দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ৩০ জুলাই, ২০১৮

মতামত

প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত হোক

কাজির গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেইÑএটি শুধু প্রবচন নয়, আমাদের দেশের প্রায় সরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বাস্তবতা। বড়পুকুরিয়া কোল ইয়ার্ডের দায়িত্বশীলরা এ ক্ষেত্রে যে পিছিয়ে নেই, সেটি প্রমাণিত হয়েছে কোল ইয়ার্ডের ১ লাখ ১৬ হাজার টন মজুদ কয়লার হদিস না থাকার ঘটনায়। কাগজে-কলমে এ কয়লাখনির ইয়ার্ডে ১ লাখ ৩০ হাজার টন কয়লা থাকার কথা থাকলেও, আছে মাত্র ১৪ হাজার টন। বাকি কয়লা গেছে, তা উদ্ঘাটনে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্মর্তব্য, ২০০৫ সালে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। দীর্ঘ ১৩ বছরে কয়লা উত্তোলন হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টন। বর্তমানে কোল ইয়ার্ডে কয়লার মজুদ থাকার কথা ১ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু বাস্তবে মজুদ পাওয়া গেছে ১৪ হাজার টনের মতো। ১ লাখ ১৬ হাজার টনের মতো কয়লার কোনো হদিসই নেই। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘদিন থেকে একটি চক্র চুরি করে খোলাবাজারে এসব কয়লা বিক্রি করে দিয়েছে। দেশের মানুষ যে সম্পত্তির মালিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা সুরক্ষার বদলে এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই তত্ত্ব অনুসরণ করে আত্মসাৎ করেছে।

এদিকে কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে। বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে তিনটি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে এক নম্বর ইউনিটটি মেরামতের জন্য বন্ধ রয়েছে। চালু দুটি ইউনিট দিয়ে গত জুন মাসের প্রথম দিকে গড়ে ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছিল। কয়লাখনির উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পরদিন অর্থাৎ ১৭ জুন এ দুই ইউনিট থেকে ৩৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এ দুটি ইউনিট চালাতে দিনে সাড়ে তিন হাজার টন কয়লা লাগে। বর্তমানে যতটুকু মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে একটি ইউনিট চালালেও আর দু-তিন দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। নতুন করে কয়লা উত্তোলন শুরু হতে পারে আগস্টের শেষে। ফলে সে পর্যন্ত কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ থাকবে। কয়লা চোরদের জন্য দেশের শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে। লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি ভোগ করতে হবে সাধারণ গ্রাহকদের। আমরা আশা করব, পেট্রোবাংলা শুধু তদন্ত কমিটি গঠন নয়, কয়লা চুরির সঙ্গে যুক্ত সবাইকে চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কয়লা চুরির সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের বিচারের সম্মুখীন করা কর্তৃপক্ষের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি বা জালিয়াতির ঘটনা দেশে নতুন নয়। এসব কারণে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তৈরি করা বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ধারণা-সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো নিচের দিকেই রয়েছে। দুর্নীতিবাজরা এতটাই বেপরোয়া যে, কোনো কিছুকেই তারা পরোয়া করে না। সর্বশেষ তেমনি এক মহাদুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে।

ধারণা করা যায়, এ কাজটি নিঃসন্দেহে তারাই করেছেন, যারা খনির মূল দায়িত্বে ছিলেন। কারণ সেখান থেকে কয়লা পরিবহন ট্রাকের মাধ্যমেই করা সম্ভব এবং লাখ টনের বেশি কয়লা সরাতে যে পরিমাণ ট্রাকের প্রয়োজন হয়েছে, তা গোপনে সরানো প্রায় অসম্ভব। অর্থাৎ প্রকাশ্যেই তা করা হয়েছে এবং খনির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জ্ঞাতসারেই ঘটনা ঘটেছে। তাদের সাহসের তারিফ না করে পারা যায় না। আর তারা এই সাহস পায় সাজা পাওয়ার ভয় কম থাকা বা প্রায় না থাকার কারণে। এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া দুর্নীতির প্রতিটি ঘটনা যদি সঠিকভাবে মোকাবিলা করা হতো, অপরাধীরা দ্রুত উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আসত, তাহলে নতুন করে অপরাধ সংঘটনের হার অনেকটাই কমে যেত।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির এই দুর্নীতি দ্রুততম সময়ে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। বিচারের কাজটিও যথাসম্ভব দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি অনেকটাই কমে যাবে।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist