আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

দিল্লির দাঙ্গায় নিহতদের ধর্মীয় পরিচয় গোপন!

উত্তর প্রদেশের বুলন্দ শহরের মেয়ে শাজিয়া তাকিয়ে ছিল নির্নিমেষে, ফ্যালফ্যাল করে। মাত্র মাসকয়েক আগে দিল্লির অটোচালক শাহিদের সঙ্গে বিয়ের পরই তার এই শহরে পা রাখা, এখন শাজিয়ার গর্ভে শাহিদেরই তিন মাসের সন্তান। দিল্লিতে গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালের মর্গের সামনে সেই শাহিদের লাশ নেওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছিল ওই তরুণী, যার বয়স খুব বেশি হলে সবেমাত্র ২০ হবে! ভারতের রাজধানীতে বহু বছরের মধ্যে বীভৎসতম ও নৃশংস সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় যাদের প্রাণ গেছে, শাহিদ তাদেরই একজন।

গত সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় নাগাদ সে যখন নিজের অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়েছিল, একটি বুলেট এসে তাকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। এক লহমায় তোলপাড় হয়ে যায় শাহিদ-সাজিয়ার ছোট্ট নতুন সংসার। কিন্তু গত মঙ্গলবার সারা দিন অপেক্ষার পরও পরিবারের হাতে শাহিদের দেহ তুলে দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শুধু শাহিদ কেন, দাঙ্গায় নিহতদের কারো দেহই গত বুধবার সকালের আগে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, ময়নাতদন্ত শেষ হওয়ার আগে আর দিল্লি পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোনো লাশই ছাড়া যাবে না। পরে গত বুধবার আলাদাভাবে অন্তত পাঁচটি লাশ তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিদিন আলাদা আলাদা সময়ে, আলাদা আলাদা গেট দিয়ে পুলিশি পাহারা দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছেÑ পরিবারের মাত্র এক-দুজন সদস্যের উপস্থিতিতে। তারা প্রত্যেকেই ছিলেন মুসলিম।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, হতাহতদের ধর্মীয় পরিচয় কী, তা নিয়ে প্রশাসন একেবারে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতাল নিহতদের নাম-ধাম পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমকে জানাতে সরাসরি অস্বীকার করেছে। তবে এদিন (বুধবার) বিকালে যখন উত্তর-পূর্ব দিল্লির তেগবাহাদুর হাসপাতালে যাই, মর্গের সামনে শুধু গোটাকয়েক মুসলিম পরিবারের ভিড়ই চোখে পড়েছে। শাজিয়া ও তার নিকটাত্মীয়রা ছিল যার অন্যতম। যেকোনো কারণেই হোক, হিন্দু পরিবারের সদস্যদের কিন্তু সেখানে একেবারেই চোখে পড়েনি।

দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এই প্রতিবেদক যেটা জানতে পেরেছে তা এরকম; গত বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত দাঙ্গায় মোট নিহতের সংখ্যা ২৩ জন। যার মধ্যে নিশ্চিতভাবে মুসলিম অন্তত ১০ জন, হিন্দু অন্তত পাঁচজন এবং একজন দিল্লি পুলিশের হেড কনস্টেবল রতন লাল। নিহত বাকি সাতজন হিন্দু না মুসলমান, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে এ পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা যে অনেক বেশি (অন্তত দ্বিগুণ) তা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশাসনের নীরবতাই বুঝিয়ে দিচ্ছে তারা এ ব্যাপারে কোনো তথ্য সামনে আসতে দিতে রাজি নয়।

পাশাপাশি ব্যাপক সংখ্যায় মুসলিমদের এই প্রাণহানিও এটাই প্রমাণ করছে তারা একটা পরিকল্পিত সংঘবদ্ধ আক্রমণের শিকার হয়েছে। মুসলিম মহল্লাগুলোতে বেছে বেছে মসজিদ-মাদ্রাসা বা কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে আক্রমণ চালানো হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত গত রোববার বিকাল থেকে পরবর্তী বাহাত্তর ঘণ্টা ধরে দিল্লিতে যেটা হয়েছে তা পুরোদস্তুর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাই এবং প্রাথমিক আক্রমণের ধাক্কা সামলে মুসলিমরাও তাদের সাধ্যমতো জবাব দিয়েছে গোকুলপুরী, ভজনপুরা, জাফরাবাদ, চানবাগ বা মোস্তফাবাদের মতো এলাকাগুলোয়। সেই পাল্টা হামলায় অনেক জায়গায় হিন্দুরাও মারা গেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close