আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২১ জুলাই, ২০২০

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে থাইল্যান্ডে বিক্ষোভ

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে থাইল্যান্ডে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হয়েছে। ২০১৪ সালের সেনা অভ্যুত্থান পরবর্তী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভে তারা সরকারের পদত্যাগ ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার দাবি তুলেছে। খবর রয়টার্স।

ছাত্রসমাজের নেতৃত্বাধীন ওই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা গত শনিবার সন্ধ্যায় ব্যাংককের গণতন্ত্র তোরণের সামনে সমবেত হয়েছে। এ সময় তারা এক বছর বয়সী বেসামরিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চ্যান-ওচার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেছে। সাবেক এ সেনাপ্রধান ছয় বছর আগে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে অপসারণ করেছিলেন। বিক্ষোভের আয়োজকরা তিনটি প্রধান দাবি পেশ করেছে। সেগুলো হচ্ছে সংসদ ভেঙে দেয়া, সরকারের সমালোচকদের হয়রানি বন্ধ করা এবং সেনাবাহিনী প্রণীত সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা। সমালোচকরা বলছেন, ওই সংবিধানের বলেই গত বছরের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল প্রায়ুথ নেতৃত্বাধীন দলটি। উপস্থিত জনতাকে ছাত্রনেতা তাতেপ রুয়াংপ্রাপাইকিত বলেন, এ রকম গণতন্ত্রহীনতা আমরা কীভাবে মেনে নিতে পারি। বিক্ষোভে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সর্বক্ষমতাবান থাই রাজতন্ত্রেরও সমালোচনা করা হয়। থাইল্যান্ডের আইনে দেশটির রাজতন্ত্র ও রাজার কোনো সমালোচনা করা যায় না। কিন্তু বিক্ষোভে রাজতন্ত্রের যেভাবে সমালোচনা করা হয়, তা আগে অকল্পনীয় ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও বিক্ষোভ থামাতে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি তাদের। গণতন্ত্র তোরণটিকে আগেই কর্তৃপক্ষ এ নির্দেশনা লিখে ঘিরে রাখে—বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ, ব্যবস্থাপনার কাজ চলছে। গত শনিবার ছাত্র সম্প্রদায় বিক্ষোভের সূচনা করলেও সন্ধ্যা হতে হতে বিভিন্ন বয়সী মানুষ সেখানে জমায়েত হয়। উপস্থিত প্রতিবেদকদের বরাতে জানা গেছে, ওই বিক্ষোভে আড়াই হাজারের মতো বিক্ষোভকারী অংশগ্রহণ করেছেন। চলমান লকডাউন পরিস্থিতি এবং জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা বিবেচনায় উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। মাঝরাতের দিকে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং আয়োজকরা বলছে যদি তাদের দাবি মানা না হয়, তাহলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ফের রাস্তায় নামবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায়ুথের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। গত বছরের নির্বাচনে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিবেচিত হওয়া দলটিকে চলতি বছরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন দেশটির আদালত। এতে সংসদে ক্ষমতাসীন জোটের অবস্থান শক্তিশালী হয়। সরকারের ভেতরেও যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চলছে তার নিদর্শন হিসেবে বৃহস্পতিবার প্রায়ুথের মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য পদত্যাগ করেন। সাবেক সেনাপ্রধান প্রায়ুথের দল পালাং প্রচারাত পার্টি নিজেদের প্রথাগত থাই সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছে। থাইল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সাংবিধানিক রাজতান্ত্রিক দেশ। এখানে রাজার সমালোচনা করলে সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত সাজা প্রদান করা হয়। দেশটির অনেক রক্ষণশীল জনগোষ্ঠী রাজতন্ত্রকে পবিত্র জ্ঞান করে। বিক্ষোভে রাজতন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করে বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন বক্তব্য রেখেছে। এক ছাত্রনেতা বলেন, এটা আমাদের দেশ। কিন্তু জার্মানিতে কার বাড়িঘর আছে? জার্মানিতে রাজা ভাজিরালংকর্নের বিশাল এস্টেট রয়েছে, যেখানে তিনি বছরের বেশির ভাগ সময় কাটান। বিক্ষোভকারীদের একটি প্ল্যাকার্ডে দেখা যায় সেখানে লেখা, বিশ্বাস হারিয়ে ফেলা কোনো অপরাধ নয়। শুক্রবার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এক ব্যক্তি রাজ পরিবারের প্রতি ক্ষোভ জানানোয় তাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি এমন এক টি-শার্ট পরিধান করেছিলেন, যেখানে লেখা ছিল, রাজতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। ওই ব্যক্তির সমর্থনে শনিবারের বিক্ষোভে বেশকিছু প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।অপর একটি ব্যানারে লেখা হয়, দ্য পিপলস পার্টি এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ১৯৩২ সালে এ রাজনৈতিক দলটির নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের ইতি ঘটেছিল। গত মাসে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, তারা যেন রাজতন্ত্রের সমালোচনা করে নিজেদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে না ফেলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close