শামীম শিকদার

  ২৬ মার্চ, ২০১৮

স্বাস্থ্য

যক্ষ্মা ও কিছু কথা

বাংলাদেশে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সংক্রামক ব্যাধির মধ্যে যক্ষ্মা বা টিউবারকিউলোসিস (টিবি) অন্যতম একটি। যেকোনো বয়সে যক্ষ্মা হতে পারে, তবে ১৫-৫৪ বছর বয়সী মানুষ যক্ষ্মায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস জীবাণু দিয়ে যক্ষ্মা রোগ হয়। যক্ষ্মা রোগ নিয়ে সচেতনতার জন্য প্রতি বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালন করা হয়। দেশে যক্ষ্মা চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য আশাব্যঞ্জক হলেও ডায়াগনসিস-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর নিয়ন্ত্রণ এখনো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল টিবি রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে বছরে প্রতি লাখে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে ২২১ জন, যার মধ্যে মৃত্যু হচ্ছে ৪০ জনের। বাংলাদেশে এখনো যক্ষ্মা একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে একজন যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। বর্তমানে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনগণ যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত। যেহেতু যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ, তাই মাইকোব্যাটেরিয়াম টিউবার-কুলোসিস নামক অতি সূক্ষ্ম জীবাণুর মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়। প্রধানত ফুসফুসই যক্ষ্মা জীবাণু দ্বারা সর্বাধিক আক্রান্ত হয়। যক্ষ্মা জীবাণু দেহের অন্য অংশকেও আক্রান্ত করে যক্ষ্মা রোগ তৈরি করতে পারে। ফুসফুসের যক্ষ্মায় আক্রান্ত কফে জীবাণুযুক্ত রোগী যদি বিনা চিকিৎসায় থাকে, তবে বছরে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন লোককে যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত করে। জীবাণু দ্বারা সব সংক্রমিত ব্যক্তিই যক্ষ্মা রোগে ভুগে না। যেসব ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারাই প্রধানত যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়। তাই প্রতিটি রোগীর দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শেষ করা জাতীয়, আঞ্চলিক ও বিশ্বের যক্ষ্মা প্রতিরোধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বিশ্বে প্রতি বছর ৮ দশমিক ৮ মিলিয়নের বেশি লোক যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর প্রতি বছর ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন লোক যক্ষ্মায় মারা যাচ্ছে। ২২টি দেশে বিশ্বের মোট যক্ষ্মা রোগীর শতকরা ৮০ ভাগ বাস করে। তার মধ্যে মোট যক্ষ্মা রোগীর শতকরা ৪০ ভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে বাস করে।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিশেষজ্ঞদের মতে, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে এ সময়ে প্রধান চ্যালেঞ্জ ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর যক্ষ্মা। এমডিআর যক্ষ্মার অন্যতম প্রধান কারণ যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর অনিয়মিত ওষুধ সেবন। এমডিআর যক্ষ্মার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশি। এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি, জটিল ও ব্যয়বহুল। এ ছাড়া যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে অন্য চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে শিশু যক্ষ্মা শনাক্তকরণে জটিলতা, নগরে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা ও এইচআইভি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ। শনাক্তকরণে জটিলতা শিশু যক্ষ্মার ক্ষেত্রে এখনো প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া সংক্রমণের ইতিহাস সঠিকভাবে জানা যায় না। অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিকল থাকে এক্স-রে মেশিন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যক্ষ্মা শনাক্ত যন্ত্র জিন এক্সপার্টের অভাব রয়েছে। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা থাকে না। জনসচেতনতারও অনেক অভাব লক্ষ করা যায়। এসব কারণে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শিশু যক্ষ্মা রোগীর শনাক্তের হার অনেক কম। তবে অধিক জনসংখ্যা ও বসতির কারণে ঢাকায় শিশু যক্ষ্মা রোগী তুলনামূলক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি জানায়, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে অন্যান্য যক্ষ্মারোগীসহ শিশু যক্ষ্মা রোগীর শনাক্তকরণ বেড়েছে। যক্ষ্মা শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এ সংখ্যা বেশি চিহ্নিত হয়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে শিশু যক্ষ্মা রোগী ছিল ৮,১০৪ জন, সেখানে ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯,২৯১ জনে। শতকরা হিসাবে ২০১৬ সালে শিশু যক্ষ্মা শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৫ সালে এই হার ছিল ৪ শতাংশ। শিশুসহ ২০১৬ সালে দেশে শনাক্তকৃত মোট যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ২,২৩,৯২২ জন। এর মধ্যে ওষুধ প্রতিরোধী বা এমডিআর যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা ৯৭০০ জন। প্রতি বছর প্রতি লাখে নতুন যক্ষ্মারোগী শনাক্ত হচ্ছে ২২৫ জন। যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশ ও প্রকোপের হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনার জন্য, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে ব্র্যাকসহ ২৭টি বেসরকারি সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে এনটিপির মাধ্যমে দেশে ২ লাখ ৪৪ হাজার ২০১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে এবং চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু যক্ষ্মারোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ১৮৯ জন। দেশে এখন চরমভাবে ওষুধ প্রতিরোধী রোগীর সংখ্যা ১২ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে প্রতি বছর প্রতি লাখে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে ২২১ জন, মৃত্যু হচ্ছে ৪০ জনের। এ ঝুঁকি মোকাবিলা ও যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দেশে যক্ষ্মা চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য আশাব্যঞ্জক হলেও ডায়াগনসিস-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর নিয়ন্ত্রণ এখনো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। এখনো এ ধরনের রোগীদের আনুমানিক ৮০ শতাংশই শনাক্তের বাইরে থাকছেন। যার ফলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও সচেতন হতে হবে।

লেখক : সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist