নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আকাশবীণার উদ্বোধন

বিমান কর্মীদের আন্তরিক হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

নতুন বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ‘আকাশবীণা’ উদ্বোধন করে জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থার কর্মীদের আন্তরিক হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল বুধবার ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিমান কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি চাই, বিমানের সঙ্গে যারা কর্মরত, প্রত্যেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। যেন কোনো বদনাম না হয়। আমাদের দেশের যেন সুনাম হয়। কারণ, যখন কোনো বিদেশি আসে বা যায় বা দেশে যারা আসেন প্রবাস থেকে তাদের যেন দ্রুত মাল খালাস হওয়া, দ্রুত তারা যেন চলে যেতে পারেন।’ বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসংবলিত উড়োজাহাজ ‘আকাশবীণা’ নিয়ে বিমানের বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫। একটানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম বোয়িংয়ের এ উড়োজহাজ; এটি ঘণ্টায় ৬৫০ মাইল বেগে উড়তে পারে। ড্রিমলাইনারে জ্বালানি খরচ ২০ শতাংশ কম। চারটি ৭৮৭ ড্রিমলাইনারসহ ১০টি উড়োজাহাজ কিনতে ২০০৮ সালে মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে বিমান বাংলাদেশ।

এর মধ্যে বোয়িং-৭৭৭-এর নাম পালকি, অরুণ আলো, আকাশপ্রদীপ, রাঙা প্রভাত, মেঘদূত এবং বোয়িং-৭৩৭-এর নাম ‘ময়ূরপঙ্খী’ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে এ অনুষ্ঠানে ড্রিমলাইনারের ‘আকাশবীণা’ নামকরণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখনই নতুন বিমান এসেছে, চেষ্টা করেছি তারই একটা নতুন নাম দিতে।’

ছয়টি বিমান আসার পর প্রথম ড্রিমলাইনারটি গত মাসে এসেছে। বাকি তিনটির একটি নভেম্বরে এবং অবশিষ্ট দুটি আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে আসবে। নভেম্বরে যে ড্রিমলাইনারটি আসছে প্রধানমন্ত্রী সেটির নামও ঠিক করেছেন বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নতুন বিমান সংযোজন করছি; বিমান যেন ভালোভাবে চলতে পারে। যোগোযোগ একটি দেশের জন্য অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের আকাশপথ, রেলপথ, সড়কপথ সবগুলো যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন উন্নত হয়, সেজন্য আমরা বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’

ড্রিমলাইনার চালানোর জন্য সিঙ্গাপুর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিমানের ১৪ জন বৈমানিক। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রকৌশল বিভাগের ১১২ জনকে। এ ছাড়া কেবিন ক্রুদেরও দেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। আকাশবীণায় আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি, ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস।

দুই পাশের প্রতিটি আসনের পাশে রয়েছে বড় আকারের জানালা। একই সঙ্গে জানালার বোতাম টিপে আলো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। উড়োজাহাজটির প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডি এস-মনিটর রয়েছে। মনিটরে বিবিসি, সিএনএনসহ নয়টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে। একই সঙ্গে ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে (আইএফই) থাকবে ১০০টির বেশি চলচ্চিত্র। ড্রিমলাইনার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। এ ছাড়া মোবাইল ফোনে রোমিং সুবিধা থাকলে আকাশে উড্ডয়নের সময় কল করতে পারবেন যাত্রীরা। এজন্য ২৫টি স্যাটেলাইটের সঙ্গে করা হয়েছে চুক্তি।

উড়োজাহাজটির ককপিটেও রয়েছে নতুনত্ব; এটি একটি পেপারলেস এয়ারক্রাফট, যেখানে থাকছে হেডআপ ডিসপ্লে। এর মাধ্যমে চোখের সামনের প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে পারবেন বৈমানিকরা। সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঢাকায় ফ্লাইট অপারেশন রুমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এটি। ফলে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, ককপিট, ফুয়েল, নেভিগেশনসহ সব তথ্য জানতে পারবেন ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তারা। যেকোনো সমস্যা হলে তারা অপারেশন রুম থেকে বৈমানিককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবেন। এজন্য ঢাকায় বিমানের প্রধান কার্যালয়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে সার্ভার স্থাপন করা হয়েছে।

পরে প্রধানমন্ত্রী একটি কেক কাটেন এবং নতুন এই উড়োজাহাজের ভেতরে ঘুরে দেখেন। অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান খান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহীবুল হক, বিমান বোর্ডের চেয়ারম্যান ইনামুল বারী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ বক্তব্য দেন। ইনামুল বারী প্রধানমন্ত্রীকে ড্রিমলাইনারের একটি রেপ্লিকা উপহার দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close