মানবতার ভবিষ্যৎ
জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছেন, ‘আমাদের সময় ঘনিয়ে এসেছে। অন্য কোনো বিশ্বই হতে পারে আমাদের যাওয়ার একমাত্র জায়গা। অন্য সৌরজগত খুঁজে বের করার এখনই সময়।’ ‘মানবতার ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সেমিনারে হকিং উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করতে গিয়ে বলেছেন, আগামী ২০০ থেকে ৫০০ বছরের মধ্যে মহাজাগতিক প্রস্থানের ঘটনাটি ঘটবে। কাজেই এর জন্য সবার প্রস্তুত হওয়া উচিত। প্রস্তুত হওয়ার কথা বলতে গিয়ে তিনি বস্তুত পৃথিবী থেকে পালিয়ে অন্য কোথাও আশ্রয় খোঁজার কথা বলেছেন। কথাগুলো তিনি সোজাসাপ্টাই বলেছেন। তবে তা রূপক অর্থে। আর সে কারণে বলতেই হয়, ‘মানবতার ভবিষ্যৎ’ নিয়ে আলোচনা করার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সব লাভ। পৃথিবীকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন। এখানে একটি কথা না বললেই নয় যে, ৭০০ কোটি মানুষকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নেওয়া বা একসঙ্গে পালিয়ে যাওয়াÑকোনোটাই সম্ভব নয়। এ ছাড়াও রয়েছে টিকিটের দাম। এত দাম দিয়ে টিকিট কেনার ক্ষমতাইবা ক’জনার থাকবে! তার দেওয়া প্রেসক্রিপশন মেনে অন্যত্র যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন কয়েক হাজার ধনাঢ্য ব্যক্তি। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ? তাদের তো এখানেই থাকতে হবে। আর বাঁচতে হবে যুদ্ধ করেই।
হকিং অবশ্য ধ্বংসের কারণ চিহ্নিত করতে গিয়ে বলেছেন, পৃথিবী বহু দিক থেকেই হুমকিতে আছে। কাজেই ইতিবাচক থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। উল্কাপি-ের আছড়ে পড়া, মেরু অঞ্চলের বরফ গলা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ কমে আসাসহ নানা বিপর্যয় পৃথিবীকে হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণায়ন একটা বড় হুমকি। তার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়ে বলা যায়, তিনি তাদেরকেই পালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন, যারা পৃথিবীকে বারবার হুমকির মুখে এনে ফেলছে। অথবা বলা যায়, হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে বর্তমান বিশ্বে ট্রাম্পই সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ আমরা মনে করি, কতিপয় মানুষ তাদের ভুল সিদ্ধান্তকে অগণিত মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। এবং এসব বিকৃত মানসিকতায় গড়ে ওঠা মানুষের ভুল সিদ্ধান্ত পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। কবিতার একটি চরণ দিয়েই আজকের কথা শেষ করতে চাই, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’। আমরা আমাদের মায়ের কোলে ফিরে যেতে চাই। এই পৃথিবীই আমাদের ‘মা’। আমাদের মা’কে আমরা নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করে প্রকৃতির কোলে ফিরিয়ে দিতে চাই। এ কাজে সফল হলে আমরাও মায়ের কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারব। তখন আর একটি উল্কাও পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসবে না।
"