লেখাপড়া করে যে...
একসময় বলা হতো, ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’। সম্ভবত সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে বাক্যটির শরীরে কিছু রদবদল ঘটেছে। এখন বলা হচ্ছে, ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িচাপা পড়ে সে’।
কোথাও এমন ঘটনা ঘটেছে কি না জানা না থাকলেও বেকারত্বের জাঁতাকলের নিচে চাপা পড়ে যে লাখ লাখ শিক্ষিত মানুষের জীবন আজ ওষ্ঠাগতÑবিষয়টি দিবালোকের মতো পরিষ্কার এবং সত্য। সম্প্রতি প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে সারা দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। তারা সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কাজের সুযোগ পান না। এই বেকারদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার তরুণ-তরুণী উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর। পাস করার পরও তারা চাকরি পাচ্ছেন না। অথচ বিপরীতে যারা শিক্ষিত নন, তাদের বেকারত্বের সংখ্যা তুলনামূলক বিচারে অনেক কম। মাত্র ১১ দশমিক ২ শতাংশ, যেখানে শিক্ষিতদের ৩৯ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের মতে, এখানে শিক্ষিতরা যেকোনো কাজ করায় আগ্রহী নন। মেশিন চালানোর মতো কাজে তাদের অনীহা আছে। তাদের শিক্ষা আছে, কিন্তু মানসম্পন্ন নয়। কোনো কাজের দক্ষতাও নেই। চাকরিদাতারা এমন লোকদের চাকরি দিয়ে বোঝা বাড়াতেও চান না। আবার একই চাকরিদাতারা বিদেশ থেকেও লোক এনে কাজ করাচ্ছেন। অর্থাৎ চাহিদা আছে, কিন্তু দেশে দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। আর এই দক্ষ লোকের চাহিদা পূরণ করতে হলে শিক্ষার মানকে উন্নত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সুতরাং, কারণ নির্দিষ্ট করতে হলে শিক্ষাব্যবস্থার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার কথাই ভাবতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন অনেকেই। তাদের মতে, শিক্ষিতের হার বাড়ানোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার দিকে মনোযোগী হতে হবে। অন্যথায় একসময় শিক্ষিতের হার আকাশছোঁয়া অবস্থায় গেলেও চাকরি করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন লোক খুঁজে পাওয়া ভার হবে, যা একটি দেশ ও জাতির জন্য কখনোই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না।
আমরা মনে করি, যা করার এ মুহূর্ত থেকেই তা করতে হবে। দেশকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে সরিয়ে আনতে হলে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের কথা ভাবতে হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা আশা করব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে বিষষয়টি বিবেচনা করবে।
"