reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ জুন, ২০২০

লিবিয়ায় বাংলাদেশি হত্যা আমরা মর্মাহত

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ জন অভিবাসীকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধ্রে নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আর আমাদের এই নিন্দাজ্ঞাপন এই হত্যাযজ্ঞের কতটা গভীরে গিয়ে নাড়া দিতে সক্ষম, তাও আমরা জানি না। তবে ভাগ্যান্বেষণে যেসব তরুণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, তাদের এহেন মৃত্যু ও করুণ পরিণতি সত্যিই অসহনীয়। তথ্যমতে, গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ থেকে ৩৮ জন তরুণ ভারত-মিসর হয়ে লিবিয়ায় প্রবেশ করেন। সেখান থেকে ইতালিতে যাওয়াই ছিল তাদের লক্ষ্য। কিন্তু অপহরণকারীদের হাতে দু-দফায় বন্দি হওয়ার পর মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেলেও তারা নিজেদের শেষ রক্ষা করতে পারেননি। দ্বিতীয় দফায় চাহিদামাফিক টাকা দিতে না পারায় অপহরণকারীরা তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে নির্যাতিতরা অপহরণকারী দলের হোতাসহ দুজনকে হত্যা করেন। এই হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে অপহরণকারীরা নির্বিচারে গুলি চালায়। গুলিতে ২৬ জন বাংলাদেশি ও চারজন সুদানি নিহত হন।

এ হত্যার দায় নেবে কে! দায় চাপানোর কোনো আইনসম্মত সুযোগও নেই। মুখে অনেকে অনেক কিছুই বলবেন এবং বলছেন। তবে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাজনৈতিক গোলমালের কারণে ২০১৫ সাল থেকে লিবিয়ায় জনশক্তি রফতানি কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। তার পরও বাংলাদেশিদের যাওয়া বন্ধ হয়নি। মানব পাচারকারীদের প্ররোচনার ফাঁদে পা দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। কতজন সফল হয়েছেন, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় লিবিয়ার কোস্টগার্ড গত কয়েক মাসে মানব পাচারকারীদের কবল থেকে অন্তত ৭০০ বাংলাদেশিকে আটক করে। এর বাইরে পাচারকারীদের জিম্মায় আরো কত লোক জিম্মি হিসেবে আটক রয়েছে তারও কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব নয়। এখানে একটি কথা না বললেই নয় যে, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এ ধরনের হত্যা বন্ধ হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছেÑ কাজটি করবে কে? সরকার বিদেশি পাচারকারী চক্রের নাগাল না পেলেও দেশীয় মানব পাচারকারী চক্রের নাগাল খুব সহজেই পেতে পারে; যদি সরকার তা সততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সে সিদ্ধান্তের সঙ্গে এ দেশের মানুষের সাক্ষাৎ হয়েছেÑ এমন প্রমাণ এখনো মেলেনি।

বৈধ কিংবা অবৈধ, যে পথেই বাংলাদেশিরা বিদেশে যান না কেন, তাদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রাই আমাদের অর্থনীতির বড় শক্তি। রেমিট্যান্স বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, রেমিট্যান্স উপার্জনকারী সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ কখনোই পরিলক্ষিত হয়নি। আমরা মনে করি, এ ধরনের হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হওযার পূর্বশর্তই হচ্ছে অবৈধ পথে মানব পাচারকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা। এর কোনো বিকল্প নেই। সরকারের যে উদ্যোগ নেই, সে কথাও বলা যাবে না। তবে সরকারের এ উদ্যোগ পাচার রোধে পর্যাপ্তও নয়। একই সঙ্গে বলতে হয়, মানব পাচারে ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের মাঝে বাংলাদেশের নামও উচ্চারিত হচ্ছে। আমরা এর পরিবর্তন চাই। সরকার নিশ্চয়ই বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close