তনুর বাবা এবং আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছি। মৃত্যুর আগে মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারব কিনা জানি না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মেয়ের হত্যার বিচার চাওয়ার সুযোগ পেলে শান্তি পেতাম। আমার নিরাপরাধ মেয়ের হত্যার বিচার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। কথাগুলো বলছিলেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে নিখোঁজ হন তনু। পরে তার স্বজনরা সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর লাশ খুঁজে পান।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার তিন বছর পূর্ণ হবে আগামী ২০ মার্চ। এখন পর্যন্ত হত্যাকারীদের শনাক্ত করা যায়নি, নেই মামলার তদন্তের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতিও। মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডিকে এখন মোবাইলে কল দিয়ে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেছেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, প্রায় এক বছর ধরে সিআইডির সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। অফিসে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকেও পাওয়া যায় না। ফলে তদন্ত সম্পর্কে কিছুই জানতে পারছি না। সর্বশেষ যখন সিআইডির সঙ্গে কথা হয়েছিল তখন বলেছিল তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বিচারের আশায় তাই চুপ করে বসে আছি।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে নিখোঁজ হন তনু। পরে তার স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর লাশ খুঁজে পান। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা।

তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রানু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনাÑ এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।

তনুর মা আরো বলেন, সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকারীরা বেরিয়ে আসবে। কারণ সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর জঙ্গলে তনুর লাশ পাওয়া যায়। গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার মুখপাত্র খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, তনু হত্যা মামলা নিয়ে সিআইডি যেন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এটা আসলেই দুঃখজনক।

"