ক্যাম্পাস ডেস্ক

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

চীনে উচ্চশিক্ষা

বর্তমান সময়ে চীন পৃথিবীর দ্রুত অগ্রসরমান দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। চীনারা মনে করে তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই; যে কারণে তারা শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করছে। চীনে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমান বৈশ্বিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি এবং বিশেষত শিল্পায়নের সব ক্ষেত্রকে বিবেচনায় এনে কোর্স প্রণয়ন করা হয়। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে চীনের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থীকে আকর্ষণ করছে। বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী উচ্চ শিক্ষার্থে চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হচ্ছে। চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের করণীয় সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হলো :

প্রথমত করণীয়

চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য অসংখ্য প্রোগ্রাম অফার করে থাকে। তাই একজন আগ্রহী শিক্ষার্থীর প্রথম কাজ হবে ইন্টারনেটে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের প্রোগ্রামগুলো সম্পর্কে জেনে নিয়ে তার পছন্দের প্রোগ্রামগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা। অতঃপর তাকে চীনের সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খোঁজ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, যত বেশি সংখ্যক ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যায় ততই ভালো, কারণ এতে একজন শিক্ষার্থীর সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

আবেদনপত্রের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে তার পছন্দকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফরম ডাউনলোড করে পূরণ করতে হবে। শিক্ষার্থী ইচ্ছা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানায় ই-মেইল করে আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র তার ঠিকানায় পাঠানোর অনুরোধ করতে পারে। আবেদন ফরম অত্যন্ত যতেœর সঙ্গে পূরণ করতে হবে এবং ঘষামাজা করা চলবে না। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ই আবেদনপত্র প্রসেস করার জন্য একটি নির্ধারিত ফি নিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে এই ফি ৩৮০ ইউয়ান থেকে ৭৭০ ইউয়ান পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবেদন ফি অগ্রিম পরিশোধ করে তার রসিদটি আবেদন ফরমের ডকুমেন্টের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিতে হয়।

যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন : চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবেদনপত্রের যেসব কাগজপত্র পাঠাতে হয় সেগুলো হলো-এইএসকে সনদ (আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য ন্যূনতম ব্র্যান্ড স্কোর ৪-৬, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য ৫-৮) যা চাইনিজ ভাষায় আপনার দক্ষতা প্রমাণ করবে। যেসব আবেদনকারী ইংরেজি ভাষাভাষী নন, তাদের TOEFL বা IELTS-এর প্রয়োজনীয় স্কোর থাকতে হবে এবং এর সনদ সংযুক্ত করতে হবে। এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হতে চাইলে GRE বা GMAT-এর স্কোর শিট সংযুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন অধ্যাপকের একাডেমিক সুপারিশপত্র প্রয়োজন যেখানে ফোন নম্বর, ই-মেইল অ্যাড্রেস ইত্যাদি সবকিছু উল্লেখ করা থাকবে।

প্রার্থীর একটি পূর্ণাঙ্গ বায়োডাটা সংযুক্ত করতে হবে। ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি। তিন কপি সাম্প্রতিক সময়ে তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি সংযুক্ত করতে হবে। আর দিতে হবে পাসপোর্টের ফটোকপি, আবেদন ফি জমা দেওয়ার রসিদ।

কোন কোন পর্যায়ে চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায়?

আন্ডারগ্র্যাজুয়েট : চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চার বছরের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম চালু আছে। এই প্রোগ্রাম সাধারণ শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা হতে পারে। এই চার বছরের অধ্যয়ন শেষে আপনি ব্যাচেলর ডিগ্রি পাবেন কি না তা নির্ভর করবে আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ভর্তি হয়েছেন এবং কোন কোর্সে ভর্তি হয়েছেন তার ওপর। মনে রাখা প্রয়োজন ভালো মানের চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়া অত্যন্ত কঠিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট : চীনের বেশ কিছু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাচেলর পর্যায়ে সফল শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অফার করে থাকে। মাস্টার্সের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে তিন বছর অধ্যয়ন করতে হয় এবং পিএইচডির জন্য মাস্টার্সের পর আরও তিন বছর অধ্যয়ন করতে হয়। চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি ছাত্রছাত্রীর কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় শীর্ষস্থানীয় বিষয়গুলো হলো ক্লিনিক্যাল মেডিসিন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটারেচার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, স্থাপত্য বিদ্যা, কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যারোনটিকস ও ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্স অ্যান্ড ট্রেড। এসব বিষয় যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে ভালো পড়ানো হয় তা হলোÑ ইউহান ইউনিভার্সিটি, হুয়াজং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চায়না ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনিভার্সিটি, নানচ্যাং ইউনিভার্সিটি, দালিয়ান মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, জিয়াংকু ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব ফিন্যান্স অ্যান্ড ইকোনমিক্স, নানকাই ইউনিভার্সিটি।

ভিসার আবেদন : বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য স্টুডেন্ট ভিসাপ্রাপ্তি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। চীনের ক্ষেত্রেও এটা ব্যতিক্রম নয়। বিদেশিদের চীন সরকার যে বিভিন্ন ধরনের ভিসা প্রদান করে থাকে, তার মধ্যে এক্স (X) ক্যাটাগরির ভিসা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা হিসেবে দেওয়া হয়। যেকোনো ছাত্রছাত্রী, যারা ছয় মাস বা তদূর্ধ্ব সময়ের জন্য চীনে পড়াশোনা করতে যাবেন তাদের জন্য তাদের নিকটস্থ চায়না অ্যাম্বাসি থেকে (X) ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। আপনি চীনে পৌঁছার আনুমানিক তারিখের এক মাস পূর্বে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। কাউন্সেলর অফিস থেকে আপনাকে ভিসার আবেদন ফরমের সঙ্গে যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে বলা হবে যেসব কাগজপত্র আপনার যোগ্যতা প্রমাণ করবে। আবেদন ফরম অবশ্যই যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। ঘষামাজা করা যাবে না। প্রার্থীর বয়স ১৮ বছরের কম হলে পিতা-মাতা তার পক্ষে স্বাক্ষর করতে পারেন। আবেদন ফর্ম অবশ্যই সশরীরে প্রার্থীর নিজ দেশের চীনা অ্যাম্বাসি অথবা নিকটস্থ কনস্যুলেট জেনারেলের অফিসে জমা দিতে হবে। কোনোভাবেই ডাকযোগে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হবে না।প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো হলো- মূল পাসপোর্ট (ন্যূনতম ছয় মাস মেয়াদ থাকতে হবে), পূরণকৃত ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম, এক কপি সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ফটো, শারীরিক যোগ্যতার প্রমাণপত্র, চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত “Visa Application Form For International Students” (JW201 or JW 202)-এর একটি মূলকপি এবং একটি ফটোকপি, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন সেখান থেকে ইস্যুকৃত “Letter of Admission”-এর একটি মূলকপি ও একটি ফটোকপি, আপনি যদি ইতোপূর্বে কখনো চীনের ভিসা পেয়ে থাকেন, তবে সর্বেশেষ ভিসার কপি, শিক্ষার্থীর সর্বেশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি কভার লেটার, পাসপোর্টের “Personal Data Page”-এর ফটোকপি। এভাবে একজন শিক্ষার্থী উপরোক্ত প্রক্রিয়াগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করে ভালো মানের কোনো চীনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য নির্বাচিত হতে পারেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist