চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮

স্কুলছাত্র আদনান হত্যার নেপথ্যে হিরোইজম

আসামিরা ছিল ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে

চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আদনান ইসফার (১৫) খুনের নেপথ্যে মহসিন কলেজের মাঠে খেলা, এলাকায় আধিপত্য নিয়ে বিরোধ এবং হিরোইজম প্রদর্শনের দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানায় পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলো নগরের চান্দগাঁওয়ের হাজেরা তজু কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মঈন খান, সাব্বির খান ও মুনতাছির মোস্তফা, চকবাজার ডিসি রোডের হলি ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী এখলাছ উদ্দীন আরমান এবং ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে সদ্য এইচএসসি পাস করা আবদুল্লাহ আল সাঈদ। এদের সবার বয়স ১৮। তারা নগরের চকবাজার-গণি বেকারি এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রাম কলেজ-মহসিন কলেজে আধিপত্য বিস্তারের জন্য কিশোর বয়সী এসব কর্মী ব্যবহার করেন চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রউফ।

পুলিশ জানায়, মহসিন কলেজের মাঠে সপ্তাহখানেক আগে খেলা নিয়ে খুন হওয়া আদনান ও তার বন্ধুদের সঙ্গে জামালখানের আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্রের কথা কাটাকাটি হয়। ঘটনার দিন ১৬ জানুয়ারি দুপুর ১টার দিকে আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্রকে জামালখান মোড়ে দেখে ধাওয়া দেন আদনান ও তার কয়েকজন বন্ধু। আইডিয়াল স্কুলের ওই দুই ছাত্রও রউফ গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী। মঈন, সাব্বির, সাঈদ, আরমান ও মুনতাছির এবং আরো তিনজন রাজনৈতিক বড় ভাই তখন জামালখানে ‘মেজ্জান হাইলে আইয়ুন’ নামে একটি হোটেলে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ধাওয়া খেয়ে আইডিয়াল স্কুলের দুই ছাত্র তখন দৌড়ে ওই হোটেলে ঢুকে পড়ে। সেখানে আড্ডারত বড় ভাইদের সাহায্য চান তারা। তখন মঈন, সাব্বির, সাঈদ, আরমান ও মুনতাছির হোটেল থেকে বেরিয়ে আরমানদের পাল্টা ধাওয়া দেন। তখন আদনানকে ফেলে তার বন্ধুরা পালিয়ে যায়। সাব্বির এসে আদনানের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মেরে ফেলার ?হুমকি দেন এবং কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। আরমান ও সাঈদ লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। আদনান দৌড়ে পালানোর সময় জামালখানে খাজা আজমির ওয়ার্কশপের সামনে একটি সিএনজি অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা লেগে রাস্তায় পড়ে যান। উঠে আবারও দৌড়ে পালানোর সময় মুনতাছির পেছন থেকে টি-শার্ট টেনে ধরলে পেছনের অংশ ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। তখন মঈন সামনে থেকে এসে আদনানের পেটের একপাশে ছুরিকাঘাত করে। এরপর চারজন পেছন দিকে গণি বেকারির দিকে চলে যায়। আদনান জামালখান মোড়ে খাস্তগীর স্কুলের দিকে দৌড়ে যাওয়ার সময় বারবার পেছন ফিরে রক্ত দেখছিল। কিন্তু একপর্যায়ে সে লুটিয়ে পড়ে। তবে মঈন তার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে খাস্তগীর স্কুলের কাছাকাছি পর্যন্ত যান। পরে আবার পেছন ফিরে গণি বেকারির দিকে চলে যান। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনায় জড়িতরা আরমানের মৃত্যুর খবর পান। এরপর তারা বাদুরতলা এলাকায় চলে যান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা ফটিকছড়ির সমিতিরহাটে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সালের বাড়িতে পৌঁছান।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ বলেন, মহসিন কলেজের মাঠে খেলা, এলাকায় আধিপত্য নিয়ে বিরোধ এবং হিরোইজম প্রদর্শন মূলত এসব কারণই হত্যার কারণ। হত্যার পর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত চারজন ফটিকছড়ি উপজেলার সমিতিরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সালের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ওই বাড়ি থেকেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। শুধুমাত্র মুনতাছির মোস্তফাকে নগরের বাদুরতলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে আদনান ইসফার হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন নগরের কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নগরের জামালখান মোড় এলাকা থেকে এই বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। বিক্ষোভকারীরা রউফ গ্রুপের সাঈদ, মঈন, খান সাব্বির ও জিলহাজসহ খুনিদের ফাঁসি দাবি করেন।

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে নগরের জামালখান এলাকায় ছুরিকাঘাতে খুন হন কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান ইসফার। তার বাবা আকতারুল আজম এলজিইডিতে কর্মরত প্রকৌশলী। নগরের জামালখানে প্রেস ক্লাব ভবনের পেছনে তাদের বাসা। খুনের ঘটনায় আদনানের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist