আইনশৃঙ্খলার অবনতি
আইনশৃঙ্খলার অবনতি আর মানুষের উৎকণ্ঠা যেন আজ সমান্তরালে এগিয়ে চলেছে। সমাজের অলিতে-গলিতে এবং বাতাসের কার্নিশে ঝুলে আছে উদ্বেগ, যা ক্রমেই বাড়ছে। লুটেরা পুঁজির দৌরাত্ম্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। বিশেষ করে পারিবারিক ও সামাজিক অপরাধ এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, এ মুহূর্তে এর লাগাম টেনে ধরা না হলে সমাজে যেকোনো সময় বড় মাপের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে; যা দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য এক অশনিসংকেত।
সমাজে বাড়ছে অস্থিরতা, বাড়ছে হত্যাকান্ড। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চুরি, ডাকাতি, নিখোঁজ, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ। পরিবারও যেন পরিণত হচ্ছে এক একটি মৃত্যুকূপে। মা-বাবার হাতে খুন হচ্ছে সন্তান। সন্তানের হাতে মা-বাবা। পরকীয়ায় জড়িয়ে স্বামীর হাতে স্ত্রী, আবার স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন হওয়ার লোমহর্ষক ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে শিক্ষক, রাজনীতিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হচ্ছেন। এসব রহস্যের কোনো কূলকিনারা করতেও ব্যর্থ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মানবাধিকারকর্মী ও সমাজবিজ্ঞানীরা এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মানুষের নীতিনৈতিকতার অবনতি, সামাজিক অবক্ষয়, অপরাজনীতি, বিচারহীনতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকার কারণে এসব অপরাধ বেড়েই চলেছে।
ঠিক এ রকম পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে-এ দেয়াল ভাঙা কি কোনোক্রমেই সম্ভব নয়? এ প্রশ্নের জবাব পাওয়ার আগেই পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সব উন্নয়নের পূর্বশর্ত। তিনি দাবি উত্থাপন করে বলেছেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। আইজিপির দেওয়া তথ্যকে তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। আবার পুরো বচনকে বেদবাক্য বলে মেনে নেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণও নেই। কেননা, উন্নয়নের সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হচ্ছে পুঁজির। সেই পুঁজির চরিত্রের ওপর নির্ভর করে সমাজের সব ঘটনা। সে কারণেই বলতে হয়, আমাদের পুঁজির চরিত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
নব্য স্বাধীন দেশে জন্ম নেওয়া লুটেরা চরিত্র বিকশিত হতে হতে আজ তা এক মহাআতঙ্কে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি গ্রাস করেছে সমগ্র জাতিকে। প্রকৃত অর্থে আমরা কেউই দেশপ্রেমিক হতে পারিনি। দেশকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের এবং ভোগবাদী সমাজব্যবস্থাকেই গুরুত্ব দিয়েছি। যেখান থেকে বের হয়ে আসা একটি দুরুহ কাজ। আর এ কাজকে সফল করার জন্য প্রয়োজন একটি শুদ্ধি অভিযান। এখানেও সেই একই প্রশ্ন এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ে, ‘কে নেবে এর দায়িত্ব ভার’! আমরা মনে করি, একমাত্র আমাদের প্রধানমন্ত্রীই পারেন এ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে এবং চলমান লুটেরা পুঁজির চরিত্র বদলে দিয়ে তাকে জাতীয় পুঁজির চরিত্রে রূপান্তর ঘটাতে। একই সঙ্গে আমরা আরো মনে করি, শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে। কেননা, এরাই সমাজের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এবং সার্বিক অর্থে আমাদের রক্ষক।
"