পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ২৪ জুন, ২০২০

পুরীতে রথ শুরু, কলকাতায় আটকে দুর্গাপূজার খুঁটি পুজো

করোনা পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়াতে রথযাত্রায় সুপ্রিম কোর্ট কড়া অবস্থান নেওয়ায় এবার প্রশ্ন উঠছে বাঙালির সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা নিয়ে। রথের দিন-ই দুর্গাপূজার খুঁটি পুজো হয়ে যায়। করোনা সংক্রমণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার দায়ে এবার সব নমো নমো করে মানে নিয়মরক্ষার্থে হচ্ছে।

করোনা মহামারির বাড়তে থাকা সংক্রমণের মধ্যে

সুপ্রিম কোর্ট ওড়িশাকে সাত দিনের রথযাত্রা উৎসবকে সীমিতভাবে উদ্যাপনের অনুমতি দেওয়া এক দিনের পরে এই প্রথম ভক্তবিহীন জগন্নাথ মন্দিরে বিপুল সংখ্যক পুরোহিত পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রার আয়োজন করেছেন। রথযাত্রার নানা ভিডিওতে দেখা গেছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া পুরোহিতরা বলভদ্রের প্রতিমাকে একটি রথে তুলছেনÑ এই বিশেষ উৎসবের জন্য সজ্জিত পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বাইরে প্রচুর ভিড়ও লক্ষ্য করা গিয়েছে। অনুষ্ঠান শুরুর আগে মন্দির চত্বর স্যানিটাইজও করা হয়েছে।

একটি টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সকালে ভক্তদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রার শুভ উপলক্ষে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। আমি কামনা করি ভক্তিতে ভরা এই যাত্রা সুখ, সমৃদ্ধি, শুভ কামনা এবং দেশবাসীর জীবনে স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনুক। জয় জগন্নাথ।

একটি ভিডিওতে দেখা গেছে যে, কিছু সেবায়েত ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন এবং তালে তালে নেচে অন্যরা মূর্তিকে রথে নিয়ে যাচ্ছেন। অন্য একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, বিশাল জনতা মূর্তিকে রথে তোলার পরে ওই রথকে ঘিরে রেখেছে। সুপ্রিম কোর্ট এর আগে এই বছর বিপুল জনপ্রিয় রথযাত্রা উৎসব নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং জানিয়েছিলেন যে যখনই রথ টানা হবে তখন রাজ্য সরকারকে কারফিউ ঘোষণা করতে হবে। তারপর নতুন আদেশ অনুসারে আদালত জানায় ৫০০-এর বেশি মানুষকে রথ টানতে দেওয়া হবে না এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি যারা করোনাভাইরাস নেগেটিভ তারাই শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারবেন।

কোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, দুটি রথের মধ্যে এক ঘণ্টার ব্যবধান রাখতে হবে। রথ টানতে নিযুক্ত যারা প্রত্যেককে রথযাত্রার আগে, চলাকালীন ও পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, বিস্তারিত বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে শুরু হওয়া রথযাত্রায় সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হন। তবে অত্যন্ত সংক্রামক করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত সপ্তাহে উৎসবে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়ে বলেছিল, মহামারির সময় এই জাতীয় জমায়েত অনুষ্ঠিত হতে পারে না। জগন্নাথকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এবং ওড়িশা সাম্রাজ্যের সার্বভৌম রাজা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পুরী জগন্নাথ মন্দির জগন্নাথের ভূমি হিসাবে পরিচিত, যার আক্ষরিক অর্থে বিশ্বজগতের প্রভু।

একদিকে পুরীতে যখন কড়া বিধিনিষেধ মেনে শর্তসাপেক্ষে রথযাত্রায় অনুমতি মিলেছে, তখন কলকাতার ইসকন মন্দিরেও ছবিটা প্রায় একই। সেবায়েতরা যারা রথ টানবেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা আলাদা ছিলেন। প্রায় ৭০ দিন তারা বাইরে যাননি। তাদের প্রত্যেকের করোনা টেস্টও হয়েছে। গোটা ইসকন মন্দিরটা-ই কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করে ফেলা হয়েছিল। আজ সেই সেবায়েতরা-ই রথ টানবেন। পাশাপাশি মায়াপুর ইসকনেও এবার বন্ধ রথযাত্রা। বেরোচ্ছে না রথ। মায়াপুর ইসকনের মূল মন্দিরে বিকালে ছোট করে রথের অনুষ্ঠানটুকু হবে মাত্র।

পুরী, ইসকনের রথের মতোই বিখ্যাত হুগলির শ্রীরামপুরের মাহেশের রথ। এবার মাহেশের রথ ৬২৪তম বর্ষে পা দিয়েছে। কিন্তু করোনার জন্য এই প্রথমবার মাহেশের রথের রশিতে টান পরবে না। তবে প্রথা মেনে সব আচার-অনুষ্ঠানই হবে। সকাল থেকেই মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরে তাই শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোপাঠ। হাতেগোনা নামমাত্র কিছু ভক্তও এসেছেন। এছাড়াও শতাব্দী প্রাচীন নদিয়ার চাকদার শিমুরালি নিত্যানন্দ মঠের রথ, মদনপুর এক নম্বর জিপির কালীগঞ্জের রথ, সুখসাগর গ্রামের জমিদার বাগচি পরিবারের রথ, হুগলির চন্দননগরের রথ সবই বন্ধ। করোনার জেরে এবার আর রথের রশিতে টান পড়ছে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close