দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ১৬ মার্চ, ২০১৮

উন্নয়ন

অর্থনীতির প্রাণভোমরা

বিদেশে বাংলাদেশের এক কোটিরও বেশি লোক কর্মরত। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে প্রাণভোমরা। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় বাঘা বাঘা দেশগুলোর অর্থনীতি মার খেলেও বাংলাদেশ বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার সক্ষমতা দেখিয়েছে রেমিট্যান্স আয়ের বদৌলতে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা দেশের জন্য শুধু অর্থই বয়ে আনছেন না, দক্ষ জাতি গঠনেও ভূমিকা রাখছেন। অদক্ষ যেসব মানুষ বিদেশে কাজের জন্য যাচ্ছেন তারা দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হচ্ছেন কালক্রমে। কাজ শেষে দেশে ফিরে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছেন বিভিন্নভাবে।

ঘন জনবসতির ক্ষুদ্র আয়তনের এই দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। স্বভাবতই জনশক্তি রফতানি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আশার আলো হয়ে বিরাজ করছে। এ খাতের আয় বাড়াতে দক্ষ জনশক্তি রফতানির ওপর জোর দিতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারাও অনেক সময় চাহিদা অনুযায়ী দেশি লোক না পেয়ে ভিনদেশিদের কাজ দিতে বাধ্য হন। বক্তারা জনশক্তি রফতানির বড় বাজারগুলোর সঙ্গে দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। অভিবাসন ব্যয় কিভাবে কমানো যায়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি রফতানিকারকদের প্রতিনিধিত্বকারী বায়রার মধ্যে যৌথ কমিটি গড়ার পরামর্শও দিয়েছেন। বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীদের ওপর নির্যাতনের বিষয় নিয়েও তারা আলোকপাত করেছেন। জনশক্তি রফতানি খাতে নানা সমস্যা এবং অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ থাকলেও স্বীকার করতেই হবে, শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এটি এমন একটি খাত, যা দেশের অর্থনীতিকে জিইয়ে রেখেছে। কর্মসংস্থানে এককভাবে বৃহত্তর ভূমিকা রাখছে। এ বিবেচনাতেই এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সব পক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে।

বিদেশে কর্মরত প্রায় ৮০ লাখ কর্মজীবী মানুষ পরিবার-পরিজনের জন্য যে অর্থ পাঠান, তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর শক্তি জোগাচ্ছে। বিদেশে বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার হিসেবে পরিগণিত সৌদি আরব। এর পরের অবস্থান ছিল মালয়েশিয়া ও আরব আমিরাত। ছয়-সাত বছর ধরে এসব দেশের জনশক্তি রফতানিতে ধস নেমেছে। প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রধান তিন শ্রমবাজারে জনশক্তি রফতানি।

১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ জনশক্তি রফতানি শুরুর পর এসব দেশে গত বছরই সর্বোচ্চ জনশক্তি রফতানি হয়েছে। জনশক্তি রফতানি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্ফীত করাই শুধু নয়, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও অবদান রাখছে। বিদেশ ফেরত শ্রমজীবীরা দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। আগামী দিনের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। এ ধারা অব্যাহত রাখতে জনশক্তি রফতানিতে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার যে প্রয়াস চলছে তা-ও অব্যাহত রাখতে হবে।

আমি মনে করি, প্রতিটি মানুষই তার দেশের জন্য সম্পদ। কারণ, মানুষের শ্রম ও মেধায় একটি দেশ বা জাতির অগ্রগতি নিশ্চিত হয়। আমাদের দেশের অভ্যন্তরে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, তাই গুরুত্ব এসেছে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার। কারণ, একজন দক্ষ-প্রশিক্ষিত মানুষ আত্মকর্মসংস্থানের পথটাও নিজেরাই অনেকটা বাতলে দিতে পারেন, যদি যথাযথ রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য মেলে। শিক্ষিত কিংবা দক্ষ জনশক্তি একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে নানারকমভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। নৈতিক মূল্যবোধের যে অবক্ষয় এই সমাজে ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে এ থেকে মুক্তির লক্ষ্যেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি। সমাজ আলোকিত হয় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, জ্ঞানবান মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। শুধু দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনেই নয়, বর্তমান বিকাশমান বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও এর কোনো বিকল্প নেই। উদ্ভাবনী শক্তি ও বিজ্ঞান প্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে শিক্ষায় শিক্ষিতদের হাত ধরেই দেশ-জাতি বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। এজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণের পথ কুসুমাস্তীর্ণ করা, একই সঙ্গে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের পথ প্রশস্ত করা।

বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় শিক্ষিত ও দক্ষতাসম্পন্নদের কদর ক্রমেই বাড়ছে। সব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের দ্বার অবারিত করা যাবে এমনটি সহজ না হলেও শিক্ষিত দক্ষতাসম্পন্নরা যাতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ লাভ করতে পারেন, এ বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মক্ষম হাতের অধিকারী কিংবা সৃজনশীলরা যাতে অলস পড়ে না থাকেন তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। বিপুল সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যেসব কারণে এখানে এগিয়ে যাওয়ার যে প্রতিকূলতা প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর দাঁড়িয়ে আছে, তা-ও ভেঙে ফেলতে হবে।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist