আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৪ মার্চ, ২০১৯

আইএসের শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পুনর্বহালে পরিবারের আবেদন

বাড়ি থেকে পালিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাবেক ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তার পরিবার যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। সিরিয়ায় আইএসে যোগ দেওয়ার পর সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করেছে।

১৯ বছরের শামীমা এখন সিরিয়ায় শরণার্থী শিবিরে বাস করছে। সম্প্রতি তার সদ্যোজাত সন্তান মারা গেছে। সন্তান মারা যাওয়ার আগে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সে আবেদন জানিয়েছিল দেশে ফেরার অনুমতি দেওয়ার জন্য। প্রায় চার বছর আগে পূর্ব-লন্ডনের বাড়ি থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় আইএসে যোগ দেয় এবং এক আইএস সদস্যকে বিয়ে করে। গর্ভবতী অবস্থায় কিছুদিন আগে তাকে সিরিয়ায় শরণার্থী শিবিরে শনাক্ত করা হয়।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করার পর ২০ ফেব্রুয়ারি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্য তার নাগরিকত্ব কেড়ে নিলেও সে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে না। যুক্তরাজ্যের আইনে বলা আছে, সরকার মনে করলে ঝুঁকিপূর্ণ যে কারো নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে। কিন্তু এ কাজ তখনই করা যায়, যখন তার অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব থাকে। শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করার অর্থ হচ্ছে তার অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব আছে বলে মনে করে যুক্তরাজ্য।’ ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শামীমাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ তার পরিবার বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে পাড়ি দিয়েছে। এ বিষয়টি যুক্তরাজ্যের স্পেশাল ইমিগ্রেশন অ্যাপিলস কমিশনে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

শামীমার পরিবারের আইনজীবী তাসনিম আকুঞ্জি বলেন, আমরা এই সিদ্ধান্তকে ভুল বলছি। কারণ এর ফলে শামীমা বেগম রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছে। এতে তার জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে, এটা তার প্রতি অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণ এবং তার পারিবারিক জীবনের অধিকার খর্ব করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও শামীমার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব অস্বীকার করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, শামীমা বেগম বাংলাদেশের নাগরিক নয়। জন্মসূত্রে সে যুক্তরাজ্যের নাগরিক। দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়ে সে কখনো বাংলাদেশের কাছে আবেদন করেনি। এমনকি বাবা-মায়ের জন্মস্থান হলেও শামীমা আগে কখনো বাংলাদেশে আসেনি। সুতরাং তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। এই পরিস্থিতিতে শামীমার পরিবার যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দ্বিতীয়বার আইনি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। হাইকোর্টে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সঠিক তথ্যের ওপর নির্ভর করেননি।

পরিবারের আইনজীবীদের দাবি, শামীমার তৃতীয় সন্তান জারাহর মৃত্যুর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। যখন ওই সন্তানের জন্ম হয় তখনো শামীমা ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন। স্কুলে পড়া অবস্থায় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইএসে যোগ দিয়ে নেদারল্যান্ডসের আইএস সদস্য ইয়াগো রিয়েদিজককে বিয়ে করে শামীমা। তার ২৭ বছর বয়সী স্বামী উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার একটি কুর্দি কারাগারে বন্দি। এক সাক্ষাৎকারে সে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে নেদারল্যান্ডসে ফেরার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে।

তবে নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশ উভয়েই সংশ্লিষ্ট দেশে শামীমার প্রবেশ ও বসবাসের অধিকার অস্বীকার করে আসছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, যুক্তরাজ্য কোনো ব্রিটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব তখনই বাতিল করতে পারে যদি ওই ব্যক্তি যদি রাষ্ট্রহীন হয়ে না পড়েন।

ধারণা করা হয়, শামীমা বেগম ইরাক সীমান্তের কাছে কোনো একটি শরণার্থী শিবিরে রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের নজর কাড়ার ফলে হুমকির কারণে তাকে উত্তর সিরিয়ার আল-হল ক্যাম্প থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নতুন শিবিরে স্থানান্তরের পর থেকে এখন পর্যন্ত পরিবার বা আইনজীবীর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close