আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কিম-ট্রাম্প বৈঠক
অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা চায় উত্তর কোরিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে না চাওয়ার যে হুমকি উত্তর কোরিয়ার নেতা দিয়েছেন তাকে বেশ চমকপ্রদ পরিবর্তনই বলা যায়। আগামী ১২ জুন সিঙ্গাপুরে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকটি হওয়ার কথা রয়েছে। গত মাসেই পুরো বিশ্ব দেখেছে, কিম কীভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জাই-এর হাত ধরে একটি শান্তির প্রতীকী গাছ রোপণ করেছে। সে সময় কিম জং উন প্রতিবেশীর সঙ্গে নতুন ইতিহাস সৃষ্টির অঙ্গীকার করে এও বলেছিলেন যে, এটি শান্তি প্রতিষ্ঠার সূচনা মাত্র।
একইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, আসন্ন সিঙ্গাপুর বৈঠকের আগে উত্তর কোরিয়া অবিলম্বে পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা থামাবে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় যে পিয়ং ইয়ং তার অস্ত্র কর্মসূচি পুরোপুরিই বন্ধ করুক। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এসবের কিছুই হয়তো না-ও ঘটতে পারে।
তবে বিবিসির এশিয়ার বাণিজ্যবিষয়ক সংবাদদাতা কারিশমা ভাসওয়ানির মতে, উত্তর কোরিয়ার নেতার স্বভাব যদিও অননুমেয় তার পরেও বর্তমান পরিস্থিতিকে বর্ণনা করা যায় ‘বিস্ময়কর’ শব্দটি ব্যবহার করেই। এ ঘটনার শুরু হয় যখন উত্তর কোরিয়া বলে যে, আমেরিকা যদি পারমাণবিক অস্ত্র নষ্ট করে ফেলার জন্য তাদের ওপর চাপ দেয়, তাহলে তারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে বসবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম গিয়ে গুয়ান আমেরিকার বিরুদ্ধে ‘অশুভ অভিপ্রায়ের’ এবং দায়িত্বহীন বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগ করেন। আর তিনি এজন্য সরাসরি দায়ী করেছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকে। বিবিসির মিজ কারিশমা মনে করেন, সিঙ্গাপুরের বৈঠকটির মূল বিবেচ্য আসলে বাণিজ্য। আর সেজন্যই উত্তর কোরিয়া খুব সরলভাবেই তাদের চুক্তির শর্তগুলো তুলে ধরছে, যেকোনো সভার আগে যা হয়েই থাকে।
অর্থনীতি, গুরুত্ব সেখানেই : কিম কখনোই তার দেশের অর্থনীতির ওপর নজর দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধা করেননি। কারিশমা ভাসওয়ানির বিশ্লেষণে দেখা যায়, কিম জং উন বহুবারই তার ‘বাইয়ুংজিন’ নামের দ্বৈত কৌশল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কথা উল্লেখ করে এসেছেন, যেখানে একইসঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র এবং অর্থনীতি উভয়ের একসঙ্গেই উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে।
আর এই কৌশল ঘোষণার প্রায় পাঁচ বছর পর এই এপ্রিলে এসে দেশটির প্রধান নেতা বলেছেন, উত্তর কোরিয়া তার পরমাণু অস্ত্রের ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছে, এখন সময় অর্থনীতির দিকে মনোযোগ দেওয়ার। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র যখন বলে যে, উত্তর কোরিয়া সম্পূর্ণ পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোনো বেসরকারি বিনিয়োগ হবে না, তখন অবাক হওয়ার কিছু থাকে না।
বিবিসির এশিয়ার বাণিজ্যবিষয়ক সংবাদদাতার মতে, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়া আসলে রয়েছে খুবই চাপের মধ্যে। ২০১৭-তে দেশটির রফতানি ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এমনকি তাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীনের ক্ষেত্রে রফতানি হ্রাসের পরিমাণ শতকরা ৩৫ ভাগ। আর এই বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকলে অবস্থা আরো খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই রয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে? কূটনৈতিক অঙ্কিত পান্ডার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে কথা বলেছিলেন কারিশমা ভাসওয়ানি। মি. পান্ডার মতে, অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের অর্থ যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর কোরিয়ার কাছে ভিন্ন। আসলে উত্তর কোরিয়া চায় তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহার।
পান্ডার বলেন, সব মিলিয়ে উত্তর কোরিয়ার ওপর নয়টি নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। আর কার্যত সব থেকে তাদের মুক্তি হয়তো সম্ভব নয়। যতই তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করুক। আসলে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের সহায়তা ব্যতীত পিয়ং ইয়ংয়ের মুক্তি নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি পরীক্ষা, কিন্তু কাজ কি করবে? জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ইউলিয়াম নিউকম্ব মনে করেন যে, উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক এই মন্তব্য আসলে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। এই কৌশল কাজ করবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, তবে অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন যে, নিরাপত্তা পরিষদের আনা নিষেধাজ্ঞা হ্রাসের বিষয়টি আসতে পারে সিঙ্গাপুর বৈঠকে এগিয়ে নিতে। নিউকম্বের মতে, নিরাপত্তা পরিষদকে হয়তো আন্তর্জাতিক এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বা হ্রাস বা স্থগিতের জন্য কিছু একটা করে দেখাতে হতে পারে। সেটিই আলোচনা এবং অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। সেজন্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব অপরিহার্য।
আর সেজন্যেই হয়তো পিয়ং ইয়ং এমন একটি চাল চেলেছে।
"