মোতাহার হোসেন

  ০৮ জানুয়ারি, ২০১৯

মতামত

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাফল্যের ৭১ বছর

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ৪ জানুয়ারি এই ঐতিহাসিক সংগঠনটি অনেক সাফল্যের স্মারক বহন করে ৭১ বছর অতিক্রম করেছে। বয়সে প্রবীণ হলেও এখনো দেশের প্রয়োজনে তরুণদের মতোই সমান প্রাসঙ্গিক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষা, শান্তি, প্রগতিÑ তিনটি গণভিত্তিকে নির্ধারণ করে এ সংগঠনটি গঠন করেন ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি। সংগঠনটি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠনের এক বছর আগেই গঠন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহান এই নেতা জানতেন, মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। আর ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজই পারে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশিত একটি স্বাধীন ও শোষণমুক্ত দেশ গড়তে। তার এই বিশ্বাসের বাস্তব প্রতিফলন দেখেছেন বিশ্ববাসী ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮ সালের আয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ সালের ছয় দফা বাস্তবায়ন ও ১১ দফা দাবি প্রণয়ন, ৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ৭০ সালের নির্বাচন, ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরাই ছিল সম্মুখ সারির সৈনিক।

পরবর্তীকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এ ছাত্র সংগঠন সাহসি ভূমিকা রেখেছে। একাত্তরে জাতির পিতা যখন মহান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, তখন জীবন বিপণœ হতে পারে জেনেও ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই সর্বপ্রথম অতীতের মতো আন্দোলনের ঝা-া নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। ছাত্রলীগ বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে দিতে জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেন।

আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই জীবন বাজি রেখে রাজপথে প্রতিবাদী মিছিল করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমত কাদির গামার নেতত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পঁচাত্তর-পরবর্তী মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হওয়া বাংলাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আত্মদানের ইতিহাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-পরবর্তী বাংলাদেশে হত্যা ও ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি, গণতন্ত্রের মানসকন্যা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বিশ্ব মানবতার নেত্রী তথা ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রতিটি সংগ্রামেই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে বিগত ‘ওয়ান ইলিভেন’-এর বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মিছিল বের হয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে। মূলত, এক/এগারো-পরবর্তী চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এটি চির সত্য, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস মানেই ছাত্রলীগের ইতিহাস, আন্দোলনে সফলতার ইতিহাস মানেই ছাত্রলীগের ইতিহাস। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গৌরব উজ্জ্বল ঐতিহ্য ও অবদান রয়েছে এ ছাত্র সংগঠনের। বিগত ৭০ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনায় এটা বলা প্রাসঙ্গিক, ছাত্রলীগের সৃষ্টিকাল থেকে শীর্ষপর্যায়ের নেতারা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তাদের এ মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। তা ছাড়া ঘূর্র্ণিঝড়, টর্নেডো, বন্যাসহ দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগে, মানবতার কল্যাণে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজের আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগ।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আর দেশের যোগ্য প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে ছাত্রলীগ। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই ছাত্র সংগঠন অসহায় ও দুস্থদের পাশে বারবার দাঁড়িয়েছে। ফলে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে মানবতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে শান্তি ও মুক্তির বার্তা নিয়ে নিরন্তর ছুটে চলছে। মানবতার ডাকে এই ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা নিজের রক্ত দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকার দৃশ্য একাধিকবার দেখেছে শান্তিকামী বিশ্ব। বিগত ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের সময় হাজার হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছে এ মানবীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর কারণ ছাত্রলীগের রক্তের প্রতিটি ফোঁটায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মানবতাবাদী দর্শন, রয়েছে ত্যাগের মহিমা আর জাতির অধিকার আদায়ে প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার সুদীর্ঘ ইতিহাস। পাশাপাশি অসহায় দুস্থ মানুষের জন্য খাদ্য এবং বস্ত্রহীনের জন্য বস্ত্র তুলে দেওয়ার একাধিক বিরল নজির স্থাপন করেছে।

পত্রিকার খবর অনুযায়ী, দেশরতœ শেখ হাসিনার অন্যতম সফলতা ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সেই বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোয় পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় ৫০,০০০ গাছ লাগায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কারণ, ছাত্রলীগ সূচনালগ্ন থেকেই মানবতার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। অতীতে বাংলাদেশে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের বর্তমান সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় কর্মী তৈরির মাধ্যমে দেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে নিরন্তর কাজ করবেনÑ এই প্রত্যাশা থাকল। পাশাপাশি ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিজেদের দেশ গঠন, শিক্ষাঙ্গনে শান্তি রক্ষা, শিক্ষার সুষ্ঠুু পরিবেশ নিশ্চিত করা, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ঠেকাতে নিজেদের নিয়োজিত রাখবেনÑ এই প্রত্যাশা করছি।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close