হাসান ইমন

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭

লাল-সবুজের পতাকায় জীবন চলে যাদের

পতাকা উড়ছে গাড়িতে, উড়ছে বাড়িতেও। শিশুর কোমল হাতে বাংলাদেশের পতাকায় মিলছে বিজয়ের কথা। তাইতো বাঙালির এমন আবেগ ভর করেই তাদের পতাকার পসরা সাজিয়ে ফেরি করা। পতাকার মৌসুমি ফেরিওয়ালা তারা। লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা শাহবুদ্দিনের কথা বলছি। গাজীপুরে কসমেটিকসের একটি ছোট দোকান থাকলেও ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় আসেন পতাকা বিক্রি করতে। এবার রাজধানীর হাজি ক্যাম্পসংলগ্ন একটি মেসে উঠেছেন তিনি। শুধু শাহবুদ্দিন নন, গাজীপুর থেকে শাহবুদ্দিনের সঙ্গে পতাকা বিক্রি করতে এসেছেন আরো বেশ কয়েকজন।

শাহবুদ্দিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিজয়ের মাসে পতাকা বিক্রি করে অনেক আনন্দ পান। রাজপথে যখন লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে চলি, তখন গর্বে বুক ভরে ওঠে। তাই প্রতি ডিসেম্বরেই ঢাকায় পতাকা বিক্রি করতে আসি। পাশাপাশি উপার্জনও ভালো হয়। রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় সুমন নামে আরেক ফেরিওয়ালার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তার বাড়ি মাদারীপুর।

বছরের নানা সময় বিভিন্ন জিনিস ফেরি করেন। এখন ফেরি করছেন বিজয়ের পতাকা। বিকিকিনি খারাপ নয়। দিন শেষে শ পাঁচেক টাকা পকেটে পুরতে পারেন। বাঁশের মাথায় নানা আকারের পতাকা টাঙিয়ে শাহবাগ এলাকায় ফেরি করছিলেন তোতা মিয়া। মাথায় পতাকাশোভিত ব্যান্ড। তিনি বলেন, একদম ছোট আকারের মিনি পতাকার দাম ১৫ টাকা। আকারভেদে এক-দেড়শ টাকার ঢাউস পতাকাও রয়েছে তার কাছে। মানুষজন অফিস, বাসাবাড়ির ছাদে ওড়ানোর জন্য বড় পতাকা কেনে। বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশার হ্যান্ডেলে বাঁধার জন্য কেনে মিনি পতাকা। বিজয় দিবস সামনে এলে বিক্রিবাট্টা আরো বাড়ে। তরুণ-তরুণীরা মাথায় বাঁধার জন্য বন্ধনী ও হাতে বাঁধার জন্য ব্রেসলেটের আদলে বিজয়ের লোগোসংবলিত ফিতা কেনেন। বিক্রেতা কামাল জানান, আকারভেদে ২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে এক একটি পতাকা। কাগজের পতাকা প্রতি হাজার ৬০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। টিএসসির সামনে রিকশার হাতলে জাতীয় পতাকা বেঁধে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন আলতাফ মিয়া। তিনি বলেন, জাতীয় পতাকা দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। তাই নিজেও একটা কিনেছেন। যাত্রীরাও এটা পছন্দ করে।

শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তের নানা পেশা, বয়সী মানুষের হাতে পতাকা পৌঁছে দিচ্ছেন তারাই। বিজয়ের মাসে চারদিকে লাল-সবুজের ফেরিওয়ালাদের পথচলার সঙ্গে সঙ্গে উড়ছে আমাদের বিজয়ের নিশানও। পতাকার ফেরিওয়ালারা বিজয় দিবসের আগমনী বার্তা বহন করে আনে এই শহরের মানুষের কাছে।

ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক শাহীনুর রহমান বলেন, বছরের অন্য সময় গাড়িতে পতাকা টাঙানোর নিয়ম নেই। ডিসেম্বর মাসে এই নিয়ম মাফ। এ সময় গাড়িতে পতাকা টাঙালে নিজেরে ‘মিনিস্টার মিনিস্টার’ মনে হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রাজীব পাল বলেন, বছরের অন্য সময়েও দেশের প্রতি টান থাকে। ডিসেম্বরসহ কয়েকটা মাসে এটা প্রকাশ করার উপলক্ষ পাওয়া যায়। তাই পতাকা কিনি। মাথায়, হাতে ফেট্টি বাঁধি। বাঙালি আবেগী জাতি। আমরা আবেগ প্রকাশ করতে জানি। তাই বিভিন্ন দিবসে উৎসবে মাতি। দিবস ভেদে নানা অনুষঙ্গের মাধ্যমে আবেগের প্রকাশ করি। এখন সারা দেশেই উড়ছে বিজয়ের পতাকা। দেখতেও ভালো লাগে।

সাড়ে চার দশকের বাংলাদেশ। আবারো এসেছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত জাতি। আনন্দধারা বইছে ঘরে ঘরে। বইছে পথে প্রান্তরে। বিজয়ের আনন্দ মিলছে আবেগের পতাকায়ও। বিজয়ের এই মাসে বিশেষ করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস কেন্দ্র করে রাজধানীতে জমজমাট হয়ে উঠেছে জাতীয় পতাকার বেচা-কেনা। বাড়ির ছাদ, গণপরিবহন, রিকশা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত গাড়ি, অফিসের ডেস্ক, দোকানপাটেও উড়ছে বিজয়ের নিশান।

মার্চ আর ডিসেম্বর মাস এলেই বিজয়ের পতাকা ও এর লোগোসংবলিত নানা অনুষঙ্গের ব্যবসা শুরু হয়। রাস্তায় রাস্তায়, পাড়া-মহল্লায় ফেরি করে বিক্রি হয় নানা আকারের পতাকা এবং এর লোগোসংবলিত মাথা ও হাতে বাঁধার ব্যান্ড। পতাকার মধ্যে বর্তমান লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন লাল-সবুজের মাঝে হলুদ মানচিত্র আঁকা পতাকাও।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist