নিজস্ব প্রতিবেদক ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে আ.লীগের নির্বাচনী প্রচার শুরু

মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে : শেখ হাসিনা

প্রিয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে পথে পথে জনতার ঢল

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন আর তারা ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনগণের সেবা করার সুযোগ দিন। যারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, যাদের সাজা হয়েছে তাদের দোসরদের নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বাধীনতার শত্রু, গণহত্যা পরিচালনাকারী, আগুনসন্ত্রাসী নির্বাচনের মাঠে নেমেছে। তবে তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। তারা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। মুুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দেবে। গতকাল বুধবার বিকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান কলেজ মাঠে প্রথম নির্বাচনী জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। এসময় বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, যে বাংলার মানুষের জন্য জাতির পিতা জীবন উৎসর্গ করেছেন সেই বাংলার মানুষদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন তৃণমূলের উন্নয়ন, নৌকায় ভোট দিলে কেউ কোনো দিন অধিকার বঞ্চিত হয় না। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনেও ভোট দিয়ে দেশ সেবার সুযোগ করে দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। জনসভায় টুঙ্গিপাড়াবাসীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারাই আমাকে ভোট দেন, আপনারাই নির্বাচিত করেন। আপনাদের ভোটেই প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ সেবা করি। আপনারাই আজকে আমার আপনজন। আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। ভোট দিয়ে এবারো দেশ সেবার সুযোগ করে দেবেন।

তিনি বলেন, সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের কাছে আবেদন জানাই; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নৌকা মার্কায় ভোট দিন। মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। নৌকার জন্য ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট চাই। জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করতে চাই। যাকে যেখানে প্রার্থী করেছি। সেখানেই তাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে আহ্বান জানাচ্ছি। নৌকায় ভোট দিয়ে কেউ কখনো বঞ্চিত হয় না।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশ আর গরিব থাকবে না। বাংলাদেশ আর কারো কাছে হাত পাততে হবে না। আমরা সবক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আমাদের লক্ষ্য; সোনার বাংলা গড়ে তুলব। এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা।

কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাষ জয়ধরের সভাপতিত্বে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ধর্ম সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহ, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ডা. রোকেয়া সুলতানা, আব্দুস সবুর, এসএম কামাল, এবিএম রিয়াজুল কবির কায়সার, মারুফা আক্তার পপি, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী এবং চলচ্চিত্রাভিনেতা রিয়াজ এবং ফেরদৌস এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রার্থীরাও বক্তব্য দেন।

এর আগে গতকাল শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। এর আগেও সকাল ৮টা ২৩ মিনিটে গণভবন থেকে সড়কপথে টুঙ্গিপাড়ার পথে রওনা হন শেখ হাসিনা। তিনি ফেরি ক্যামেলিয়ায় নদী পাড় হন। এ সময় তিনি নৌপথের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। এদিকে প্রিয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে পথে পথে জনতার ঢল নামে।

সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সকাল ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জের কুচিয়ামোড়া, নিমতলা, হাসাড়া, ছনবাড়ি, দোগাছি, মেদিনীমন্ডল, মাওয়া ও শিমুলিয়া এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে দলীয় প্রধানকে শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য রাস্তার দুইপাশে জনতার ঢল নামে। সকাল সোয়া ৯টার দিকে সিরাজদিখানের নিমতলা অতিক্রম করে গাড়ি বহর। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।

এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোহরাব হোসেন, কেয়াইন ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ আলী, উপজেলা যুবলীগ নেতা মাসুদ লস্করসহ নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।

গাড়িবহর ছনবাড়ি অতিক্রম করার সময় মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের মহাজোটের প্রার্থী মাহি বি. চৌধুরীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সকাল পৌনে ১০টার দিকে লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছালে মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি উপজেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর ভিআইপি ফেরিঘাটে রাখা ক্যামেলিয়া ফেরিতে চলে যান। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে কাঁঠালবাড়ির উদ্দেশে ফেরিটি ছেড়ে যায়।

মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, দুপুর ১২টার দিকে ফেরি ক্যামেলিয়া কাঁঠালবাড়ির ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ঘাটে পৌঁছালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সাধারণ সম্পাদক নূর-ই-আলম চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আ. সোবাহান গোলাপ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিয়াজউদ্দিন খান, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ রেজাউল করিম তালকুদার, জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মুনির চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামসুদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সেলিম উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর বহরঘাট এলাকা অতিক্রম করার সময় হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক স্লোগানে স্লোগানে তাকে শুভেচ্ছা জানায়। ঘাট এলাকা থেকে শিবচরের দত্তপাড়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার জুড়ে চলতে থাকে এই শুভেচ্ছা জ্ঞাপন। প্রধানমন্ত্রীও এ সময় নেতাকর্মীদের অভিবাদনের প্রত্যুত্তর দেন।

পরে ২টা ১০ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করেন। এরপর ৩টায় তার নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে প্রথম নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মিছিল নিয়ে সকাল থেকেই সভাস্থলে আসতে শুরু করেন। তাদের হাতে শোভা পায় নৌকা। নানা রঙের ফেস্টুন নিয়ে আসা মানুষের মিছিলে ও স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে আশপাশের এলাকা।

ছয়বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনাকে বরণ করতে দলীয়ভাবে নেওয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে কোটালীপাড়া উপজেলা সদরসহ এর আশপাশের এলাকা।

কোটালীপাড়া থানার ওসি কামরুল ফারুক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে সভাস্থল ও আশপাশের এলাকায় চার স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

আজ ঢাকা ফেরার পথে শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় প্রচার শেষে ভাঙ্গার মোড়, ফরিদপুরের মোড়, রাজবাড়ী রাস্তার মোড়, পাটুরিয়া ঘাট, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ, (ধামরাই), সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নির্বাচনী পথসভায় অংশ নেবেন।

ধামরাই ও সাভার প্রতিনিধি জানান, শেখ হাসিনা আজ ঢাকায় ফেরার পথে ধামরাই হার্ডিঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে জনসভায় বক্তব্য দেবেন। আর দুপুরে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ধামরাই পৌর শহরের নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-২০ ধামরাইয়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রচারণায় গোটা উপজেলা মুখর।

ধামরাই থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগমন সফল করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দফায় দফায় উপজেলা হল রুমে সভা করেছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরা রাত-দিন কাজ করছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close