প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বালু ও কক্ষপথের জায়গা দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে

পানির মতো অনেক জরুরি সম্পদ দ্রুত কমে যাচ্ছে। আপনি হয়তো শুনেছেন যে, পানি, তেল বা মৌমাছির মতো নানা জিনিসের ঘাটতি ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু পৃথিবীর আরো অনেক সম্পদ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে অথবা ঠিকমতো ব্যবহার না হওয়ায় বিলুপ্ত হতে বসেছে। কিন্তু এগুলো আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। গতকাল সোমবার বিবিসিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন।

১. কক্ষপথ : কক্ষপথে জায়গা কমে যাচ্ছে। কক্ষপথে আবর্জনার সংখ্যা যত বাড়বে, আমাদের দরকারি স্যাটেলাইটের সঙ্গে সেগুলোর সংঘর্ষ হয়ে ক্ষতির ঝুঁকি তত বাড়বে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত কক্ষপথে প্রায় ৫ লাখ বস্তু পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। এর মধ্যে মাত্র ২ হাজার আসলে কার্যক্ষম-স্যাটেলাইট, যা আমরা যোগাযোগ, জিপিএস বা আমাদের প্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানগুলোর দেখার কাজে ব্যবহৃত হয়। বাকি জিনিসগুলো রকেট নিক্ষেপণ এবং কক্ষপথে আগের নানা সংঘর্ষের ফলে তৈরি হওয়া আবর্জনা।

কিন্তু তাতে সমস্যা কোথায়? এই ৫ লাখ বস্তু এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা হয়েছেÑ সেইসঙ্গে প্রতিদিনই কক্ষপথে নতুন নতুন জিনিস নিক্ষেপ করা হচ্ছে। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, কক্ষপথে কোনো কিছু পাঠানো ততই সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কক্ষপথে কোনো ট্রাফিক কন্ট্রোলের ব্যবস্থা নেই এবং কক্ষপথে থাকা এসব অপ্রয়োজনীয় এবং উচ্ছিষ্ট জিনিসপত্র পরিষ্কার করারও এখন পর্যন্ত কোনো প্রযুক্তি নেই। ফলে এ ধরনের জিনিসে পৃথিবীর চারদিকের কক্ষপথ ক্রমেই ভরে যাচ্ছে। এগুলোর সংখ্যা যত বাড়বে, কক্ষপথে ব্যস্ততা যত বেশি হবে, তখন এসব বস্তুর সঙ্গে আমাদের দরকারি উপগ্রহগুলোর, যা আমাদের কাজে, নকশায়, মোবাইল ফোনের যোগাযোগ, আবহাওয়া নজরদারি কাজ করেÑ সেগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে ক্ষতির ঝুঁকি বাড়বে। এখন পর্যন্ত এই সমস্যার কোনো সমাধান কারো কাছে নেই।

২. বালু : প্রাকৃতিকভাবে যতটা তৈরি হচ্ছে, তার চেয়ে দ্রুত গতিতে আমরা বালু ব্যবহার করছি। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, বালুর ঘাটতি তৈরি হওয়া কীভাবে সম্ভব যেখানে আমাদের সৈকত আছে, মরুভূমি ভর্তি বালু আছে? কিন্তু সত্যিটা হলো, বালু হচ্ছে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে বেশি তুলে নেওয়া কঠিন পদার্থ- যার সঙ্গে নুড়িও থাকে। জাতিসংঘ বলছে, প্রাকৃতিকভাবে যে হারে বালু তৈরি হয়, আমরা তার চেয়ে অনেক বেশি হারে এর ব্যবহার করছি। প্রাত্যহিক নির্মাণ, ভূমি পুনরুদ্ধার, পানি বিশুদ্ধীকরণ, এমনকি কাচ ও মোবাইল ফোন তৈরিতে বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। যেহেতু বালু কমে যাওয়ার ফলে ভঙ্গুর ইকো-সিস্টেমকে হুমকিতে ফেলছে, এ কারণে বিশ্বব্যাপী দাবি উঠেছে যে, এই নাজুক পদার্থটির অত্যাধিক ব্যবহারের ব্যাপারে নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

৩. হিলিয়াম : শুধু বেলুনে নয়, চিকিৎসায় দরকারি অনুষঙ্গ হিলিয়াম গ্যাস। উৎসব করার সময় যখন বাতাস ভর্তি বেলুন আকাশে ছেড়ে দেন, সেটা নিয়ে খানিকটা অনুশোচনা করার সময় সম্ভবত এসে গেছে। হিলিয়াম গ্যাস সীমিত একটি সম্পদ, যা মাটির অনেক নিচ থেকে বের করে আনা হয়। আমাদের হাতে আর মাত্র কয়েক দশক সময় রয়েছে, যার মধ্যে এই গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে যাবে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ ধারণা করেন, এই গ্যাসের আর মাত্র ৩০ থেকে ৫০ বছরের মজুদ রয়েছে। হয়তো মনে হতে পারে, এতে না হয় বাচ্চাদের অনুষ্ঠানের মজা খানিকটা কমে যাবে। কিন্তু এর ক্ষতি আরো বড়। হিলিয়াম গ্যাস চিকিৎসায় খুব জরুরি একটি অনুষঙ্গ : এমআরআই করতে ব্যবহৃত চুম্বককে এই গ্যাস ঠা-া রাখে।

এমআরআই হচ্ছে এমন একটি যুগান্তকারী রোগ নির্ণয়কারী ব্যবস্থা, যা ক্যানসার, মস্তিষ্ক এবং মেরুদ-ের আঘাত নির্ণয় করতে পারে।

৪. কলা : কলা মানে কদলি ফল, এ ফল বিহীন ভবিষ্যৎ কি চিন্তা করতে পারেন? বাণিজ্যিক উদ্দেশে যে কলার চাষ করা হয়, তার বেশির ভাগই এখন ‘পানামা ডিজিজ’ নামের একটি ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা যে কলা খাই, তার বেশির ভাগ ক্যাভেন্ডিস জাতের, যা সরাসরি এসেছে একটি মাত্র গাছ থেকে-বাকিগুলো সব ক্লোন হয়ে এসেছে। ফলে কলা গাছের ভেতর পানামা রোগটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

অতীতেও এ রকমটা ঘটেছে। ১৯৫০ সালে ঠিক একই রকমের একটি রোগে বিশ্বের কলা চাষ বন্ধ হয়ে যায়। তখন চাষিরা গ্রস মাইকেল জাত থেকে সরে এসে ক্যাভেন্ডিস জাতের কলা চাষ করতে শুরু করেন। বিজ্ঞানীরা এখন কলার নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন, যা এই ফাঙ্গাস প্রতিরোধ করতে পারবে, সেই সঙ্গে কলার স্বাদও বজায় থাকবে।

৫. মাটি : পৃথিবীর মাটি হঠাৎ করে পৃথিবী থেকে কোথাও পড়ে যাবে না, তবে অব্যবস্থাপনার কারণে এটি নিয়েও উদ্বেগের কারণ আছে।

মাটির সবচেয়ে ওপরের অংশ থেকে গাছপালা বা উদ্ভিদ তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ সংগ্রহ করে। ডব্লিউডব্লিউএফ নামের একটি এনজিও যারা বিশ্বের প্রকৃতি রক্ষায় কাজ করে- ধারণা করছে যে, গত ১৫০ বছরে বিশ্বের মোট ভূমির অর্ধেকের মতো ওপরের মাটি হারিয়ে গেছে। কিন্তু এক ইঞ্চি জমি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হতে ৫০০ বছর লাগে। নদী বা সাগরের ভাঙন, ব্যাপক মাত্রায় কৃষিকাজ, বনভূমি উজাড় করা এবং বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলেই ওপরের মাটি হারিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়, যার ওপর বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনের বড় অংশটি নির্ভর করে।

৬. ফসফরাস : ফসফরাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। মনে হতে পারে যে, ফসফরাস কীভাবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে জরুরি হতে পারে? কিন্তু মানব ডিএনএ গঠনের জন্য এটা শুধু জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতেই যে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, বরং এটি কৃষি কাজের জন্য অত্যন্ত দরকারি একটি সার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যার কোনো বিকল্প এখনো জানা নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close