নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

অগ্নিদগ্ধদের দেখতে ঢামেকে প্রধানমন্ত্রী

পুরান ঢাকার রাস্তা সংস্কার হবে, সরবে কেমিক্যাল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক ব্যবসা সরানোর পাশাপাশি অলিগলি ও রাস্তাগুলো নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে। তবে উদ্যোগ নেওয়ার পরও পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম না সরানো দুঃখজনক।

পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখতে গিয়ে গতকাল শনিবার এ কথা বলেন সরকারপ্রধান। এ দিন দগ্ধ ও আহতদের দেখতে সকাল সোয়া ১০টার পর ঢামেকে আসেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১১টার দিকে বেরিয়ে যান। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীকে পাশে পেয়ে যেন সাহস পেলেন ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন দগ্ধরা। চকবাজারের আগুনে দগ্ধ রিকশা চালক আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হাজেরা বেগম বুঝতে পারছিলেন না, চার সন্তানকে নিয়ে কীভাবে তার সংসার চলবে। খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী পাশে এসে দাঁড়ানোয় তিনি এখন ফিরে পেয়েছেন বেঁচে থাকার সাহস। তিনি জানান, তার স্বামী আনোয়ার হোসেন রিকশা চালাতেন। তার রোজগারেই চার সন্তানকে নিয়ে কোনোক্রমে টিকে ছিলেন তারা। কিন্তু বুধবার রাতে চুড়িহাট্টার আগুনে আনোয়ার মারাত্মকভাবে দগ্ধ হলে সব কিছু অনিশ্চিত হয়ে যায়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৫৫ বছর বয়সী আনোয়ারের শরীরের ২৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাখা হয়েছে আইসিইউতে।

হাজেরা বলেন, এই তিন দিন আমরা হাসপাতালে আছি। খুব টেনশনের মধ্য দিয়া দিন পার করতেছিলাম। কীভাবে আমার সংসার চলবে। এখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সহায়তার আশ্বাস পেয়ে ভরসা পাচ্ছেন বলে জানালেন মধ্যবয়সী এই নারী। কল্পনাও করি নাই আমাদের মতো গরিব মানুষ আগুনে পুড়লে প্রধানমন্ত্রী দেখতে আসবে। উনি আমাদের কাছে আসছেন; শরীরে, মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত¡না দিছেন, সাহস দিছেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন বলছেন। আমরা সাহস পাইছি। আমার স্বামীর ভালো চিকিৎসা হইব। আমরা চাই সে সুস্থ হয়ে যাক।

গত বুধবার রাতের ওই অগ্নিকা-ে এ পর্যন্ত ৬৭ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছে, দগ্ধ-আহত হয়েছেন বহু মানুষ। তাদের মধ্যে অনেককে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। অগ্নিকা-ের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন গত বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সারা রাত উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সারা রাত জেগে উদ্ধার কাজ তদারক করেছেন। এ ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তিনি।

এলাকাবাসীর ভাষ্যে, অগ্নিকা- যে ওয়াহিদ ম্যানশন থেকে ছড়িয়েছে, সেখানে রাসায়নিকের গুদাম ছিল বলে আগুন এভাবে ছড়িয়েছে। যদিও শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন তা অস্বীকার করেছিলেন। পরে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, ওয়াহিদ ম্যানশনের বেজমেন্ট ছিল রাসায়নিকে ঠাসা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম না সরানো দুঃখজনক। সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কিন্তু বাস্তবে কয়েক দিন কাজ হওয়ার পর আর হয়নি। আমরা মোবাইল কোর্ট বসিয়েও কারখানগুলো অপসারণ করেছি। কিন্তু সেগুলো আবার বসেছে। এগুলো দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে। আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। পুরান ঢাকার ঘনবসতির এলাকায় যেন আর কেমিক্যাল না থাকে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুরান ঢাকার অলিগলি প্রশস্ত করা হবে

পুরান ঢাকার অলিগলি ও ঘিঞ্জি সড়কগুলো নতুন করে গড়ে তোলার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখানকার রাস্তাঘাট একেবারে সরু। সেই রাস্তায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার কোনো উপায় নেই। এই অলিগলি, রাস্তা; এগুলো আমাদের নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে, প্রশস্ত করতে হবে। যেন ফায়ার সার্ভিসের লোকরা ঢুকতে পারে।

তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় এত গলি যে, আমরা হেলিকপ্টার দিয়েও পানি দিতে পারিনি। এটাও খেয়াল রাখতে হয়েছে যে হেলিকপ্টারের বাতাস থেকেও আগুন ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই নিরাপদ দূরত্ব থেকে হেলিকপ্টারে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় শোক ঘোষণা হবে আজ

চকবাজারের অগ্নিকা-ে জাতীয় শোক ঘোষণা করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা একটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা যা আমাদের সবাইকে ব্যথিত করেছে। আমরা একটি শোক দিবস ঘোষণা করব। রোববার অফিস খুললে কেবিনেট (মন্ত্রিসভা) সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে শোকের ঘোষণা দেওয়া হবে।

গণমাধ্যমকর্মী ও উৎসুক মানুষের আচরণের সমালোচনা

চকবাজারে অগ্নিকা-ের সময় উৎসুক মানুষের রাস্তায় ভিড় করা এবং বারবার ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের থামিয়ে প্রশ্ন করে আগুন নেভানো ও উদ্ধারকাজে সংবাদকর্মীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বিশেষ করে টিভি সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন। এটা কি প্রশ্ন করার সময়? উত্তর আশা করেন কিভাবে? তারা কাজে যাবেন। অথচ তাদের আটকে রেখে প্রশ্ন করা হচ্ছে। অগ্নিকা-ের বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশবাসীকে এইটুকু বলবো তারা যেন দোয়া করেন। আমাদের দেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে, সবাই সতর্ক থাকবেন।

জলাধারগুলো ভরাটের ফলে রাজধানীবাসীর বিপদ বেড়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় অনেক পুকুর ছিল। ধোলাইখাল থেকে শুরু করে অনেক খাল ছিল, শান্তিনগর খাল, সেগুনবাগিচা খাল। দুর্ভাগ্য হলো সেগুলোতে হয় বক্স-কালভার্ট করা হয়েছে অথবা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পুকুরগুলো একে একে ভরাট করা হয়েছে।

চকবাজারে আগুন নেভাতে পানি প্রাপ্তির অসুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানি পাওয়া এটা ছিল কষ্টকর। পুরনো জেলখানার পুকুর থেকে পানি আনা হয়েছে। সব বাড়িঘর থেকে পানি আনা হয়েছে, রিজার্ভ ট্যাংক থেকে পানি দিয়েছে, ওয়াসা সহযোগিতা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধরনের আগুন লাগলে পানির যেন অভাব না হয় সে বিষয়টা সবাইকে খেয়াল করতে হবে।

চিন্তা করবেন না, চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার দেখছে

?ঢামেকে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী বার্ন ইউনিটের দ্বিতীয় তলার নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) সামনে যান। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন ‘শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম।

ডা. কালাম জানান, প্রধানমন্ত্রী আইসিইউতে এলেও চিকিৎসাধীনদের ইনফেকশন হবে বা চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটবে চিন্তা করে ভেতরে ঢোকেননি। তিনি বাইরে অপেক্ষমাণ স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেন, আপনারা চিন্তা করবেন না। চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার দেখছে। রোগীরা সুস্থ হলে তাদের পুনর্বাসনের চিন্তাও করছে সরকার। চিকিৎসকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, আপনারা অনেক কষ্ট করছেন, করেছেন। রোগীরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে সেটাও দেখবেন।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালিক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম প্রমুখ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close