আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জেরুজালেম প্রশ্নে মিত্র মোদির পদক্ষেপে হতাশ নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল সোমবার বলেছেন, তার দেশের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে ভারতের প্রত্যাখ্যানে তিনি হতাশ হয়েছেন। তবে এটি তার যুগান্তকারী নয়াদিল্লি সফরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।
মুম্বাইয়ে ২০০৮ সালের হামলায় নিহত এক ইহুদি দম্পতির হত্যাকারীদের ‘ধরা হবে’ বলেও নেতানিয়াহু প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। ভারতে ছয় দিনের সফরে এ দম্পতির সন্তান তার সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন। ইসরায়েলি এ নেতা একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল নিয়ে গত রোববার ভারত সফরে আসেন। গতকাল সোমবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু মিডিয়া গ্রুপ ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার ‘বিশেষ সম্পর্ক’ রয়েছে।
ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে ওয়াশিংটনের স্বীকৃতির নিন্দা জানাতে গত মাসে জাতিসংঘ আয়োজিত ভোটাভুটিতে ভারতসহ শতাধিক দেশ অংশ নেয়। এতে ইসরায়েল হতাশা প্রকাশ করে। ওই সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ভারতের এমন পদক্ষেপে স্বাভাবিকভাবে হতাশ হলেও আমি মনে করি এ সফর প্রমাণ করে আমাদের সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, বিগত ১৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম ইসরায়েলের কোনো নেতা ভারত সফর করছেন।
৯টি চুক্তি স্বাক্ষর : ভারত স্বাধীন হওয়ার পর গত সাত দশকে কোনো রাষ্ট্রপ্রধান সে দেশ থেকে ইসরায়েল সফরে যাননি। সেই প্রথার অবসান ঘটিয়ে ইতিহাস তৈরি করে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল সফরে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তখন থেকেই নিবিড় বন্ধুত্ব মোদি ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর। সেই সম্পর্ক কতটা গভীর তার প্রমাণ ফের একবার দিলেন দুই রাষ্ট্রনেতা।
গত রোববার ভারতে আসেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তার পরদিনই গতকাল সোমবার নয়টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত-ইসরায়েল। প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞান, চিকিৎসাসহ একাধিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। আর এই প্রেক্ষিতে সাংবাদিক সম্মেলন করতে গিয়ে মোদি-নেতানিয়াহু দুজনের পারস্পরিক সম্পর্ক যেন কূটনীতিকে ছাপিয়ে গেছে বারবার।
এদিন প্রথমে নরেন্দ্র মোদি বক্তব্য রাখতে গিয়ে নেতানিয়াহুকে ‘আমার বন্ধু বিবি’ (বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু) বলে সম্বোধন করেন। নেতানিয়াহু আসায়, তিনি সম্মানিত বোধ করছেন বলেও জানান। ঘটনা হলো নেতানিয়াহুকে যে বিবি নামে ডাকা হয়, তা ভারতে এত দিন খুব বেশি মানুষ জানতেন না। এদিন মোদি বুঝিয়ে দিলেন, তিনি বিবির কতটা কাছের মানুষ। পাল্টা নেতানিয়াহুও মোদিকে ভারতের সংগ্রামী নেতা বলে উল্লেখ করেছেন। ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ককে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন। মোদির ইসরায়েল সফরের আগে ভারত থেকে অন্য কেউ সে দেশে যাননি বলেও উল্লেখ করেছেন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহু বলেন, ভারতে বসবাসকারী ইহুদিদের কখনো বিদ্বেষের শিকার হতে হয়নি। ভারতের সহনশীলতা ধর্মের এ এক অনন্য উদাহরণ। গণতন্ত্র রয়েছে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ভারত।
সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতেও মুখ খোলেন নেতানিয়াহু। বলেছেন, ভারত ও ইসরায়েল সন্ত্রাসবাদী হামলা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আমরা হাল ছাড়িনি। সবশেষে মোদিকে উদ্দেশ করে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমার বন্ধু নরেন্দ্র, যখনই তুমি যোগা ক্লাস করতে চাইবে, আমি সব সময় থাকব।’ সব মিলিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বাইরে নতুন মৈত্রীর উদাহরণ তৈরি করলেন মোদি-নেতানিয়াহু।
"