আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রোহিঙ্গা নিধনকে ‘গণহত্যা’ বলেনি যুক্তরাষ্ট্র

রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো সহিংসতা ও নৃশংসতাকে ‘সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত সহিংসতা’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এতে এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়নি। সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে রাখাইনে সংঘটিত অপরাধের ঘটনার অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রতিবেদনটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে মূল প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত বছরের ২৫ আগস্ট নিরাপত্তাচৌকিতে আরসার হামলাকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের কারণ বলা হলেও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে এবং তাদের ফেরার সব পথ বন্ধ করতে আরসার হামলার আগে থেকেই পরিকল্পিত সেনা-অভিযান শুরু হয়েছিল। চলমান জাতিগত নিধনে হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সোমবার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নিয়ে করা প্রতিবেদনটি মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে মূল প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। একই দিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি রোহিঙ্গাদের জন্য আরো মোট ১৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার সহায়তার ঘোষণা দেন। এর মধ্যে ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার ব্যয় করা হবে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় লোকজনের জন্য। নিকি হ্যালি বলেন, ‘মিয়ানমারে সংঘটিত জাতিগত নিধনের ঘটনায় আমরা এখনো মর্মাহত।’

সোমবার প্রকাশিত মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গা শরণার্থী চরম সহিংসতার শিকার হয়েছে বা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে। তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘বেশির ভাগ রোহিঙ্গাই একটি হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করেছে, দুই-তৃতীয়াংশই মানুষকে আহত হতে দেখেছে আর অর্ধেক মানুষ যৌন সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছে।’ আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের অধিকাংশই অপরাধী হিসেবে মিয়ারমার সেনাবাহিনীকে চিহ্নিত করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই সহিংসতা দুই ধাপে চালানো হয়। প্রথম ধাপে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে আর দ্বিতীয় ধাপে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে সেনা তল্লাশিচৌকিতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি-আরসার হামলার পর। মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপে দেখা গেছে যে, সামরিক বাহিনী উত্তর রাখাইনে তাদের তথাকথিত বিদ্রোহী দমন অভিযানের বৈধতা দেওয়ার জন্য আরসার হামলাকে ব্যবহার করেছে। এই অভিযানে নির্বিচারে বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করা হয়েছে আর সেখানে চরম নিষ্ঠুরতা চালানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৫ শতাংশ শরণার্থী ধর্ষণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। আর এসব ধর্ষণের বেশির ভাগই সেনাবাহিনী করেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ শরণার্থী মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ধর্ষণ করতে দেখেছে। এর মধ্যে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্য রয়েছে। আর তাদের মধ্যে ১৮ শতাংশই অন্তত একটি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে।

গত মাসে জাতিসংঘের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার জন্য মিয়ানমার সামরিক নেতৃত্বকে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে বিচার করা উচিত। এরপর মার্কিন প্রতিবেদনেও মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলো।

তবে তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ বা গণহত্যার অভিযোগ আনেনি তারা। মার্কিন সরকার এর আগেই এই নৃশংসতাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে অভিহিত করেছে। তবে একে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করা হলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যেত।

এই নৃশসংসতাকে ‘গণহত্যা’ বা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করতে সরকারের অনিচ্ছার বিষয়টিতে হতাশা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও আন্দোলন কর্মীরা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়াশিংটন ডিরেক্টর সারাহ মরগান স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘জাতিসংঘ ও আরো অনেক স্বাধীন সংগঠন যেসব বিষয়কে নথিভুক্ত করেছে এই প্রতিবেদনে সেসব বিষয়কে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মার্কিন সরকার এ ঘটনার অর্থপূর্ণ জবাবদিহিতা নিশ্চিত ও বিপুলসংখ্যক ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সহায়তা করতে চায় কিনা, তা সম্পর্কে এই বাদ পড়া বিষয়গুলো পরিষ্কার ইঙ্গিত দেয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close