নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ এপ্রিল, ২০১৯

নকল বৈদ্যুতিক তার

শর্টসার্কিট থেকে বাড়ছে অগ্নিকান্ড

রাজধানীতে যত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে তার কারণ হিসেবে শর্টসার্কিটকে দায়ী করা হয় বেশি। এর পরিমাণও কম নয়, প্রায় ৮৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ভবন নির্মাণে বেশি লাভের আশায় নিম্নমানের তার ও অন্য সরঞ্জামাদি ব্যবহার করায় শর্টসার্কিটের মতো দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।’ আর চাহিদা থাকায় রাজধানীর অলিগলিতে মিলছে এসব নকল বৈদ্যুতিক তার। কাপ্তানবাজারে এর দেখা মেলে সবচেয়ে বেশি।

নবাবপুরের কাপ্তানবাজার। দেশের সবচেয়ে বড় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বেচা-কেনার এই এলাকার প্রতিটি দোকানেই পাওয়া যায় স্বনামধন্য কেবল কোম্পানির নকল বৈদ্যুতিক তার। এমনকি কোনো কোনো দোকানে কোম্পানির স্টিকার দেওয়া থাকলেও সে স্টিকারও নকল করে সাঁটানো হয় তারের কয়েলে।

এসব নকল তারের ভোক্তা কারা এমন প্রশ্নে বিক্রেতারা জানান, যেসব কোম্পানি ভবন নির্মাণের দায়িত্বে থাকে, তারাই বেশি লাভের আশায় মানের সঙ্গে সমঝোতা করে। অন্যদিকে নিখুঁতভাবে নকল হওয়ায় মূল ভোক্তাও বুঝতে পারেন না আসল-নকলের ফারাক। বিক্রেতারাও জানান, এসব নকল তারে শর্টসার্কিটের ঝুঁকি অনেক বেশি।

বিক্রেতারা আরো বলেন, ‘এক নম্বর, দুই নম্বর, তিন নম্বর যাই বিক্রি হয় শো রুমে, কারখানা তা বিক্রি করবে না। অরিজিনাল নিলে ঠকার সম্ভাবনা থাকতে পারে, দুই নম্বর দিয়ে দিবে। কিন্তু দুই নম্বর নিলে ঠকার সম্ভাবনা থাকে না।’

এ ব্যাপারে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ জানায়, মানসম্পন্ন তারে উল্লেখ থাকা মান, নকল তারের ক্ষেত্রে মানা হয় না। ফলে যে অ্যাম্পিয়ার বা লোড নেওয়ার ক্ষমতা তারের থাকতে হয় তা না থাকায় অধিক লোডের বৈদ্যুতিক জিনিস ব্যবহারের কারণে শর্টসার্কিটের ঘটনা ঘটে।

বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শফিকুর ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা যখন একটা বিল্ডিং করি তখন ক্যালকুলেশন করেই আমাদের ক্যাবল চয়েস করতে হয়। আমরা সার্কিট টেস্ট করি, টেস্ট করে এমন সার্কিট পেয়েছি যে নিজেই পুড়ে যাচ্ছে, কিন্তু সার্কিট ব্রেক করতে পারছে না।

এদিকে নিরাপদ নগরায়নে শুধু ভবন মানসম্মত বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকা নিশ্চিত করলেই হবে না, যারা ভবন পরিদর্শন করেন, তাদের বৈদ্যুতিক তারের ব্যবহার ও নিরাপত্তার দিকটিতেও গুরুত্ব দিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, দেখানোর জন্য আমরা সুযোগ-সুবিধাগুলো দিচ্ছি আর পেছনে অঙ্ক কষছি। দেখানো হচ্ছে বিল্ডিংগুলোতে তারের সাইজ, সংযোগ ১০০ ভাগ কিন্তু করা হয়েছে ৫০ ভাগ। ঢাকা শহরের নামি-দামি বিভিন্ন বিল্ডিং এ সাবস্টেশনে আগুন লেগেছে। পাশাপাশি এসব অবৈধ নকল বৈদ্যুতিক ক্যাবল তৈরির কোম্পানিগুলোকে আইনের আওতায় আনার পরামর্শ তাদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close