পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ০৭ মার্চ, ২০২০

মোদিকে মনমোহন

কথায় নয় কাজ করে দেখান

সাম্প্রদায়িক সমস্যা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিশ্বে স্বাস্থ্য সতর্কতায় প্রকোপ, বর্তমানে এই ত্রিমুখী সমস্যায় জর্জরিত মোদির ভারত, এভাবেই কেন্দ্রীয় সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেছেন দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বলেছেন, কেবল কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গোটা জাতিকে বোঝানো উচিত দেশ বর্তমানে যে বিপদের মুখোমুখি হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি সচেতন। পাশাপাশি সাধ্যমতো দেশকে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সাহায্য করবেন এ ব্যাপারেও দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করা উচিত প্রধানমন্ত্রীর। দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একটি পত্রিকায় লিখেছেন, দেশ এই মুহূর্তে একটি ভয়াবহ ও কঠিন পরিস্থিতি মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মনমোহন সিং। পত্রিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, দেশের বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতি কেবল ভারতের আত্মাকেই ভেঙে ফেলতে পারে তাই নয়, বিশ্বের অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের অবস্থানকেও হ্রাস করতে পারে। গত সপ্তাহে যেভাবে দিল্লির কিছু অংশে হিংসতার ঘটনা ঘটেছিল সেই কথা উল্লেখ করে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মনমোহন সিং বলেছেন, কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী সমেত সমাজের কিছু মানুষের মাধ্যমে এই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তথা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার আগুন জ্বলে ওঠেছে। আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে, দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ প্রশাসন, এমনকি সংবাদমাধ্যমের ভূমিকাও হতাশ করেছে। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং লিখেছেন, উদার গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল হিসেবে গড়ে উঠা ভারত মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বের নিরিখে পিছিয়ে যাচ্ছে, এই মুহূর্তে, দেশের টালমাটাল পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে হাল ধরা উচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার সরকারের।

এদিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ হিংসার সঙ্গে জড়িতদের নামে লক্ষেèৗয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হোর্ডিংয়ে ছাপিয়ে টাঙানো হয়েছে। হোর্ডিংয়ে যাদের ছবি রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন কর্মী ও রাজনীতিবিদ সদফ জাফর, আইনজীবী মহম্মদ শোয়েব, নাট্যব্যক্তিত্ব দীপক কবির, সাবেক আইপিএস এসআর দারাপুরীও। উত্তরপ্রদেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নামে আসলে যারা হিংসা ছড়িয়েছে, সরকার বা জনগণের সম্পত্তি ভাঙচুর করেছে তাদের ছবিসহ নাম-ঠিকানা দিয়ে হোর্ডিংগুলো ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ওই হোর্ডিংগুলোতে বলা হয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির জন্যে জরিমানা দিতে হবে। গত ডিসেম্বর মাসে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে লক্ষেèৗতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়, পরে সেই বিক্ষোভই হিংসায় পরিণত হয়। ওই হোর্ডিংয়ে বলা হয়েছে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যদি জরিমানা না দেয় তবে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। তবে এটা স্পষ্ট নয় যে ইতোমধ্যেই যখন ওই ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে নোটিস দেওয়া হয়েছে, তাহলে রাজ্য সরকার আবার কেন এ জাতীয় হোর্ডিং লাগাল। অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশ সরকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ডিক্রি নিয়েই আইনি লড়াই লড়বে বলে জানা গেছে। ওই অভিযুক্তদের প্রথমে গ্রেফতার করা হলেও পরে আদালত তাদের জামিন দেয়। জামিন দেওয়ার সময় আদালত যুক্তি দিয়েছে যে, অভিযুক্তদের অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণ করার মতো যথাযথ সাক্ষ্য সরবরাহ করতে পারেনি পুলিশ। ফেব্রুয়ারি মাসেও এলাহাবাদ হাইকোর্ট কানপুরের এক ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সরকারি আদেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close