reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ মে, ২০১৮

এইউবিতে আন্তধর্মীয় সংলাপ

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এইউবি) আয়েশা অডিটোরিয়ামে এইউবি ও রোটারি ক্লাব অব ঢাকা স্কলারসের Scholars যৌথ উদ্যোগে ২১ সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তধর্মীয় সংলাপ। সংলাপের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মানবসেবার গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপস্থাপন। এইউবির রেজিস্ট্রার ড. মো. শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে পাঁচটি স্বতন্ত্র ধর্মের পন্ডিতরা উপস্থিত ছিলেন এবং তারা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থের আলোকে মানবসেবার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেন।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ও রোটারি ক্লাব অব ঢাকা স্কলারসের চার্টার প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. আবুল হাসান এম সাদেক।

ইসলাম ধর্মের পক্ষে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ড. মীর মনজুর মাহমুদ, সনাতন হিন্দু ধর্মের পক্ষে প্রফেসর হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, খ্রিস্টান ধর্মের পক্ষে রেভারেন্ট মার্টিন অধিকারী, বৌদ্ধ ধর্মের পক্ষে অশিন জিনা রাক্ষিতা এবং শিখ ধর্মের পক্ষে আজাদ উইন্ডার সিং প্রমুখ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন রোটারি ক্লাব অব ঢাকা স্কলারসের সেক্রেটারি অধ্যাপক জাকির হোসাইন।

এইউবিতে আন্তধর্মীয় সংলাপ ইসলাম ধর্মের পক্ষে ‘প্রফেসর ড. মীর মনজুর মাহমুদ’ কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিশদ আলোচনা পেশ করেন। তিনি বলেন, সমগ্র কোরআন এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনীজুড়ে মানবসেবার যেসব উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়, তা বলে শেষ করার মতো নয়। তিনি সুরা বাকারার ১৭৭ নম্বর আয়াত, সুরা দাহরের ৮ নম্বর আয়াত, সুরা নিসা, সুরা আসর, সুরা আয্ যারিয়াত এবং সহিহ বোখারি, মুসলিমসহ ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ থেকে রেফারেন্স উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘মানবসেবার জন্য বিত্তবান হতে হয় না; প্রয়োজন বিশুদ্ধ মানসিকতা এবং মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা।’ তা ছাড়া ধনীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ধনীর সম্পদের মধ্যে দারিদ্র্যের অধিকার রয়েছে; এ অধিকার আদায় করা না হলে দুনিয়া ও আখিরাতে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ ছাড়া তিনি মদিনা রাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, রাসুল (সা.) মদিনার মানুষের অর্থনৈতিক সংকট দূরীকরণে দুই ধরনের কাজ করেছেন, যার দরুন দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে জাকাত নেওয়ার মতো কোনো লোক পাওয়া যায়নি। তা হলোÑ১. মানসিক দারিদ্র্যদূরীকরণ এবং ২. আর্থিক দারিদ্র্যদূরীকরণ। মানসিক ব্যাপারটা এ রকম যে, মানুষকে রাসুল (সা.) বোঝাতে সক্ষম হন যে, (ইয়াদুল উলয়া খায়রুম মিন ইয়াদিস সুফলা) অর্থাৎ,‘দান গ্রহীতার হাতের চেয়ে দাতার হাত উত্তম’। আর আর্থিক দারিদ্র্যদূরীকরণের জন্য তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে জাকাত উত্তোলন ও যথাযথ বণ্টন, সদকা, উশর এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন।

খ্রিস্টান ধর্মের পক্ষে ‘রেভারেন্ট মার্টিন অধিকারী’ বলেন, খ্রিষ্টীয় ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেলের অনেক অংশজুড়ে রয়েছে মানবতা ও ন্যায্যতার বিষয়ে সুস্পষ্ট শিক্ষা। হিতোপদেশে (মেশাল) বলা আছে, ‘ঈশ্বর বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠানের চেয়ে মূল্য দেন ন্যায্যতাকে : ধার্মিকতা ও ন্যায়ের অনুষ্ঠান প্রভুর কাছে কোরবানি অপেক্ষা শ্রেয় (২১:৩)। তিনি হিতোপদেশের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো বলেন, ‘তুমি বোবাদিগের জন্য তোমার মুখ খোল, অনাথ সবার জন্য খোল, ন্যায়বিচার করো, দুঃখী-দারিদ্র্যের জন্য বিচার করো (হিতোপদেশ ৩১ : ৮-৯)। সমাজে সম্পদ ও সুযোগের ন্যায্য বণ্টনের অভাবে এক শ্রেণির মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ে। অন্যদিকে অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্যের কশাঘাতে সীমাহীন দুঃখ-কষ্টে জীবনযাপনে বাধ্য হয়। এ সমস্যার সমাধানের জন্য সমাজের সব ক্ষেত্রে সুনীতি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। আর আমরা ধর্মের বাণী সঠিকভাবে পালন করি না বলেই আজ মাত্র ১০% মানুষ পৃথিবীর ৯০% সম্পদ ভোগ করে আর অন্যদিকে ৯০% মানুষ বাকি ১০% সম্পদের ওপর নির্ভর করে কোনো মতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে।

সনাতন হিন্দু ধর্মের পক্ষে ‘প্রফেসর হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস’ ধর্ম বিশ্বাসে মানবসেবার গুরুত্ব উপস্থাপন করেন এভাবে-‘আমাদের সব ধর্মের উৎস একই, গন্তব্য একই, তবে নামে-দামে কেবল মত ও পথের ভিন্নতা।’ তিনি মহাভারত, বেদ, পুরাণ, মনু, ঈশপ, স্বামী বিবেকানন্দ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রেফারেন্স ব্যবহার করে বলেন, সব যুগে নবী-রাসুল ও সাধকদের আগমন ঘটেছে মনুষ্যত্বের বিকাশের জন্য। মানবসেবার পূর্বশর্ত হচ্ছে চিত্তকে পূতঃপবিত্রকরণ। তিনি আরো বলেন, ‘জন্মে কোনো দিন মানুষ ব্রাহ্মণ হয় না, কর্মেই তার বিকাশ’-এভাবে তিনি মানবসেবার জয়গান গেয়েছেন।

বৌদ্ধ ধর্মের পক্ষে ‘অশিন জিনা রাক্ষিতা’ বলেন, বৌদ্ধ ধর্ম একটি শান্তির ধর্ম। গৌতম বুদ্ধ ভোগবাসনা চরিতার্থকরণ এবং তার অঞ্চলে প্রচলিত শ্রমণ আন্দোলনের আদর্শ অনুসারে কঠোর তপস্যার মধ্যে মধ্যপন্থা শিক্ষা দিয়েছিলেন। তৎকালে বুদ্ধের যে কথাগুলো সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করেছিল, তা হচ্ছে মেত্তা, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা। মেত্তা বা মৈত্রী শব্দটির অর্থ হচ্ছে সবাইকে সমভাবে ভালোবাসা, যে ভালোবাসা মা তার একমাত্র সন্তানকে দিতে পারে। শিষ্য সংঘের প্রতি বুদ্ধের নির্দেশ ছিল মেত্তা বা মৈত্রী যেন মানুষের মনে কখনো ক্ষণস্থায়ী আবেগে পরিণত না হয়। এটা হবে মানুষের প্রতি মানুষের মনের স্থায়ী আবেদন। এই মন সর্বক্ষণ অনুরণিত হবে মানুষের সেবা ও শুভ চিন্তায়। এর প্রকাশ প্রতিফলিত হবে মানুষের সব কথায় এবং কাজে। এ অবস্থায় মানুষের মন যখন রঞ্জিত হয়, তখন সমাজের মঙ্গল না হয়ে পারে না। বুদ্ধের মতে, মেত্তা বা মৈত্রী মানুষের মনের নৈতিক চেতনা ছাড়া অন্য কিছু নয়। এই চেতনার দ্বারা যারা অনুপ্রাণিত হবে, তাদের পক্ষে পরের হিত চিন্তা ছাড়া অন্য চিন্তা সম্ভব নয়। এতে মন থেকে রাগ-দ্বেষ দূরীভূত হয়ে জীবনে দেখা দেয় প্রশান্ত সূর্যের স্নিগ্ধ আভা। এভাবে তিনি মানবসেবায় বুদ্ধের উপদেশ তুলে ধরেন।

শিখ ধর্মের পক্ষে ‘আজাদ উইন্ডার সিং’ শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শিখ ধর্মে মানবসেবার কথা রয়েছে। মানবসেবা একটি মহৎ কাজ এবং মহৎ চিত্তের মানুষরাই এ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে।

অনুষ্ঠিত আন্তধর্মীয় সংলাপের আলোকে আমরা বুঝতে সক্ষম হই, পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন গ্রন্থ, ধর্মগুরু ও অনুসারী থাকলে ও একটি বিষয়ে সব ধর্ম অভিন্ন মত পোষণ করে এবং সব ধর্মে মানবতার জয়গান গেয়েছে। সুতরাং, আজকের বিশ্বে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে একটি ম্লোগানই উচ্ছারিত হোক-‘ধর্ম যার যার; মানবসেবা সবার’। এতে বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা, ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist