পঞ্চানন মল্লিক

  ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

পর্যালোচনা

নির্বাচন : পোস্টার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

নির্বাচন মানে উৎসাহ, নির্বাচন মানে উদ্দীপনা, নির্বাচন মানে উৎসব। আর তা যদি হয় দেশের সর্ববৃহৎ অর্থাৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তবে তো কথাই নেই। রাত দিন প্রার্থী, ভোটার এমনকি যারা এখনো ভোটার হননি তারাও মেতে থাকেন ভোটের আমেজে। হাটে, ঘাটে, মাঠে, দোকানপাট রেস্তোরাঁ, স্টেশন, আদালতপাড়া সর্বত্র চলে নির্বাচনী অলোচনা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন মানুষের নির্বাচনী আগ্রহকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। প্রার্থীদের ঘিরে মানুষের প্রত্যাশাও থাকে অনেক বেশি। এলাকার নির্বাচিত ব্যক্তি সেই এলাকার জনগণের প্রতিনিধি, যিনি সংসদে তাদের পক্ষে কথা বলেন, এলাকার সমস্যার কথা, সুবিধা-অসুবিধার কথা তুলে ধরেন এবং তা নিরসনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যান। জনগণ যেকোনো সমস্যা ও সুযোগ-সুবিধার কথা তার কাছে ব্যক্ত করেন। তিনি এলাকার মানুষের দাবি-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া সংসদে উত্থাপন করেন। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ এনে এলাকার উন্নয়ন করেন। এলাকার মানুষের বিভিন্ন কাজে সাহায্য সহযোগিতা করেন। দেশের মানুষের কাছে তাই এ নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক বেশি। এবারে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল ও তা যাচাই-বাছাইকরণ, প্রতীক বরাদ্দ ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। মহল্লা-পাড়া, গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার, চায়ের দোকান সর্বত্রই চলছে নির্বাচনী আলোচনা। প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। সঙ্গে কর্মী সমর্থকরাও। তারা যার যার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। প্রেসে পোস্টার, লিফলেট ইত্যাদি ছাপার ভিড়। গভীর রাত পর্যন্ত প্রেসে এগুলো ছাপতে দেখা যাচ্ছে। গ্রাম ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ইতোমধ্যে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। দড়িতে ঝুলছে পোস্টার। অনেকে পোস্টারের পাশাপাশি প্যানা, ব্যানার, ফেস্টুন, কাঠ-কাগজ-কাপড়-শোলা বা কসকেট দিয়ে তৈরি প্রতীকও ঝুলিয়েছেন। তবে এসব ব্যাপারে প্রার্থীকে অবশ্যই নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনেই সব করতে হবে। প্রচার-প্রচারণা চালাতে গিয়ে যেন নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে প্রার্থী ও সমর্থকদের। নির্বাচনী প্রচার সরঞ্জামের মধ্যে পোস্টার অন্যতম। পোস্টার ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণা যেন পূর্ণাঙ্গ হয় না বা ঠিকমতো জমে না। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী, সমর্থক, ভোটাররা অপেক্ষা করতে থাকেন। প্রতীক বরাদ্দের দিন প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে কখন পোস্টার নিয়ে আসবে এলাকায়। কারণ, পোস্টারে নিজ নিজ প্রার্থীর নাম ও ছবি, তার নির্বাচনী প্রতীক, প্রার্থী কোন দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ থাকে। পোস্টার দেখলে মানুষ বুঝতে পারেন কোন প্রার্থী কোন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং তিনি কোন দলের প্রার্থী। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয় নির্বাচনী প্রচারণা। প্রার্থীর পক্ষে তার কর্মীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন পোস্টার টাঙাতে। পাড়া-মহল্লা, গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার, এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান, শহর-বন্দর, চায়ের দোকানের আশপাশ, রাস্তাঘাট কোনো জায়গা বাদ থাকে না পোস্টার টাঙাতে। তবে বর্তমান নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা মতে দড়িতে ঝুলিয়ে ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে কোনো কিছুতে পোস্টার সাঁটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আচরণ বিধিমালা ১৯৯৬-এর ৫ বিধিতে বলা হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টার দেশি কাগজে সাদাকালো রঙের হতে হবে এবং এর আয়তন কোনো অবস্থাতেই বাইশ ইঞ্চি ইন্টু আঠারো ইঞ্চি পরিমাপের অধিক হতে পারবে না। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণা হিসেবে সকল প্রকার দেয়াল লিখন থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। পোস্টার ছাপার পর অনেক পোস্টার পাশাপাশি দড়িতে ঝুলিয়ে টাঙানো হয়। রাস্তা বা হাট-বাজারের দৃশ্যমান স্থানে এগুলো ঝুলিয়ে রাখা হয় যাতে সহজে মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়। পোস্টার টাঙানোর নিয়ম-কানুন বর্তমানে পরিবর্তিত হলেও পোস্টার ছাপার ধরন সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। আগে যখন কোনো কিছুতে সেঁটে পোস্টার মারা হতো তখন পোস্টার ছাপা হতো কাগজের এক পিঠে। অন্য পিঠে আঠা দিয়ে দেয়াল বা অন্য কিছুতে লাগানো হতো। এখন ঝুলালে পোস্টারের উভয় পিঠই দৃশ্যমান হয় তবে ছাপা হয় সেই আগের মতো এক পিঠে। অপর পিঠ থাকে সাদা। যাই হোক, ছাপা পোস্টার টাঙানো নিয়ে যেন কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা না হয় সেদিকে আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। পোস্টার এমনভাবে টাঙাতে হবে যাতে রাস্তা-ঘাটে মানুষজন ও যানবাহন চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি না হয় বা এলাকার সার্বিক পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা বিঘিœত না হয়। প্রচারণার ক্ষেত্রে সব প্রার্থীর সমান অধিকার থাকে তাই কোনো প্রার্থীর টাঙানো পোস্টার বিনষ্ট, পোস্টারের কোনো অক্ষর বা ছবি বিকৃত করা বা পোস্টারের ওপর পোস্টার ঝুলানো বাঞ্ছনীয় নয়। নির্বাচনে আমাদের অবশ্যই সহনশীলতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। নির্বাচন কাজে ইসিকে আমাদের সহায়তা করতে হবে। প্রার্থী নির্বাচনে ভোটারদের অবশ্যই বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে এবার যারা নির্বাচিত হবেন তারাই আগামী ৫ বছর তাদের নেতৃত্ব দেবেন, তাদের দেখভাল করবেন এবং এলাকার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবেন। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাই সৎ, যোগ্য, দক্ষ, আদর্শ, ত্যাগী, দেশপ্রেমিক প্রার্থী নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।

নির্বাচন নিয়ে সবাই উৎসবে মাতলেও ইসির ঘাড়ে দায়িত্ব অনেক। নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ ও অবাধ করার মূল দায়িত্ব তাদের। মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া থেকে শুরু করে তা যাচাই-বাছাই, প্রতীক বরাদ্দ, প্রতীক বরাদ্দের আগে ও পরে কেউ নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছেন কিনা, কোথাও কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে কিনা তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখে, ভোটের দিন সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পারলেই ইসির সাফল্য। তবে নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে আমাদের সচেতনতা ও আন্তরিকতাও খুব প্রয়োজন। বাদ বাকি কাজ ইসি করবে। আমরা আশা করছি এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশের মধ্য দিয়ে নির্বিঘেœ সম্পন্ন হবে এবং তা ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

লেখক : কবি ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close