নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ নভেম্বর, ২০১৮

গণভবনে সংলাপ

সংবিধানের বাইরে যাবে না সরকার

আলোচনা ভালো হয়েছে : ড. কামাল * সন্তুষ্ট নই : ফখরুল * আলোচনার পথ খোলা আছে : কাদের * বিরোধীদের সভা-সমাবেশে সম্মতি * বিদেশি পর্যবেক্ষকে আপত্তি নেই * খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় আদালতের

আওয়ামী লীগের সময়ে কেমন উন্নয়ন হয়েছে তার বিচারের ভার আপনাদের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবাই মিলে মিশে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

সংলাপের শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে এই অনুষ্ঠানে আপনার এসেছেন গণভবন ও জনগণের ভবনে। এই ভবনে আপনাদের স্বাগত জানাই। এই দেশটা আমাদের সবার। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমি এটা বিচারের ভার আপনাদের ওপর ছেড়ে দেব।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ৯ বছর ১০ মাস হতে চলল, আমরা এই সময়ের মধ্যে দেশে কত উন্নয়ন করতে পেরেছি সেটা নিশ্চয়ই আপনারা বিবেচনা করে দেখবেন। এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভালো আছে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে। দেশের জন্য আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে গণতন্ত্রের যাত্রা এবং উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে আজকের দিনটি বিরাট অবদান রাখবে বলে মনে করি।

তিনি বলেন, দিনবদলের যে সূচনা করেছিলাম সেই দিনবদল হচ্ছে। এটাকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন করতে হবে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা এ স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আজকে সেই স্বাধীনতার সুফল যেন প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছতে পারে সেটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।

এর আগে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দল গণভবনে প্রবেশ করে। এ সময় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের স্বাগত জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ও বিশেষ সহকারী সাইফুজ্জামান শেখর।

ঐক্যফ্রন্টের নেতারা পৌঁছানোর পর ব্যাংকোয়েট হলে বসেন। সংলাপের নির্ধারিত সময় সন্ধ্যা ৭টার পরপরই সেখানে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টায় কামাল হোসেনের বাড়িতে পৌঁছে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এর পৌনে ১ ঘণ্টা পর তারা রওনা হন। কামালের বাড়িতে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থাকলেও প্রতিনিধি দলে থাকা বিএনপির অন্য নেতারা ছিলেন না। তারা আলাদাভাবে গণভবনে পৌঁছান। এর মধ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নাম প্রতিনিধি দলে থাকলেও তিনি সংলাপে যাননি। সবাই পৌঁছে যাওয়ার ১৫ মিনিটের বেশি সময় পর গণভবনে ঢোকেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

সংসদ ভেঙে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি তোলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গত রোববার সংলাপের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠান। পর দিনই সংলাপে রাজি হওয়ার কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত মঙ্গলবার সকালে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী গোলাপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন কামাল হোসেনকে।

বিএনপি নেতারা তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে জোর দিলেও সংলাপের আমন্ত্রণের চিঠিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সংবিধানসম্মত উপায়ে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় গুরুত্বারোপ করেন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিকল্পধারা ও জাতীয় পার্টির নেতারা আজ শুক্রবার ও আগামী সোমবার গণভবনে সংলাপে বসবেন। সব দলের সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাম দলগুলোকেও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও বাম দলগুলো তাদের সিদ্ধান্ত পরে জানাবে বলে জানিয়েছে।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান; নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ও এস এম আকরাম; গণফোরামের মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও সুব্রত চৌধুরী; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) আ স ম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন ও তানিয়া রব; ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, আ ব ম মোস্তফা আমিন, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, আ ও ম সফিক উল্লাহ, মোতাব্বের খান।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংলাপের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এর সফলতা নেই বললেই চলে। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৬ সালের ২২ জানুয়ারি, এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৪ সালের এপ্রিল ও ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বর সংলাপের উদ্যোগ হলেও এর প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৪ সালে কমনওয়েলথের তৎকালীন মহাসচিব এনিয়াওকুর এমেকা ও তার বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ানের মধ্যস্থতায় সংলাপ হলেও ওই সময়ের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছিল। এছাড়া ২০০৬ সালের অক্টোবরে বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল তিন সপ্তাহব্যাপী ছয় দফা বৈঠক করলেও সমঝোতা হয়নি। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের শেষ দিকে নির্বাচন নিয়ে সংকট নিরসনে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে সরাসরি ফোন দিয়ে সংলাপের আমন্ত্রণ জানালে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। পরে বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে দেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close