নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ নভেম্বর, ২০১৮

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের শেখ হাসিনা

বিশ্বাসঘাতকদের ঠাঁই হবে না আ.লীগে

তালিকা চূড়ান্তে আজ সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অগ্রগতির ধারা ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই সবার সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্বাসঘাতকদের দলে ঠাঁই হবে না। আওয়ামী লীগ চায় দেশকে উন্নতসমৃদ্ধ করতে। আর দেশকে এগিয়ে নিতে বিশ্বাসঘাতকদের প্রয়োজন নেই।’ গতকাল বুধবার সকালে গণভবনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সাক্ষাৎ করতে এলে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।

ঘরের শত্রু বিভীষণ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগপ্রধান বলেন, দল করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। যাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে, সব নেতাকর্মীকে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। বিভিন্ন জরিপ প্রতিবেদন আমার কাছে। জরিপের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কেউ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী হলে তাকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। প্রায় ৪ হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রিতে বিস্ময় প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, এতে দলীয় ফান্ডসমৃদ্ধ হয়েছে। তবে সারা দেশে দল যে নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগছে তা এর মাধ্যমে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। যেসব আসনে মনোনয়নপত্র বেশি কেনা হয়েছে, সেখানে নেতৃত্ব শূন্যতা রয়েছে, সেখানে যত বড় নেতাই হোক না কেন, তারা পার্টিকে অর্গানাইজ করতে পারে নাই। এটা তাদের নেতৃত্ব শূন্যতার প্রমাণ। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ক্ষমতায় এলে অনেক পদ ক্রিয়েট করা হবে, সেখানে সবাইকে একমোডেট করা হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জরিপে যারা এগিয়ে থাকবে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেখানে ছোট নেতা, বড় নেতা দেখা হবে না। যাকে মনোনয়ন দেব তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নইলে বিপদ হবে। ক্ষমতায় আসছি মনে করে নিজেদের মধ্যে যে আসন খাওয়া-খাওয়ির মনোভাব তা পরিহার করতে হবে।’

তিনি বলেন, যে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রার্থিতা বিরোধিতা ও প্রার্থীর বিপক্ষে বিরোধিতা করা হলে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। একটা সিটও হারাব কারো এমন মনোভাব পোষণ করা যাবে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় দলের যারা ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়ে আছেন, তাদের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। গত দুই নির্বাচনে ক্ষমতায় এনেছি, এবারো আমিই ক্ষমতায় আনবÑএটা মনে করে কোনো লাভ নেই। প্রার্থীর নিজ যোগ্যতা, দক্ষতা, রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা থাকতে হবে। জনসম্পৃক্ত হতে হবে।

আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থন আছে, কর্মী আছে, ভোট আছে কিন্তু ইদানীং দৃশ্যমান কর্মী নেই। ১৯৮১ সালে নেতৃত্বে এসে দলকে সংগঠিত করেছি। তিলে তিলে এই দলকে গড়ে তুলেছি। আমি, রেহানা, জয়, পুতুলসহ আমার পরিবারের সদস্যরা অনেক অসহায় সময় পার করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু কেউ আওয়ামী লীগকে দমাতে পারেনি। এখনো নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।

এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মহাজোটের শরিকদের ৭৫টি আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। জাতীয় পার্টিসহ মহাজোটের শরিকদের তালিকা অনেক আগেই পেয়েছি। আমাদের দলের তালিকা চূড়ান্ত করছি। এরপর শরিকদের সঙ্গে বসব। গতকাল দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, শরিকদের প্রত্যাশা অনেক। অ্যালায়েন্সের (জোট) বিষয়টি আমরা মাথায় রেখেছি। অল্পদিনের মধ্যেই তাদের সঙ্গে বসে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি কপোরেশনের পদে থেকে যারা আবেদন করেছেন, তারা মনোনয়ন পাবেন না। বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া দল তাদের মনোনয়ন দেবে না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কথা উল্লেখ করে কাদের বলেন, বাংলাদেশ এক অদ্ভুত দেশ। এখানে যেমন বিজয়গাথা আছে, তেমনি বেইমানও কম নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাস করলেও অনেকে আজ সে বিশ্বাস থেকে দূরে সরে গেছে। অনেকে সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে মিশে গেছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেছেন, ৩০০ আসনে দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সংসদীয় বোর্ডের ধারাবাহিক বৈঠক শুরু হবে। এই কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ১৪ দল ও মহাজোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। তিনি বলেছেন, দলগত মূল্যায়নের পর জোটগতভাবে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

জানা গেছে, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বনামধন্য জরিপ প্রতিষ্ঠান এবং দলের অভিজ্ঞ একাধিক টিমের মাধ্যমে কয়েক দফা মাঠ জরিপ চালিয়ে তিন শ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জনপ্রিয়তার বাস্তবচিত্র এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ল্যাপটপে বন্দি। নেতা-এমপি-মন্ত্রীরা যত বড় বড়ই শোডাউন করুন না কেন, প্রধানমন্ত্রীর হাতেই রয়েছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিজ নির্বাচনী এলাকায় সর্বশেষ অবস্থা ও বিস্তারিত আমলনামা।

গত টানা ১০ বছরে কোনো মন্ত্রী-এমপি বা সম্ভাব্য প্রার্থী নিজ এলাকায় কী করেছেন, জনপ্রিয়তা বেড়েছে, নাকি কমেছে, অনিয়ম-দুর্নীতি কিংবা দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে কি না-এসব আমলনামা রয়েছে দলীয় প্রধানের হাতে। তাই সংসদীয় বোর্ডের ধারাবাহিক বৈঠক থেকে সর্বশেষ জরিপসহ সবকিছু বিবেচনা করেই এবার একক প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close