হেলাল উদ্দিন উজ্জ্বল, ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ)

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বানরের খাদ্য সংকট

ময়মনসিংহ জেলার মধুপুর বনাঞ্চলঘেঁষা ফুলবাড়িয়ার সন্তোষপুর বনাঞ্চলে একসময় হরিণ, ভাল্লুক, মেছোবাঘ, বাঘডাস, হনুমান, বানর, শিয়াল, সজারো ও খরগোশসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ছিল। কালের বিবর্তনে ও বনদস্যুরা গাছ কেটে বন উজাড় করায় হারিয়ে গেছে বন্যপ্রাণীগুলো। থেকে যায় শুধু বনের শোভাবর্ধনকারী অসংখ্য বানর। এখন এর সংখ্যা চার শতাধিক। বন-জঙ্গল উজাড় হওয়ার কারণে এবং খাদ্য সংকটে বানরগুলোর সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। স্থানীয়রা বলেছেন, বানরগুলোর জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করা উচিত সরকারের। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম কর্নারে সন্তোষপুর বনবিট ও রাবার প্রকল্প। এখানে ১ হাজার ৩৬ একর এলাকাজুড়ে রয়েছে রাবার বাগান। রাঙামাটিয়া ও নাওগাঁও ইউনিয়নে রয়েছে ২ হাজার ৮৬৩ দশমিক ১৪ একর এলাকাজুড়ে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম বনাঞ্চল। রাবার প্রকল্প থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার লালমাটির পথ সন্তোষপুর বনবিট অফিস। বর্তমানে বিট অফিসকে ঘিরে রয়েছে চার শতাধিক বানর। এ বানরগুলোর খাবারের একমাত্র ভরসা বানর দেখতে আসা দর্শনার্থী। দর্শনার্থী দেখলেই চারদিক থেকে খাবারের আসায় বানরগুলো তাদেরকে ঘিরে ধরে। বিট অফিসের সঙ্গে বানরের খাবার নিয়ে ভ্রাম্যমাণ তিনটি দোকান বসে। সেই দোকানগুলো থেকে দর্শনার্থীরা কলা, বাদাম, মুড়ি ও চানাচুর কিনে দিলেই কিছুটা আহার জোটে বানরগুলোর।

সূত্রে জানা গেছে, বিট অফিসের দক্ষিণপাশে বানরের জন্য লোক দেখানো ফলের বাগান করলেও সেই জমি স্থানীয় একজনকে আবার লিজ (অলিখিত চুক্তি) দিয়েছেন বিট কর্মকর্তা। ফলগাছের বাগানের জমিতে লিজকৃত মালিক আনারসের আবাদ করায় বানর দূরের কথা মানুষ পর্যন্ত যেতে দেয় না।

সরেজমিনে দেখা যায়, সন্তোষপুর বিট অফিসের পাশেই গজারি বনের ভেতরে দেড় থেকে দুইশ বানর। একটি স্থানে চারদিক দিয়ে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে গোলাকার বৃত্ত করা। দর্শনার্থীরা বৃত্তের ভেতরে ও বাইরে বানরগুলোকে খাবার ছিটিয়ে দিচ্ছেন। কোনো কোনো দর্শনার্থীর মাথায়, কাঁধে বসে খাবার নেয় বানর। কাউকে আঁচড় বা কামড় দেয় না। বানরের সঙ্গে দুষ্টামি করলে কামড়ের ভয় দেখায়। তবে কিছু বানর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। সম্প্রতি প্রায় ২২টি বানর বাচ্চা প্রসব করেছে। খাবার সংকটের কারণে অনেক বানর লোকলয়ে চলে যাচ্ছে। মানুষের আক্রমণের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে।

বন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকানদার হানিফ মিয়া বলেন, গড়ে প্রতিদিন একেকজন দোকানদার পাঁচ-সাতশ টাকার বানরদের খাবার বিক্রি করেন। তার মধ্যে মুড়ি, চানাচুর, কলা, বাদাম বিক্রি হয় আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা। তবে দর্শনার্থীদের দেওয়া খাবার বানরদের চাহিদা অনুযায়ী পরিমাণে অনেক কম।

স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য শাহিদা আক্তার জানান, বানরগুলো যখন ক্ষুধার তাড়নায় মানুষের বাড়ি বাড়ি ছুটে যায়, তখন মানুষ বানরগুলোকে লাঠি, দা ইত্যাদি দিয়ে আঘাত করে। খাবার সংকটের কারণে বানরগুলো অন্যত্র চলে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল দেওয়া হয় বানরের খাবারের জন্য। প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষায় বানরগুলোর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা জরুরি।

স্থানীয় আবদুস ছালাম নামের আরেকজন বলেন, সন্তোষপুর বিট ও রাবার বাগানের প্রাকৃতি সৌন্দর্য ও শোভাবর্ধনকারী বানরগুলোর জন্য সরকারিভাবে বনের ভেতর নির্দিষ্ট স্থানে খাবার ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন।

সন্তোষপুর বিট কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে বানরের খাবারের জন্য বরাদ্দ নেই। বন্যপ্রাণীর জন্য বনের কিছু ফলের গাছ লাগানো হয়েছিল, সেগুলো এখন আর নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভিজিএফ ও ভিজিডির চাল দেওয়ার সময় বানরের খাবারের জন্য কিছু চাল দেয়, সেগুলোই বানরকে খাবার হিসেবে দিই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist