদুল (৩৫), সাইফুল ইসলাম রতন (৩০) ও জহিরুল ইসলাম (৩৫), চরগোবিন্দপুরের তালেব মেম্বারের ছেলে শহিদুল (৪০) এবং গৌরীপুর উপজেলার ধোপাজাঙ্গালিয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে শফিকুর রহমান (৪০) ও তার ছেলে সামাআন (১০)।

এদিকে, নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ থাকা রাকিবুল ইসলামের (২২) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই হাওরের রাজালীকান্দা এলাকায় রাকিবুলের লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মদন থানা পুলিশ। রাকিবুল ময়মনসিংহ সদরের সিরতা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে এবং নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতী মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষক। এ নিয়ে এ ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ জন।

আরেক লাশ উদ্ধার, মৃতের সংখ্যা ১৮, তদন্ত কমিটি গঠন

মদন (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার মদন উপজেলার হাওরে ইঞ্জিনচালিত নৌকাডুবিতে অপর নিখোঁজ রাকিবের (২০) লাশ বৃহস্পতিবার উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের গোবিন্দশ্রী পশ্চিমপাড়া রাজআলী কান্দার পিছনে মৃতদেহ ভেসে উঠলে এলাকাবাসী উদ্ধার করে মদন থানায় খবর দেয়। রাকিব ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সিকতা ইউনিয়নের কোনাবাড়ী গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতি টেঙ্গা জামিয়া আরাবিয়া মাদররাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৮। উদ্ধারকৃত ওই মরদেহ বৃহস্পতিবার সকালে ভাই রাজিবের হাতে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় বুধবার রাতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদকে প্রধান করে ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close