কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

চসিকের বেশির ভাগ ওয়ার্ডে আ.লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগ!

মনোনয়ন না পেয়ে প্রার্থী হচ্ছেন একাধিক নেতা

আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বাদ পড়ারা এখন আওয়ামী লীগের জন্য গলার কাটা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এটা ছাড়াও প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একাধিক ব্যক্তি কাউন্সিলর পদে লড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপি একক প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুরোনো অনেকের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ‘আওয়ামী লীগের পদে নেই’ এমন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করা হচ্ছে। কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নিয়ে মাঠে এখন সক্রিয় কার্যত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল। মনোনয়ন তালিকায় তাকে মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য হিসেবে পরিচিত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ভুয়া দলীয় পরিচয়ে মনোনয়ন ভাগিয়ে নেওয়ায় অভিযোগ উঠেছে। চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের একটি অংশ বর্তমান কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। বলেছেন তিনি উপদেষ্টা পরিচয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া ৯, ১০ ও ১৩ ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে আবিদা আজাদের পরিবর্তে তসলিমা বেগম নুরজাহান মনোনয়ন নিয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য পদ ব্যবহার করলেও অভিযোগ তিনি সদস্য নন। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী নুরুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি কখনো আওয়ামী লীগ করতেন না। অথচ আওয়ামী লীগের নাম বেচে তিনি মনোনয়ন নিয়েছেন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিচয় দিলেও আসলে তিনি তা নন। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ। দলের কেউ না হয়ে মনোনয়ন পেয়ে গেছেন। এছাড়া কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের সদস্য নন এবং ইউনিট কমিটিতেও কোনো পদে ছিলেন না বলে দাবি করেছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ নাছের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের পুরোনোদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন ২৭ জন। এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বাদ পড়েছেন পুরোনো ১৯ কাউন্সিলর। কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন না পাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন ১ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তৌফিক আহমদ চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকায় তার পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী মো. শফিউল আজিম। ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মো. শাহেদ ইকবাল বাবুর পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন নগর যুবলীগের সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহিম। শাহেদ ইকবাল নির্বাচন করবেন বলে এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন। ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে মো. জহুরুল আলম জসিমের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরল আবছার মিয়া। ১১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে মোরশেদ আকতার চৌধুরী পরিবর্তে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসমাইল মনোনয়ন পেয়েছেন। ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ সাবের আহমদের পরিবর্তে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. নুরুল আমিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণের পরিবর্তে নগর যুবলীগের সদস্য মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন। ১৪ নম্বর লালখানবাজার ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আবুল ফজল কবির আহমদ মানিকের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য আবুল হাসনাত মো. বেলাল। ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ইয়াছিন চৌধুরী আছুর পরিবর্তে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. নুরুল আলম। ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মো. আবুল হাশেমের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন। ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর এইচ এম সোহেলের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী। ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে মো. আবদুল কাদেরের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম বাহাদুর। ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মাজহারুল ইসলাম চৌধুরীর পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আতাউল্লাহ চৌধুরী। ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিমের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবদুস সালাম। ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর হাজী মো. জয়নাল আবেদীনের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল বারেক। ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসীর পরিবর্তে মনোনয়ন পান ৪২ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জোহরা বেগম। ৯, ১০ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড বর্তমান কাউন্সিলর আবিদা আজাদের পরিবর্তে নগর আওয়ামী লীগের সদস্য তছলিমা বেগম নুরজাহান মনোনয়ন পান। ১৬, ২০ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আনজুমান আরা বেগমের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা রুমকি সেনগুপ্ত। ১২, ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ফারহানা জাবেদের পরিবর্তে ২৪ নম্বর মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুর আক্তার প্রমা মনোনয়ন পান। ১১, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে জেসমিন খানমের পরিবর্তে নগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক হুরে আরা বেগম মনোনয়ন পেয়েছেন। ২৮,২৯ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে ফেরদৌসি আকবরের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউনিট আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা জিন্নাত আরা বেগম।

যেসব ওয়ার্ডের পুরোনো কাউন্সিলররা মনোনয়ন পাননি তারা প্রত্যেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে সংগ্রহ করেছেন মনোনয়নপত্র। তাদের বেশির ভাগের মত বিগত সময়ে তারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তারা বাদ যেতে পারে। কিন্ত অনেক ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র করে, ভুল বুঝিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তাই তারা নির্বাচন থেকে পিছু হটবেন না বলে জানান।

অপরদিকে বিএনপি তাদের একক প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সব ওয়ার্ডে দিতে না পারলেও সংখ্যাগরিষ্ট ওয়ার্ডে বিএনপি একক প্রার্থী দেবে বলে জানা গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close