আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মিসরে ইখওয়ানের ৭৫ নেতাকর্মীর মৃত্যুদন্ড

‘তামাশা’ বলল অ্যামনেস্টি

মিসরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদ এবং সেনাশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে ৭৫ ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে ছয় শতাধিক ব্যক্তিকে।

শনিবার যাদের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে তাদের মধ্যে ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষস্থানীয় নেতা এশাম আল-এরিয়ান, মোহাম্মদ বেলতাগি এবং বিশিষ্ট ইসলাম প্রচারক সাফওয়াত হিগাজিও রয়েছেন। ইখওয়ানের আধ্যাত্মিক নেতা মোহাম্মদ বাদিয়িসহ যাবজ্জীবন ৪৬ জনকে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে এবং ৬১২ জনকে পাঁচ থেকে ১৫ বছরের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। সহিংসতা উসকে দেওয়া, অবৈধ বিক্ষোভ সংগঠিত করাসহ নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন অভিযোগে তাদের এই শাস্তি দেওয়া হয়।

তবে, কারান্তরীণ থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা পাঁচজনের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি। অন্যদিকে সাওখান নামে পরিচিত প্রখ্যাত ফটোসাংবাদিক মাহমুদ আবু জেইদকে পাঁচ বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের আগস্টে কায়রোতে হত্যাকা-ের ছবি তোলার অপরাধে তাকে এই দন্ড দেওয়া হয়। এদিকে, গণহারে এভাবে ফাঁসি ও কারাদন্ড দেয়াকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টির উত্তর আফ্রিকার পরিচালক নাদিয়া বোনাইম এই বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কায়রোর রাবেয়া স্কয়ার ও কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাহদা স্কয়ারে বিক্ষোভে অন্তত ৯০০ জনকে হত্যার ঘটনায় একজন পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়নি। এটা বিচারের নামে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়।’

অন্যদিকে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে, ‘২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট মিশরের রাবেয়া মসজিদের কাছে বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক অভিযানে এক দিনেই ৮০০’র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। মুসলিম ব্রাদারহুড-সমর্থিত মোহাম্মদ মুরসিকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে উৎখাতের প্রতিবাদে তার সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছিল। পুলিশ ও সামরিক বাহিনী তখন পরিকল্পিতভাবে জনসমাবেশে গুলি চালিয়েছিল। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির নির্দেশে ওই সব সমাবেশে সামরিক হামলা হয়েছিল।’

২০১২ সালের ৩০ জুন মিসরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের মাথায় ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন মোহাম্মদ মুরসি। সেনাপ্রধান জেনারেল সিসি ক্ষমতা দখল করেন। এর প্রতিবাদে রাজধানী কায়রোসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হলেও এখন ওই বিক্ষোভ উস্কে দেয়ার অভিযোগে ব্রাদারহুড সংগঠনকে দায়ী করে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন অভিযান চালানো হয়।

এ পর্যন্ত এই দলের শত শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড ঘোষিত হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে ব্রাদারহুডকে। আর মুরসির ঠিকানা হয়েছে অন্ধকার কারাগারে। কনডেম সেলে অন্তরীণ মুরসির সঙ্গে বাইরের জগতের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে এবং গত পাঁচ বছরে মাত্র দুইবার তাকে তার পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close