আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় ৪৪ সৈন্য নিহতের পর ভারতের হুশিয়ারি

পাকিস্তানকে সমুচিত জবাব দেব

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর চালানো অন্যতম ভয়াবহ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। হামলার সমুচিত জবাব দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। গত বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ৪০ জওয়ানকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ-এ-মোহাম্মদ। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে গোষ্ঠীটির নেতা মাসুদ আজহারকে ভারতসহ যেকোনো স্থানে হামলা চালানোর দায়মুক্তি দিয়েছে ইসলামাবাদ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের এই আত্মত্যাগ বিফলে যেতে দেওয়া হবে না। হামলার নিন্দায় সরব হয়ে উঠেছেন দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে গত বৃহস্পতিবার রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর প্রায় ২৫০০ সদস্যদের নিয়ে ৭০টি গাড়ির একটি বহর জম্মু থেকে কাশ্মীর যাওয়ার পথে পুলওয়ামা জেলার অবন্তিপুরে হামলার মুখে পড়ে। প্রায় ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক ব্যবহার করে ৪৪ জন জওয়ান বহনকারী একটি বাসে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। হামলায় দুটি গাড়ি আক্রান্ত হলে অন্তত ৪০ জওয়ান নিহত ও বহুসংখ্যক আহত হয়। হামলার পর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ-এ-মোহাম্মদ। গোষ্ঠীটি কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের অবসান চায়। আদর্শগতভাবে কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার পক্ষে অবস্থান তাদের।

গত বৃহস্পতিবারের হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জয়েশ-এ-মোহাম্মদের নেতৃত্ব দেয় মাসুদ আজহার। তাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, পাকিস্তান সরকার তাকে সন্ত্রাসী অবকাঠামো পরিচালনা ও বিস্তৃত করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে। ভারতসহ যেকোনো স্থানে হামলা চালানোর জন্য ইসলামাবাদ তাকে দায়মুক্তি দিয়েছে বলে দাবি করা হয় ওই বিবৃতিতে।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ জিইয়ে রেখেছে ইসলামাবাদ ও দিল্লি। এই অঞ্চলের দখল নিয়ে দুটি যুদ্ধও করেছে ভারত ও পাকিস্তান। দেশ দুটি আলাদাভাবে কাশ্মীরের অংশ বিশেষ নিয়ন্ত্রণ করলেও পুরো অংশের কর্তৃত্ব দাবি করে।

গত বৃহস্পতিবার কাশ্মীরে হামলার পর ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ‘পাকিস্তানের সমর্থনপুষ্ট জয়েশ-এ-মোহাম্মদ এই হামলা চালিয়েছে। দেশের জনগণকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি এই হামলার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে’। এছাড়া হামলার কঠোর নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সাহসী সদস্যদের আত্মত্যাগ বিফলে যেতে দেওয়া হবে না। এক টুইট বার্তায় বিজেপি নেতা মোদি লেখেন, ‘পুরো জাতি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই সাহসী শহীদদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক’। হামলার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

কাশ্মীরের আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে পুলওয়ামা জেলার কাকাপোরা এলাকার বাসিন্দা আদিল আহমাদকে চিহ্নিত করেছে ভারতীয় পুলিশ। কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ২০১৮ সালে জয়েশ-এ-মোহাম্মদে যোগ দেয় আদিল।

হামলার নিন্দা জানিয়েছে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী এই হামলাকে কাপুরুষোচিত বলে উল্লেখ করেছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। এছাড়া কাশ্মীর হামলার পর নিজের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি স্থগিত করেছেন দলটির আরেক শীর্ষ নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

গাড়িটি ঠাসা ছিল সাড়ে ৩০০ কেজি বিস্ফোরকে : গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে যে জঙ্গি হামলা চালানো হয় তাতে অন্তত ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিএসপি অমিত কুমারকে উদ্ধৃত করে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আনন্দবাজার।

গত বৃহস্পতিবারের হামলায় ভারতের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর (সিআরপিএফ) ৪০ সদস্য নিহত হয়েছেন। হামলার দায় স্বীকার করেছে জইশ-ই-মুহাম্মদ। এর আগে কাশ্মীরের উরির সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলাতেও এ সংগঠন জড়িত ছিল। ২০০১ সালে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় গাড়ি বোমা হামলাতেও ছিল এই সংগঠনটি। হামলার বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা অমিত কুমার বলেছেন, ৭৮টি গাড়ির সিআরপি কনভয় জম্মু থেকে শ্রীনগরের দিকে যাচ্ছিল। বাস, ট্রাক ও এসইউভি মিলিয়ে ২৫০০ জন জওয়ান ছিলেন তাতে। দুপুর সাড়ে ৩টা নাগাদ জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে অন্তত ৩৫০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ঠাসা একটি স্করপিও কনভয়ের দুটি বাসে ধাক্কা মারে। প্রবল বিস্ফোরণের পরে একটি বাসে আগুন ধরে যায়।

বিস্ফোরণের পরে অর্ধেক সেনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ও গুলি চালায় জঙ্গিরা।

হামলার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, জইশ-ই-মুহাম্মদকে পাকিস্তানের মাটি থেকে কাজকর্ম চালাতে দিচ্ছে সে দেশের সরকার।

পাকিস্তান বলছে, তারা সব সময়েই কাশ্মীর উপত্যকায় সব ধরনের হিংসার নিন্দা করে আসছে। কোনো তদন্ত ছাড়াই ভারত সরকার এবং ভারতের সংবাদমাধ্যম যেভাবে ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের নাম জড়ানোর চেষ্টা করছে, আমরা দৃঢ়ভাবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close