রিপন কুমার দাস

  ১৭ জুলাই, ২০১৯

মুক্তমত

ডেনরি ও ফ্যাটেনিং শিল্পনগরী

বর্তমানে বাংলাদেশ দুধ ও গবাদি পশু উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কৃষিজমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ও জনবহুল এলাকায় পরিবেশ দূষণ ও দুর্গন্ধের ফলে ভবিষ্যতে দুধ ও মাংস উৎপাদন হুমকির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দেশের মানুষের দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিটি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেনরি ও ফ্যাটেনিং শিল্পনগরী স্থাপন করা প্রয়োজন।

কেন দরকার ডেনরি ও ফ্যাটেনিং শিল্পনগরী? দেশে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, জনবহুল এলাকায় দুর্গন্ধসহ পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। শিক্ষিত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের জন্য, লাইভস্টক বিষয়ে ডিপ্লোমা ও ভোকেশনাল পাসদের কর্মসংস্থানের জন্য। দেশের দুধ ও মাংসের চাহিদা মেটানোর জন্য ও বিদেশে মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাতসামগ্রী রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য। যেসব শিক্ষিত বেকার যুবকের গবাদিপশু পালন করার জন্য নিজস্ব জমি নেই, তাই তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।

সরকার কর্তৃক প্রতিটি প্লটে অবকাঠামোসহ যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার ব্যবস্থা গ্রহই করতে হবে, প্রতিটি প্লটকে গবাফদপশু পালনের উপযোগী করে সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় উদ্যোক্তার হাতে হস্তাস্তর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া জনবহুল এলাকায় ডেনরি ও ফ্যাটেনিং নগরী করার ক্ষেত্রে প্লটের পরিবর্তে বহুতল ভবন নির্মাণ করে দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য উদ্যোক্তারের মাঝে বরাদ্দ প্রদান করা যেতে পারে। প্রতিটি প্রজেক্টের জন্য ১০ লাখ টাকা করে খরচ হবে। এ ছাড়া নগরীতে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে। একজন উদ্যোক্তা প্লটের জন্য আবেদন করার ৩ মাসের মধ্যে অবকাঠামোসহ সব যন্ত্রপাতি স্থাপন করে উদ্যোক্তার কাছে ডেনরি ও ফ্যাটেনিং নগরী কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর করবে। প্রজেক্টসমূহ নগদ মূল্যে অথবা ৫ বছরের ১০টি কিস্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। কিস্তির ক্ষেত্রে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে সম্পাদিত হবে অর্থাৎ একজন উদ্যোক্তা বিনা জামানতে শুধু ব্যক্তিগত গ্যারান্টিতে প্রজেক্টের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন।

নগরীতে গবাদিপশুর খাবার উৎপাদনের জন্য একটি উদ্যোক্তার মাঝে একটি প্লট বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। কারণ গবাদিপশুর খাবার বাহির থেকে ক্রয় করতে হলে সঠিক মানের নাও হতে পারে অথবা সময়মতো গবাদিপশুর খাবার সংগ্রহ করা নাও যেতে পারে। বাইরে থেকে খাবার সংগ্রহ করলে যাতায়াত খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। উদ্যোক্তাদের যাতে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ক্রয় করার জন্য বিভিন্ন স্থানে থেকে সংগ্রহ করতে না হয়; সেজন্য নগরীর মধ্যে একটি প্লটে গবাদিপশুর ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিপণনের জন্য একটি প্লট বরাদ্দ করা প্রয়োজন হবে। দূর-দূরান্ত থেকে ওষুধ ক্রয় করার জন্য পরিবহন খরচ বেশি হয় আর অনেক সময় নি¤œমানের ওষুধ ও পণ্যের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়। বিদেশে দুধ, মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য রফতানি করার জন্য প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ স্থাপন করতে হবে। এজন্য নগরীতে দুধ প্রসেসিংয়ের জন্য একটি প্লট, মাংস প্রসেসিংয়ের জন্য একটি প্লট ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য তিনটি প্লট বরাদ্দ করা যেতে পারে । ডেনরি ও ফ্যাটেনিং শিল্প দুর্গন্ধমুক্ত ও পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নগরীতে একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করার জন্য একটি প্লট একজন উদ্যোক্তার মাঝে বরাদ্দ করতে হবে। ওই উদ্যোক্তা তার নিজস্ব জনবল দিয়ে সব প্লটের গোবর ও উদ্দিষ্টসমূহ সংগ্রহ করে বায়োগ্যাস উৎপাদন করে তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নির্দিষ্ট মূল্যে নগরীর উদ্যোক্তাদের কাছে বিতরণ করবেন ও অবশিষ্ট গোবর জৈব সার হিসেবে চাষিদের কাছে বিক্রয় করবেন। ফলে বিদ্যুৎ ঘাটতি মিটানোসহ নগরীর পরিবেশ দূষণমুক্ত করা সম্ভব হবে।

বেশির ভাগ সময় আমাদের দেশে ডেনরি ও ফ্যাটেনিং ব্যবসায়ীরা মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। তাই ডেনরি ও ফ্যাটেনিং শিল্পনগরীর উদ্যোক্তারা যাতে তাদের উৎপাদিত পণ্যেও সঠিক দাম পায়, সেজন্য নগরীর একটি প্লটে বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা প্রয়োজন। যেখানে খুচরা ও পাইকারি দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য ও মাংস বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে এবং এলাকার ক্ষুদ্র বিক্রয়কারীরা যাতে ক্রয় করতে পারেন, সেজন্য একটি প্লটে আড়ত স্থাপন করা যেতে পারে। ডেনরি ও ফ্যাটেনিং শিল্পনগরী স্থাপন করা সম্ভব হলে দেশে দুধ, মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করে দেশের চাহিদা পূরণসহ বেকার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।

লেখক : প্রকৌশলী ও ট্রেড ইনস্টাক্টর

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close