সংসদ প্রতিবেদক

  ২২ অক্টোবর, ২০১৮

সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী

কামালের দাবি সংবিধান পরিপন্থী

স্বাধীনতাবিরোধী, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করায় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কঠোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ও বিএনএফ চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে বিষয়টি নিয়ে চলতি অধিবেশনে যেকোনো একদিন বিস্তারিত আলোচনা করার প্রস্তাব করেন তোফায়েল।

অধিবেশনে মাগরিবের নামাজের বিরতি ও প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে তোফায়েল আহমেদ পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে বলেন, ড. কামাল হোসেন নিজেকে সংবিধান প্রণেতা বলে দাবি করেন। অনেকে তাকে সংবিধান প্রণেতা বলে থাকেন। আমি নিজেও তৎকালীন গণপরিষদের সদস্য ছিলাম। এখানে উপস্থিত আমির হোসেন আমুসহ অনেকেরই ওই সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা ছিল। নিজেকে সংবিধান প্রণেতা দাবি করা ড. কামাল কী করে সংবিধান পরিপন্থী দাবি করেন? তাদের দাবি সাংবিধানিক নয়। যারা সংবিধানবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত, যারা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত, যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত, গ্রেনেড হামলার দায়ে যেই দলের নেতাদের ফাঁসির রায় হয়েছে, কারো কারো যাবজ্জীবন দ- হয়েছে, যাকে একটি দলের চেয়ারম্যান হিসেবে অভিহিত করা হয়Ñ সেই নেতার যাবজ্জীবন দ- হয়েছে, তাদের সঙ্গে নিয়ে ড. কামাল কীভাবে ঐক্য করেন?

তিনি বলেন, একটা অশুভ ঘটনা হতে চলেছে। আমরা স্পিকারের অনুমতি নিয়ে যেকোনো একদিন এটা নিয়ে আলোচনা করতে চাই, দেশের মানুষকে অনেক কিছু জানাতে চাই। তোফায়েল আহমেদ তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেয়া আসনে এই ড. কামাল বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এর আগে বিষয়টির অবতারণা করে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনএফ চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ ফ্লোর নিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ড. কামাল হোসেন সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। সংবিধানের মুখবন্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম রাখা হয়নি। এত দিনে আমরা বুঝতে পারলাম কেন সংবিধানের মুখবন্ধে জাতির জনকের নাম রাখা হয়নি। ড. কামাল হোসেন মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন না, তিনি পাকিস্তানপন্থী ছিলেন। এ কারণেই তিনি উদ্দেশ্যেমূলকভাবেই সংবিধানের মুখবন্ধে বঙ্গবন্ধুর নাম রাখেননি। এটা তার অসততা। এর জন্য ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

পয়েন্ট অব অর্ডারে তোফায়েল আহমেদ স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশকে বিশ্ব দরবারে অনন্য স্থানে তুলে ধরেছেন। এই বিষয়টি নিয়েও আমরা আলোচনা করতে চাই।

গ্রামীণফোনের কলড্রপে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি : বাণিজ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে গ্রামীণফোনে কল করার সময় বারবার কলড্রপ হওয়ার ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিষয়টির অবতারণা করে তোফায়েল বলেন, বেসরকারি খাতে প্রথম ড. ইউনূসকে এই গ্রামীণফোন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইদানীং লক্ষ্য করছি আমরা যারা গ্রামীণফোন ব্যবহার করি প্রতি বার কলড্রপ হয়। প্রতিটি কলে ৩/৪ বার কলড্রপ হয়। আমি বহুবার গ্রামীণফোন কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। আমরা অনেক সময় দেশে ও বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ কল করি। কিন্তু প্রতিবারই কলড্রপ হয়। এটা হতে পারে না। শুধুমাত্র ব্যবসার জন্য এভাবে কলড্রপ চলতে পারে না। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সন্তানদের না নেয়ার দাবি : এদিকে কার্যপ্রণালি বিধির ৭১ বিধিতে আনা এক জরুরি মনোযোগ আকর্ষণ নোটিশে সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী বলেন, রাজাকার, আলবদর, আলশামস আমাদের হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে। রক্তেভেজা এই স্বাধীন দেশে সেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সন্তানদের সরকারি চাকরি হতে পারে না। সরকারি চাকরিতে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি জানান তিনি।

সমাপনী অধিবেশন শুরু, চলবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত : দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন গতকাল রোববার বিকেলে শুরু হয়েছে। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনটি চলবে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এটি বর্তমান সংসদের ২৩তম অধিবেশন।

এর আগে সংসদীয় কার্য উপদেষ্টা কমিটির সভায় অধিবেশনের মেয়াদকাল নির্ধারণ হয়। ওই কমিটির সভাপতি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য, সংসদে নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। কমিটির সদস্য বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি, আমির হোসেন আমু এমপি, তোফায়েল আহমেদ এমপি, মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি, রাশেদ খান মেনন এমপি, আ স ম ফিরোজ এমপি, মইন উদ্দীন খান বাদল এমপি এবং আনিসুল হক এমপি বৈঠকে অংশ নেন।

সভাপতিম-লী মনোনয়ন : বৈঠকের শুরুতে স্পিকার চলতি অধিবেশনের সভাপতিম-লীর সদস্য মনোনীত করেন। সংসদ অধিবেশন পরিচালনা করবেন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সভাপতিম-লীর সদস্যরা। সদস্যরা হলেন ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম, ফরিদুল হক খান, সাধন চন্দ্র মজুমদার, ফখরুল ইমাম ও সেলিনা জাহান লিটা।

এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও তা গ্রহণ করা হয়। সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় সদ্য প্রয়াত জনপ্রিয় ব্যান্ড সংগীতশিল্পী আয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে। একইসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য শাহ আজিজুর রহমান, সাদির উদ্দিন আহমেদ, শাহ মো আ. রাজ্জাক, আবদুল গণি ও শাহ মোস্তানজিদুল হক খিজিরের নামে শোক প্রস্তাব আনা হয়। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্যানেল মেয়র ওসমান গণিসহ ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প ও সুনামিতে, তানজানিয়ায় ফেরি ডুবিতে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ঘূর্ণিঝড় মাইকেল, ভারতের ওডিশা ও অন্ধ্রপ্রদেশে ঘূর্ণিঝড় তিতলি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় নিহতদের নামে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এরপর প্রয়াত ওই সকল ব্যক্তির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

এদিকে, সংসদ অধিবেশনকে সামনে রেখে সংসদ ভবন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থতি এড়াতে জলকামান থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা রাখে প্রশাসন। এমনকি সংসদ ভবনে প্রবেশেও ছিল কঠোর কড়াকড়ি।

উল্লেখ্য, দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। গত ৪ অক্টোবর সংবিধানের ৭২ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি সংসদের অধিবেশন আহ্বান করেছেন। এর আগে দশম সংসদের ২২তম অধিবেশনটি ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ২০ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। ২২তম অধিবেশন ১০ কার্যদিবস চললেও ১৮টি বিল পাস করে রেকর্ড করে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি শেষ হবে। আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে সময় গণনা শুরু হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close