reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ জানুয়ারি, ২০১৯

এসিড সন্ত্রাসের বিচার কোথায়

পানির ধর্মের সঙ্গে অপরাধ ধর্মের যেন একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পানির ধর্ম নিচের দিকে গড়িয়ে চলা। পাশাপাশি অপরাধের ধর্মও হচ্ছে নিচের দিকে গড়িয়ে চলা। সন্ত্রাস যদি কোনো অপরাধ হয়ে থাকে, তা হলে সেও নিচের দিকেই গড়াবে- এটাই স্বাভাবিক। আমরা বিচার ব্যবস্থাপনার কথা বলছি। অপরাধীরা মনোজগতের বিবেচনায় অনেক দুর্বল। কিন্তু সমাজ ব্যবস্থাপনায় তারা যেকোনো অবস্থানে যেকোনো মানুষের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। কেননা তাদের সুরক্ষায় থাকেন সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি। আর সে কারণেই এসিড সন্ত্রাসের মামলায় অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় অধিকাংশ আসামি খালাস পেয়ে যাচ্ছেন। গত ১৬ বছরে ১৪ আসামির মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। কিন্তু এ যাবৎ একজনেরও সাজা কার্যকর করা হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র ৯ শতাংশ মামলায় অভিযুক্তদের সাজা হয়েছে। পাশাপাশি এসিড সারভাইবার্স ফাউন্ডেশনের (এএসএফ) তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ বছরে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ৩ হাজার ৪০৪টি। ভুক্তভোগী ৩ হাজার ৭৮২ জন। সাজা হয়েছে মাত্র ৩৪৩ জনের।

এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, এসিড সন্ত্রাসে এ পর্যন্ত যে দেড় হাজার নারী ও শিশু প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা কী আক্রান্ত হয়নি? যদি হয়ে থাকে, তা হলে তারা কেন বিচার পেল না। কেন সন্ত্রাসীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকল! সম্ভবত এ প্রশ্নের একটিই উত্তর। যারা ভুক্তভোগী তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ততটা সবল নয়, যতটা সবল তাদের প্রতিপক্ষ। প্রতিপক্ষদের গডফাদার আছে, তাদের নেই। আর সে কারণেই সন্ত্রাস দমনে যাদের কাছে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, কর্মের প্রতি তাদের বিশেষ কারণজনিত উদাসীনতা সমাজে সন্ত্রাসের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। পানি তার ধর্ম অনুযায়ী নিচের দিকে গড়িয়েই চলেছে। গরিবের ওপর নিষ্পেষণ অব্যাহত রয়েছে। সব নিয়মনীতি এবং নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে এসব কর্তাব্যক্তি পরোক্ষে অপরাধীদের অনুকূলেই কাজ করে চলেছেন। এসিড অপরাধ দমন আইন অনুযায়ী ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার কথা উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ আইন মানার কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পর্যবেক্ষকদের মতে, আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোয় এসিড সন্ত্রাসের শিকার নারীদের নিরাপত্তাহীনতা এবং হতাশায় ভুগতে হচ্ছে। তাদের মতে, এমন একটি ঘৃণ্যতম অপরাধের জন্য যদি কেউ শাস্তি না পেয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায়, তা হলে তারা পুনরায় আরো বড়মাপের অপরাধ সংঘটিত করার প্রশ্নে উৎসাহিত হবে; যা সমাজকে কেবল কলুষিতই করবে না, দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে বসবাসের অনুপযুক্ত করে তুলবে; যা কখনোই আমাদের কাম্য হতে পারে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close