আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

মার্কিন মিত্রদের টার্গেট করে রাশিয়ার সমরাস্ত্র মোতায়েন

যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের টার্গেট করে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই তারা লেজার ওয়েপন মোতায়েন করেছে। এর মধ্যে পেরেসভেট লেজারও রয়েছে, যার সক্ষমতা এখন পর্যন্ত গোপন রেখেছে মস্কো। তবে সামরিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি প্রতিপক্ষের ড্রোন, মিসাইল ও আকাশযানের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। গত বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।

রাশিয়ার জেনারেল স্টাফ চিফ ভ্যালের গেরাসিমভ বলেছেন, যেকোনো সংঘাতের ক্ষেত্রে প্রতিশোধ হিসেবে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন রয়েছে এমন দেশগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে রাশিয়া। এ ক্ষেত্রে নতুন লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

ভ্যালের গেরাসিমভ বলেন, পেশাদার সামরিক কর্মীদের হিসেবে আপনি অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে, রাশিয়ার প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তু যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূখন্ড হবে না। বরং সেসব দেশগুলোকেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হবে যেখানে মাঝারি পাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন রয়েছে।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যেই লেজার ওয়েপন মোতায়েনের দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে পেরেসভেট লেজারও রয়েছে যার সক্ষমতা এখনো গোপন রেখেছে মস্কো। তবে সামরিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি প্রতিপক্ষের ড্রোন, মিসাইল ও আকাশযানের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পরমাণু অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তি লঙ্ঘন নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগেরও সমালোচনা করেছে মস্কো। রুশ প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিনের দাবি, এই মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমেরিকা চুক্তিটি থেকে সরে যেতে চাইছে।

এদিকে, ২০১৯ সালে চার হাজার সামরিক মহড়া চালানোর ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। গত মঙ্গলবার রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) নামে রুশ-মার্কিন পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে মস্কো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান।

মস্কোতে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে কথা বলেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে বিভিন্ন মাত্রার চার হাজার সামরিক মহড়া চালাবে রাশিয়া। সবচেয়ে বড় মহড়াটি হবে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে।

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ২০১৮ সালে সামরিক খাতে ৭১৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০ লাখ ৩৫ হাজার ৪১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। ‘ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্স-আইএনএফ’ নামের ওই চুক্তি মেনে চলতে তিনি রাশিয়াকে ৬০ দিন সময় দিয়েছেন।

ব্রাসেলসে সামরিক জোট ন্যাটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে পম্পেও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আজ ঘোষণা দিচ্ছে যে তারা রাশিয়ার ওই চুক্তি ভঙ্গের বাস্তব প্রমাণ পেয়েছে। রাশিয়া যদি পূর্ণ ও যাচাইযোগ্যভাবে ওই চুক্তিতে ফিরে না আসে তাহলে ৬০ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করবে।’

তিনি বলেন, ‘অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে রাশিয়ার প্রতারণাকে আমাদের অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে।’ পম্পেও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো আশাবাদী। রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার এমন সম্পর্ক রয়েছে যাতে দেশটি লাভবান হতে পারে। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করার দায়িত্ব রাশিয়ার ওপর বর্তায়। শুধু তারাই এই চুক্তি বাঁচাতে পারে।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যদি রাশিয়া তাদের লঙ্ঘনের বিষয়টি স্বীকার করে এবং পূর্ণ ও যাচাইযোগ্য প্রক্রিয়ার ফিরে আসতে চায়, তাহলে আমরা অবশ্যই সেই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাব।’ মাইক পম্পেওর এই মন্তব্যের আগে সামরিক জোট ন্যাটোর পক্ষ থেকেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তোলা হয়েছে। এক বিবৃতিতে ন্যাটো বলেছে, ‘আমরা রাশিয়াকে পূর্ণ ও যাচাইযোগ্যভাবে চুক্তিতে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। এখন আইএনএফ চুক্তি সংরক্ষণ করার দায়িত্ব রাশিয়ার।’

১৯৮৭ সালে আইএনএফ নামের মাইলফলক চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা মিখাইল গর্ভাচেভ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। এ চুক্তির মাধ্যমে ৫০০ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে মাঝারি দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ নিষিদ্ধ করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close