আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৮ এপ্রিল, ২০১৮

চীনা ঋণের ফাঁদে পাকিস্তান!

চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) অধীনে ঋণ হিসেবে পাকিস্তানে ১৮ দশমকি ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। এ ঋণের পরিষ্কার কোনো হিসাব না থাকলেও বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক ঋণের মধ্যে ১৯ বিলিয়নই চীনের কাছ থেকে পাওয়া। জাপানকে অতিক্রম করে চীনই এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা। সিপিইসির অধীনে পাওয়া এসব ঋণের জন্য চড়া মূল্য পরিশোধ করতে হবে পাকিস্তানকে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০১৩ সালের জুনে চীন-পাকিস্তানের এ দ্বীপাক্ষিক ঋণের পরিমাণ ছিল চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৭ সালের জুনে ঋণের পরিমাণ আগের চার বছরে প্রায় তিন বিলিয়ন বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমকি ২ বিলিয়ন ডলার।

দ্বিপাক্ষিক ঋণের বাইরেও ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের মুদ্রা বিনিময়ের পরিমাণ ১ দশমকি ৫ বিলিয়ন ডলার। ফলে ঋণের অংকটা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমকি ৭ বিলিয়ন ডলারে। তাছাড়া চীনের সরাসরি বিনিয়োগকারীদের কাছে পাকিস্তানের ঋণ রয়েছে ৩ দশমকি ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালের এ পরিসংখ্যানটাকে ভিত্তি করে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পাকিস্তানের মোট বৈদেশিক ঋণ ৮৩ দশমিক ১ বিলিয়ন থেকে ৮৮ দশমকি ৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে এবং তা বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া চলতি বছরের ঋণের পরিমাণটা যোগ করলে সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, এই ১৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পাকিস্তানকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হতে পারে। সিপিইসির অধীনে পাকিস্তানের জ্বালানিখাতসহ ১৯টি প্রজেক্টে বিনিয়োগ করেছে চীন। এ বিনিয়োগটি বার্ষিক ৭ শতাংশ সুদসহ ২৫ থেকে ৪০ বছরে পরিশোধযোগ্য। অর্থাৎ, ২০১৮ সাল থেকে পরবর্তী ৪৩ বছর প্রতিমাসে আনুমানিক ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে পাকিস্তানকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন-পাকিস্তান করিডোর (সিপিইসি) থেকে ভবিষ্যতে পাকিস্তানের লাভবান হওয়ার কথা থাকলেও পরিস্থিতি পাকিস্তানের অনুকূলে কথা বলছে না। বরং, সিপিইসির ওপর পাকিস্তানের নির্ভরশীলতা ও চীনের প্রতি অতি আস্থা ও নির্ভরতা দেশটির অর্থনীতির জন্য বিরাট জুয়া খেলা হতে চলেছে। যদিও সিপিইসি পাকিস্তানের অর্থনীতিতে কার্যকর পরিবর্তন আনতে সক্ষম, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ভয়, এ পরিবর্তনের জন্য পাকিস্তানকে চীনের কলোনি হিসেবে তুলে দিতে হতে পারে।

তাছাড়া, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডে’র অংশ হিসেবে চীনা বিনিয়োগ সবসময়ই অভ্যন্তরীণ বাজার ও প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চীনের স্বার্থ রক্ষা করে আসছে।

অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে সিপিইসির প্রভাব : চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) চীনের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলোর একটি। এর মধ্যে মহাসড়ক, রেলপথ, ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক, জ্বালানি, বন্দর, অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ বহুপ্রকল্প রয়েছে।

এই অর্থনৈতিক করিডোরের কিছু অংশ ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। চীন থেকে ইতোমধ্যে পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে মালামাল পরিবহন করা হয়েছে গোয়াদার বন্দর পর্যন্ত। সেখান থেকে চীনের পণ্য যাচ্ছে আফ্রিকায় এবং পশ্চিম এশিয়ায়।

পাকিস্তানের ক্ষমসাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন সিপিইসি দেশটির অর্থনীতির পুরো চিত্রই পাল্টে দিতে সক্ষম। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রকল্পটি পাকিস্তানের জন্য তেমন কোনো সুফল বয়ে আনবে না। চীনারা স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করছে না, ফলে পাকিস্তানের যুবসমাজে খুব কমই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

তাছাড়া চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য পাকিস্তান ট্যাক্স ছাড়ের সুদূরপ্রসারী সুযোগ দিতে চলেছে। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের উৎপাদনখাতে ধস নামতে চলেছে। এতে স্থানীয় বাজার সয়লাব হয়ে যাবে চীনা পণ্যে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist