সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি
একটি রাষ্ট্রের রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যখন বেড়ে যায় তখনই তৈরি হয় বাণিজ্য ঘাটতি। আমদানি ব্যয় যতটুকু বেশি হবে ঘাটতির পরিমাণও হবে ঠিক ততটুকু। অর্থাৎ এই দুয়ের মাঝে পার্থক্যটাই হচ্ছে ঘাটতি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের চেয়ে যা ৪৭ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া এ তথ্য আমাদের হতাশ না করলেও সতর্ক হওয়ার জন্য যে নির্দেশ জারি করেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। তাই বাণিজ্যে সামগ্রিক এ ঘাটতির পরিমাণ দেশের অর্থনীতির জন্য আজ এক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, গত অর্থবছরকালীন বিশ্ব জ্বালানি তেলের বাজার স্থিতিশীল না থাকায় এবং পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের জন্য সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এ বাণিজ্য ঘাটতি ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। তবে অনেকেই এই ঘাটতি বাড়ার পেছনের কারণ হিসেবে অর্থ পাচারকে দায়ী করেছেন। পাশাপাশি তারা বলেছেন, বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়াও একটি কারণ। এ ছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সও কমেছে ধারাবাহিকভাবে। আর আমদানিজনিত চাপের কারণে দেশের ভেতরে বেড়েছে ডলারের চাহিদা। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকারও ঘটেছে দরপতন। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় এক টাকা। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে প্রায় দুই টাকা। এতে রফতানি আয়ের ওপর চাপের পরিমাণ আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। একই সময়ে প্রবাসীরা পাঠিয়েছে, ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। যা পূর্বের পাঁচ অর্থবছরের তুলনায় সর্বনিম্ন। বস্তুত এখনো এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি আয় বৃদ্ধির কোনো সুখবরও আপাতত নেই। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের জবাব একটাই। বাংলাদেশকে রফতানি আয় বাড়াতে হবে। এর বাইরে আমাদের জন্য আর কোনো পথ খোলা নেই। আমরা মনে করি, এটাই একমাত্র বিকল্প পথ। বিকল্প পথকে শক্তিশালী করার জন্য রফতানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর এ পণ্য উৎপাদন বাড়াতে হলে দেশে একটি শিল্প বিপ্লব ঘটাতে হবে। শিল্প বিপ্লব ঘটাতে গিয়ে একটি বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে, আমরা যেন আর কোনো ঋণখেলাপি তৈরি না করি এবং পুরনো খেলাপিদের প্রশ্রয় না দেই।
"