প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৬ মে, ২০১৮

শান্তিনিকেতনে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন

বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক বিশ্বে মডেল : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ-ভারতের বহুমাত্রিক সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় আসীন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভবিষ্যতেও দুই দেশ সব সহযোগিতা বিদ্যমান রাখবে এবং এ সম্পর্ক বিশ্বে মডেল হিসেবে গণ্য হবে বলে আশা করা যায়। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কণ্ঠেও ঝরেছে একই আশার বাণী। তিনি বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, পরস্পরের বিকাশে সহযোগিতা করছে তা অন্যদের জন্যও একটি শিক্ষা, একটি উদাহরণ। বাংলাদেশ-ভারত দুটি দেশ হলেও দুই দেশের কল্যাণ এক সুতোয় গাঁথা। গতকাল শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তারা। এর আগে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের অর্থায়নে নির্মিত এই ভবনের ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর কেশরিনাথ ত্রিপাঠি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সবুজ কলি সেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। শুরুতে শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করে।

কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী : এর আগে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এ সময়

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান পশ্চিমবঙ্গের পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি শান্তি নিকেতনে যান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান নরেন্দ্র মোদি। এরপর শেখ হাসিনা রবীন্দ্র ভবনে রবীন্দ্র চেয়ারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে শান্তিনিকেতনের সমাবর্তনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগদান করেন, যা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়।

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন : বিকেলে শেখ হাসিনা কলকাতা ফিরে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেন। এ সময় সেখানে বাংলাদেশ গ্যালারি কারা প্রতিশ্রুতি দেন। তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা এবং সংস্কৃতি-বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শনের সময় পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ফিরাদ হাকিম ও ব্রাত্য বসু ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জোড়াসাঁকোর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন এবং এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাই বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের কাছে বাড়িটি তাৎপর্যপূর্ণ। সন্ধ্যায় হোটেল তাজ বেঙ্গলে কলকাতা চেম্বার নেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরও আগে, গতকাল সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

‘ডি-লিট’ ডিগ্রিও দেওয়া হবে আজ : আজ শনিবার আসানসোলে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার ‘ডি-লিট’ ডিগ্রি দেওয়া হবে। শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বর্ণপদক বিতরণ করবেন। আজই তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের কৌশলগত বন্ধুত্বকে বিশ্বের জন্য ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা দিতে পারি যে, উভয় দেশ সহযোগিতার এই মনোভাব ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে। কবি গুরুর সৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি বাঙালির জীবনে তিনি উজ্জ্বল বাতিঘর। কবিগুরুর হাতে গড়া এক অনন্য প্রতিষ্ঠান এই শান্তিনিকেতন। প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে বৃহত্তর বিশ্বকে গ্রহণের উপযুক্ত করে তোলার জন্য জ্ঞানদান করার উদ্দেশে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক পুরনো। ১৯৯৯ সালে বিশ্বভারতী আমাকে দেশিকোত্তম ডিগ্রি প্রদান করে। আমার ইচ্ছে ছিল এখানে বাংলাদেশ বিষয়ে চর্চার জন্য একটি আলাদা জায়গা থাকুক। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি কর্মের বিভিন্ন দিক স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বেশি কিছু বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। আমি শুধু এটুকুই বলব, প্রতিটি বাঙালির জীবনে তিনি উজ্জ্বল বাতিঘর। আমাদের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরহ, দ্রোহ ও শান্তিতে রবীন্দ্রনাথ থাকেন হৃদয়ের কাছের মানুষ হয়ে। তার সৃষ্টির ঝর্ণাধারায় আমরা অবগাহন করি প্রতিনিয়ত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমৃত্যু স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত উদারনৈতিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। তাই তিনি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরিতা নয়’ এ নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তার সেই নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভাররে সঙ্গে অভিন্ন ঐতিহাসিক, সামাজিক, ভাষিক, সাংস্কৃতিক ও আত্মিক বন্ধন দৃঢ় হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ছোটবোন রেহানাসহ আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। সেই দুঃসময়ে ভারতের জনগণও যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তা কোনোদিন ভুলতে পারব না।

বাংলায় ভাষণ শুরু মোদির : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দুটি দেশ হলেও দুই দেশের কল্যাণ একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। দুই দেশের কল্যাণ এক সুতোয় গাঁথা। বাংলাদেশ ভবন বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রতীক হয়ে উঠবে। বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে বাংলায় ভাষণ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। বাংলাতে সবাইকে ‘শুভ সকাল’ ও ‘প্রণাম’ জানিয়ে শুরু করেন ভাষণ। একই সঙ্গে তিনি ‘কবিগুরুর শান্তিনিকেতনে এসে অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করার কথাও জানান।

মোদি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে শিক্ষিত রাষ্ট্র করে তোলার যে লক্ষ্য নিয়েছেন, এ তার দূরদৃষ্টি। এই লক্ষ্য অর্জনে ভারতের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। আমাদের লক্ষ্য এক এবং সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর পদ্ধতিও এক। আমাদের দুই দেশের সামনেই জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এদিকে, আমরাও আগামী বছরের মধ্যে ভারতের সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছি।

তিনি শান্তিনিকেতনে আসার জন্য এবং তার সঙ্গে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের সুযোগ লাভের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বিশ্বনাগরিক। তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি বিরল ঘটনা।

সমঝোতা স্মারক সই : এদিকে, শান্তি নিকেতনে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ ভবন পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এককালীন ১০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবুজকলি সেন সই করেন।

দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক : শান্তিনিকেতনের অনুষ্ঠানের পরেই দুই প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলাদেশ ভবনেই’ বৈঠকে বসেন। বৈঠকে শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, রোহিঙ্গা সংকট এবং দুই বন্ধু রাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যৌথ স্বার্থসংশ্নিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আরো চাপ সৃষ্টির জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও যৌথ সহযোগিতার সম্পর্ক উত্তরোত্তর বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এবারের শীর্ষ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা এবং যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়ও গুরুত্ব পায়।

নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক

* অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার

* রোহিঙ্গা ও তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা

* সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে অভিন্ন

স্বার্থকে প্রাধান্য

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist