পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিবৃতি

পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু রোগী ১০ হাজার, অর্ধেক বাংলাদেশি

পশ্চিমবঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। এ কারণে এবারের রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনের শুরু থেকেই বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবৃতি দাবি করা হয়েছিল। গতকাল শুক্রবার বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি, তার মোকাবিলাসহ একাধিক বিষয়ে বিরোধীদের করা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, রাজ্যজুড়ে সাড়ে ১০ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। যাদের মধ্যে পাঁচ হাজার ডেঙ্গু আক্রান্ত বাংলাদেশি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এরই মধ্যে ডেঙ্গু রোধে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার সরকার। তাতেও সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের যশোর ও খুলনায় ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে মানুষ। এরই মধ্যে দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছে। অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যাতে এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তারা মানবিক, তাই বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ এ রাজ্যে চিকিৎসায় আসছেন। অন্য রাজ্য থেকেও ডেঙ্গু আক্রান্তরা এই রাজ্যে আসছেন চিকিৎসা করাতে। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে বাধা দিতে পারেননি। কারণ তিনি মানবিক।

অন্যদিকে, শুক্রবার বেনজির গ-গোলের সাক্ষী হয়েছে রাজ্য বিধানসভা। শাসক এবং বিরোধী দলের বিধায়কদের একে অপরের দিকে রীতিমতো তেড়ে যেতে দেখা গিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে শেষমেশ ওয়েলে নেমে আসেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত শান্ত হন বিধায়করা। ঘটনার সূত্রপাত প্রশ্নোত্তর পর্বে। মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস বিধায়ক প্রতিমা রজক, পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে তার দফতরে চাকরি দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি শুভেন্দুকে প্রশ্ন করেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে, পরিবহন দফতরে তিন-চার লাখ টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। এটা কি সত্যি? বিধানসভায় উপস্থিত এক বিধায়ক জানান, এই প্রশ্ন শুনেই নিজের আসনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি প্রতিমা রজকের উদ্দেশে বলেন, এ রকম কোনো অভিযোগ থাকলে আপনি প্রমাণ করুন। যদি না করতে পারেন তা হলে এখানেই ক্ষমা চান। কংগ্রেস বিধায়কদের অভিযোগ, এ কথা বলেই থেমে থাকেননি পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি আরো বলেন, পুরো মুর্শিদাবাদ ফাঁকা হয়ে গিয়েছে, কংগ্রেস আর কোথাও নেই। অভিযোগ, প্রতিমাকে উদ্দেশ করে পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেছেন, পরের নির্বাচনে আপনি হারবেন। মন্ত্রীর কথা শুনে প্রচ- উত্তেজিত হয়ে ওঠেন ভরতপুরের কংগ্রেস বিধায়ক কমলেশ চট্টোপাধ্যায়। তিনি নিজের জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে যান। তাকে বাধা দিয়ে থামাতে গিয়ে সামান্য আঘাত পান তার দলেরই সূতির বিধায়ক হুমায়ুন রেজা।

কমলেশ এরপর হুমায়ুন রেজাকে টপকে বেরিয়ে আসেন এবং মন্ত্রীর দিকে ছুটে যান। তাকে ছুটতে দেখে নিজের জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন শাসক দলের বিধায়করা। কমলেশের সঙ্গী হন অন্য কংগ্রেস বিধায়করা যোগ দেন বাম বিধায়করাও। রাজ্য বিধানসভায় রীতিমতো হাতাহাতির উপক্রম হয়। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং অরূপ বিশ্বাস দুই পক্ষকে সামলানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কংগ্রেস এবং বামেদের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান এবং সুজন চক্রবর্তীও ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ, হাতাহাতি সামাল দিতে থাকেন। বিরোধীরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে দেন। তখন পরিস্থিতি সামলাতে উদ্যোগী হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওয়েলে নেমে বিরোধীদের তিনি অনুরোধ করেন, নিজেদের জায়গায় ফিরে যেতে। নিজের দলের বিধায়কদেরও তিনি বকাবকি করে নিজেদের জায়গায় ফিরে যেতে বলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত রাজ্য বিধানসভায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close